৫৬তম অধ্যায়
পুণ্যাত্মা সুহোত্রের মৃত্যুসংবাদ
নারদ কহিলেন, মহারাজ! অদ্বিতীয় বীর নিতান্ত দুর্দ্ধর্ষ রাজা সুহোত্রও মৃত্যু মুখে নিপতিত হইয়াছেন। অমরগণ তাঁহার সাক্ষাতকার লাভার্থী হইয়া প্রতিনিয়ত উপস্থিত হইতেন। তিনি ধৰ্ম্মানুসারে রাজ্য অধিকার করিয়া ঋত্বিক্, ব্রাহ্মণ ও পুরোহিতগণকে আপনার হিতজনক বিষয় সকল জিজ্ঞাসা করত তাহাদিগের মত গ্রহণ করিতেন। তিনি প্রজাপালন, ধর্ম্ম, দান, যজ্ঞ ও শত্রু জয় ইহা সবিশেষ অবগত হইয়া ধৰ্ম্মানুসারে ধনাগমের ইচ্ছা করিতেন। তিনি দেবগণকে ধৰ্ম্মানুসারে আরাধনা ও ভুজবলে শত্রু জয় করিয়া ম্লেচ্ছ ও তস্কর শূন্য অবনী উপভোগ করিয়া নিজ গুণে প্রজা রঞ্জণ করিয়াছিলেন। পর্জ্জন্য তাঁহার নিমিত্ত সংবৎসর হিরণ্য বর্ষণ করিতেন। তন্নিবন্ধন পূৰ্ব্বকালে তাহার রাজ্যে হিরন্ময়ী স্রোতস্বতী সকল সর্ব্বত্র প্রবাহিত হইত। ঐ সমুদায় নদীতে রাজ্যস্থ সমুদায় প্রজারই অধিকার ছিল। কুব্জ ও বামনগণ ঐ সমুদায় নদী হইতে অনায়াসে প্রতিপালিত হইত। পন্য সুবর্ণময় গ্রাহ, কর্কট, বহুবিধ মৎস্য ও অন্যান্য অসংখ্য জল-জন্তু বর্ষণ করিতেন। ঐ রাজ্যে সুবর্ণময়ী বাপী-সকল ক্রোশপরিমিত ছিল। রাজা সুহোত্র সুবর্ণময় সহস্র সহস্র নক্র, মকর ও কচ্ছপ সকল অবলোকন করিয়া বিস্ময়াবিষ্ট হইলেন। তিনি কুরুজাঙ্গলে বিস্তীর্ণ যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়া ব্রাহ্মণগণকে অপরিমিত সুবর্ণ দান করিতে লাগিলেন এবং পরিশেষে প্রভূত দক্ষিণ দান সহকারে শত সহস্র অশ্বমেধ, রাজসূয়, পবিত্র ক্ষত্রিয় যজ্ঞ ও অন্যান্য নিত্য নৈমিত্তিক ক্রিয়াকলাপের অনুষ্ঠান করিয়া অভিলষিত গতি লাভ করিলেন। হে সৃঞ্জয়! তোমা অপেক্ষা সমধিক সত্য, তপ, দান ও দয়াসম্পন্ন এবং তোমার পুত্র অপেক্ষা পুণ্যবান সেই সুহোত্র ভূপতিও মৃত্যু মুখে নিপতিত হইয়াছেন। অতএব তুমি সেই অযাজ্ঞিক ও অধ্যয়নাদি শূন্য পুত্রের নিমিত্ত অনুতাপ করিও না।