৫৮তম অধ্যায়
মহাপুণ্যশালী শিবিরাজের মৃত্যুকথা
নারদ কহিলেন, মহারাজ! উশীনরতনয় শিবি রাজাও কাল কবলে নিপতিত হইয়াছেন। তিনি প্রতিনিয়ত প্রধান প্রধান শত্রু সকল বিনাশ করিয়া অদ্রি, দ্বীপ, অর্ণব ও অরণ্য সমাচ্ছন্ন এই পৃথিবী রথঘর্ঘরশব্দে নিনাদিত ও আপনার বশীভূত করিয়াছিলেন এবং বিপুল অর্থ অধিকার করিয়া ভূরি দক্ষিণাদান সহকারে বিবিধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন। সমুদায় ভূপালগণই তাঁহাওক সংগ্রামের উপযুক্ত বলিয়া জ্ঞান করিতেন। মহাত্মা শিবি রাজা বাহু বলে সমুদায় পৃথিবী পরাজয় করিয়া হস্তী, অশ্ব, পশু, ধান্য, মৃগ, গো, ছাগ ও মেষ প্রদান পূর্ব্বক বহু ফলশালী অশ্বমেধ যজ্ঞ নির্বিঘ্নে সম্পাদন পূর্ব্বক সহস্র কোটি নিষ্ক ও বহুসংখ্যক ভূমি ব্রাহ্মণসাৎ করিয়াছিলেন। বর্ষার যতগুলি ধারা, আকাশের যতগুলি তারা, গঙ্গার যতগুলি বালুকা, সুমেরুর যতগুলি উপলখণ্ড এবং সাগরে যতগুলি রত্ন ও জলজন্তু আছে, তিনি যজ্ঞানুষ্ঠান কালে ততগুলি গো দান করেন। প্রজাপতি ব্রহ্মা শিবি রাজার কার্য্যভার বহন করে এমন নৃপতি কি ভূত, কি ভবিষ্যৎ, কি বর্ত্তমান কোন কালেই লাভ করিতে সমর্থ হন নাই। শিবি রাজা সর্ব্বকাৰ্য্য সমন্বিত বহুবিধ যজ্ঞানুষ্ঠান করেন। ঐ সমস্ত যজ্ঞে অসংখ্য সুবর্ণময় ঘূপ, আসন, গৃহ, প্রাকার ও তোরণ নির্মিত এবং পবিত্র সুস্বাদু অন্নপান প্রস্তুত হইত। প্রিয়বাদী অযুত প্ৰযুত ব্রাহ্মণগণ ঐ যজ্ঞে আগমন করিতেন। তাঁহার যজ্ঞস্থানে দধি দুগ্ধের হ্রদ ও নদী এবং ধবল অন্ন পর্ব্বত প্রস্তুত হইত। তৎকালে কেবল, স্নান কর এবং স্বেচ্ছানুসারে পান ও ভক্ষণ কর এইরূপ শব্দ সৰ্ব্বদা সমুত্থিত হইত। রুদ্রদেব এই দানশীল রাজার পবিত্র কাৰ্য্যে অতিমাত্র সন্তুষ্ট হইয়া তোমার ধন, শ্রদ্ধা, কীর্ত্তি, ক্রিয়া, ভূতগণের প্রিয়তা ও স্বর্গ অক্ষয় হউক, এই বলিয়া তাঁহাকে বর প্রদান করিয়াছিলেন। রাজা শিবি এই সমস্ত অভিলষিত বর লাভ করিয়া যথাকালে দেবলোকে গমন করিয়াছেন। হে সৃঞ্জয়! তোমা অপেক্ষা সমধিক সত্য, তপ, দয়া ও দান সম্পন্ন তোমার পুত্র অপেক্ষা সমধিক পুণ্যবান সেই শিবি রাজাকেও কালগ্রাসে নিপতিত হইতে হইয়াছে; অতএব তুমি সেই অযাজ্ঞিক ও অধ্যয়নাদি শূন্য পুত্রের নিমিত্ত অনুতাপ করিও না।