লোমশ বলেন, শুন ধর্ম্মের কুমার।
যেমতে খণ্ডিল মুনি গোর অন্ধকার।।
গিরিমধ্যে আছয়ে সুমেরু গিরিবর।
প্রদক্ষিণ করি তারে ভ্রমে দিনকর।।
তাহা দেখি বিন্ধ্যাগিরি সক্রোধ হইয়া।
দিনমণি প্রতি তবে বলিল ডাকিয়া।।
যেমত আবর্ত্ত কর সুমেরু শিখরে।
সেইমত প্রদক্ষিণ করহ আমারে।।
সূর্য্য বলে, রথে বসি আবর্ত্তন করি।
সৃষ্টি সৃজিলেন যেই সৃষ্টি অধিকারী।।
তাঁর নিয়োজিত পথে করিব ভ্রমণ।
শক্তি নাহি, অন্য পথে করিতে গমন।।
এত শুনি বিন্ধ্য বলে সক্রোধ বচনে।
দেখি, মেরু প্রদক্ষিণ করিবে কেমনে।।
বাড়িল বিষম বিন্ধ্য করিয়া আক্রোশ।
না হয় রবির গতি, না হয় দিবস।।
ক্রোধ করি কামরূপী বাড়াইল অঙ্গ।
ব্যাপিল আকাশপথ না চলে বিহঙ্গ।।
ঢাকিল সূর্য্যের তেজ, হৈল অন্ধকার।
প্রলয় হইল, যেন মানিল সংসার।।
দেবগণ মিলি সবে করে নিবেদন।
না শুনিল বিন্ধ্যাগিরি কাহার বচন।।
তবে যত দেবগণ একত্র হইয়া।
অগস্ত্য মুনির আগে নিবেদিল গিয়া।।
চন্দ্র সূর্য্যপথ রুদ্ধ বিন্ধ্যাগিরি করে।
তোমা বিনা নাহি দেখি তাহারে নিবারে।।
রক্ষা কর মুনিরাজ সৃষ্টি হৈল নাশ।
শুনিয়া অগস্ত্য মুনি করিল আশ্বাস।।
বিন্ধ্যাগিরি পাশে তবে যায় তপোধন।
মুনি দেখি প্রণাম করিল সর্ব্ব জন।।
নাগ নর পশু পক্ষী স্থাবর জঙ্গম।
অগস্ত্য মুনির তেজ জিনি সূর্য্য সম।।
মুনি দেখি বিন্ধ্যাগিরি প্রণাম করিল।
ঈষৎ হাসিয়া মুনি আশীর্ব্বাদ দিল।।
যাবৎ না আসি আমি দক্ষিণ হইতে।
তাবৎ পর্ব্বত তুমি থাক এইমতে।।
এত বলি মুনিরাজ করিল গমন।
পুনঃ যে উত্তরে নাহি গেল কদাচন।।
তাঁর আজ্ঞা লঙ্ঘি গিরি কভু নাহি উঠে।
সৃষ্টি রক্ষা করিলেন অগস্ত্য কপটে।।
আরণ্যক পর্ব্বতে অগস্ত্য উপাখ্যান।
কাশী কহে, ধর্ম্ম পুণ্য লাভের সোপান।।