পঞ্চপঞ্চাশত্তম অধ্যায়
আস্তীক কর্ত্তৃক জনমেজয়ের গুণকীর্ত্তন
আস্তীক কহিলেন, “হে ভারতবংশাবতংস! চন্দ্র, বরুণ ও প্রজাপতি প্রয়াগে যে প্রকার যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়াছিলেন, আপনার এই মহাযজ্ঞও তদ্রূপ সর্ব্বাঙ্গসুন্দর হইয়াছে; কিন্তু হে পরীক্ষিতাত্মজ! আমি প্রার্থনা করি, আমার বন্ধুবর্গের মঙ্গল হউক। দেবরাজ ইন্দ্র একশত অশ্বমেধ যজ্ঞ করিয়াছেন, আপনার এই সর্পসত্র তত্তুল্য এক অযুত অশ্বমেধের সদৃশ; কিন্তু হে পরীক্ষিতাত্মজ! আমি প্রার্থনা করি, আমার বন্ধুবর্গের মঙ্গল হউক। যম, হরিমেধাঃ ও রন্তিদেব রাজার যজ্ঞ যেরূপ হইয়াছিল, আপনার এই যজ্ঞও তদ্রূপ হইয়াছে; কিন্তু হে পরীক্ষিতাত্মজ! আমি প্রার্থনা করি, আমার বন্ধুবর্গের মঙ্গল হউক। গয় রাজা, শশবিন্দু রাজা, বৈশ্রবণ [কুবের], নৃগ রাজা, আজমীঢ় রাজা এবং রাম রাজা যেরূপ যজ্ঞ করিয়াছিলেন, আপনার এই যজ্ঞও তৎসদৃশ হইয়াছে, কিন্তু হে পরীক্ষিতাত্মজ! আমি প্রার্থনা করি, আমার বন্ধুবর্গের মঙ্গল হউক। ধর্ম্মপুৎত্র যুধিষ্ঠির ও আজমীঢ় রাজার যজ্ঞ অতি সুপ্রসিদ্ধ, আপনার এই যজ্ঞ তদপেক্ষা ন্যূন নহে; কিন্তু হে পরীক্ষিতাত্মজ! আমি প্রার্থনা করি, আমার বন্ধুবর্গের মঙ্গল হউক। সত্যবতীর পুৎত্র ব্যাসদেব এক মহাসত্র করিয়াছিলেন, সেই সত্রে তিনি স্বয়ং ঋত্বিকের কর্ম্ম করেন, আপনার এই সর্পসত্রও তদনুরূপ হইয়াছে; কিন্তু হে পরীক্ষিতাত্মজ! আমি প্রার্থনা করি, আমার বন্ধুবর্গের মঙ্গল হউক।
আপনার যজ্ঞানুষ্ঠাতা এইসকল সূর্য্যসমতেজা মহর্ষিগণ ইন্দ্রের যজ্ঞানুষ্ঠানকর্ত্তাদিগের সদৃশ; ইঁহাদিগের জ্ঞানের ইয়ত্তা করা অতি দুষ্কর, ইঁহাদিগকে দান করিলে অক্ষয় হয়। আপনার এই ঋত্বিকের কথা অধিক কি বলিব, ব্যাসদেব কহিয়াছেন, ইঁহার সমান লোক ত্রিলোকে লক্ষ্য হয় না, ইঁহারই শিষ্যোপশিষ্যগণ স্বধর্ম্মে নিরত হইয়া এই ভূমণ্ডল ব্যাপিয়া আছেন। আপনার এই প্রজ্বলিত হোমাগ্নি দক্ষিণাবর্ত্ত শিখা দ্বারা দেবোদ্দেশে প্রদত্ত হব্য গ্রহণ করিতেছেন। মহারাজ! আপনার সমান প্রজ্ঞাপালনকর্ত্তা ভূপাল অতি বিরল। আপনি সাক্ষাৎ ধর্ম্মরাজ, বরুণ ও ভাগবান্ বজ্রপাণির [ইন্দ্রেয়] ন্যায় এই ভূমণ্ডল রক্ষা করিতেছেন। আর আপনার বিষয়-নিস্পৃহতা দেখিয়া আমি যৎপরোনাস্তি সন্তুষ্ট হইয়াছি। আপনি খট্বাঙ্গ, নাভাগ, দিলীপ,,যযাতি, মান্ধাতা ও ভীষ্ম প্রভৃতি রাজেন্দ্রগণের সদৃশ; মহর্ষি বাল্মীকির ন্যায় নিগূঢ়-মহত্ত্ব, বশিষ্ঠের ন্যায় জিতক্রোধ, ইন্দ্রের ন্যায় প্রভুত্বশালী, নারায়ণের ন্যায় কান্তি সম্পন্ন, ঔর্ব্ব ত্রিত দুই ঋষির ন্যায় তেজস্বী, যমের ন্যায় ধর্ম্মনিয়ন্তা এবং কৃষ্ণের ন্যায় সর্ব্বগুণালঙ্কৃত। আপনি যেমন অতুল ঐশ্বর্য্যের অধিপতি, তদ্রূপ যাগাদি সৎক্রিয়ার পথপ্রদর্শক। মহারাজ! অধিক কি বলিব, ধৈর্য্য, বীর্য্য, গাম্ভীর্য্য প্রভৃতি যে-সকল সদ্গুণ প্রভাবে লোকে খ্যাতি ও প্রতিপত্তি লাভ করিতে পারে এবং রামাদির ন্যায় চিরস্মরণীয় হইতে পারে, আপনি সেই সমস্ত গুণরাশিতে বিভূষিত হইয়াছেন।” আস্তীক এইরূপ স্তুতিবাক্য দ্বারা নৃপতি, সদস্য, ঋত্বিক ও হব্যবাহ [অগ্নি] প্রভৃতি সকলকেই প্রসন্ন করিলেন। অনন্তর রাজা জনমেজয় আকার ও ইঙ্গিত দ্বারা তাঁহাদিগের সকলের অভিপ্রায় বুঝিতে পারিয়া কহিতে লাগিলেন।