৫৮তম অধ্যায়
নলনিগ্ৰহে কলির কল্পনা
বৃহদশ্ব কহিলেন, “মহারাজ! দময়ন্তী নলকে বরমাল্য প্রদান করিলে লোকপালের স্ব স্ব স্থানে প্ৰস্থান করিতেছেন, এমন সময়ে পথিমধ্যে তাঁহাদিগের সহিত কলি ও দ্বাপরের সাক্ষাৎ হওয়াতে দেবরাজ কলিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কলে! তুমি দ্বাপর সমভিব্যাহারে কোথায় গমন করিতেছ?” কলি কহিল, ‘দেবরাজ! আমার মন দময়ন্তীর প্রতি সাতিশয় আসক্ত হইয়াছে, অতএব স্বয়ংবরে তাহাকে লাভ করিব বলিয়া গমন করিতেছি।” তখন সুরনাথ সহাস্যবদনে কহিলেন, “হে কলে! স্বয়ংবর যে সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে; ভীমনন্দিনী আমাদিগের সমক্ষে নলরাজকে বরমাল্য প্ৰদান করিয়াছে।” কলি দেবরাজ ইন্দ্রের এইরূপ বাক্য শ্রবণ করিবামাত্র ক্রুদ্ধ হইয়া দেবগণকে সম্বোধনপূর্ব্বক কহিল, “হে দেববৃন্দ! দময়ন্তী দেবতাদিগকে অতিক্রম করিয়া একজন মর্ত্যকে বরমাল্য প্রদান করিয়াছে, অতএব তাহার সমুচিত দণ্ডবিধান করা উচিত।” দেবতারা কহিলেন, দময়ন্তীর অপরাধ নাই; সে আমাদিগের আজ্ঞানুসারে নৈষধকে বরণ করিয়াছে। ফলতঃ তাদৃশ গুণসম্পন্ন নরপতিকে কোন কামিনী পতি বলিয়া স্বীকার না করে? বিবেচনা কর, যে ব্যক্তি নিখিল ধর্ম্মের মর্ম্মভিজ্ঞ, ব্ৰতানুষ্ঠানতৎপর ও বেদচতুষ্টয় অধ্যয়ন করিয়াছে, দেবগণ যাহার যজ্ঞে পরিতৃপ্ত হইয়া সতত গৃহে বাস করিতেছেন, যে ব্যক্তি ভ্ৰমেও মিথ্যা ব্যবহার করেন না, সর্ব্বদা অহিংসানিরত ও দৃঢ়ব্ৰত, যে ব্যক্তি সত্য, ধৃতি, জ্ঞান, তপস্যা, শৌচ, ইন্দ্ৰিয়সংযম ও শমগুণে অলঙ্কৃত হইয়াছে, সে ব্যক্তি কাহার না স্পৃহণীয় হয়? সেই অশেষ গুণাধার নলরাজকে যে ব্যক্তি শাপ প্ৰদান করিতে উদ্যত হয়, সে আত্মাকেও শাপ প্ৰদান করিতে পারে ও আত্মহত্যাও তাহার পক্ষে কঠিন বোধ হয় না। তাদৃশ ব্যক্তিকে পরিণামে অতি ভয়ঙ্কর অগাধ নরকরূপ হ্রদে নিমগ্ন হইতে হয়, সন্দেহ নাই।” দেবতারা কলি ও দ্বাপরকে এই সকল কথা বলিয়া সুরলোকে গমন করিলেন।
“অনন্তর কলি দ্বাপরকে সম্বোধন করিয়া কহিল, “হে দ্বাপর! আমি কখনই ক্ৰোধ সংবরণ করিতে পারিব না। যেরূপে হউক, নলে আবিষ্ট হিইয়া তাহাকে রাজ্যচ্যুত করিয়া দময়ন্তীর সহিত বিযুক্ত করিব; তুমি তখন অক্ষে প্রবিষ্ট হইয়া আমার সহায়তা করিবে।”