শ্রীরাম বলেন, শুন মিত্র বিভীষণ।
কিরূপেতে ইন্দ্রজিৎ হইবে পতন।।
বিভীষণ বলে শুন রাজীব -লোচন।
সামান্যেতে ইন্দ্রজিৎ না হবে পতন।।
নিকুন্তিলা যজ্ঞ করে দুষ্ট নিশাচর।
করিয়াছে যজ্ঞকুণ্ড লঙ্কার ভিতর।।
যজ্ঞে পূর্ণহুতি দিয়া যদি যায় রণে।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালেতে কার সাধ্য জিনে।।
ব্রহ্মা দিয়াছেন শাপ শুন নারায়ণ।
ইন্দ্রজিৎ-যজ্ঞ ভঙ্গ করিবে যে জন।।
ইন্দ্রজিৎ সংগ্রামে মরিবে তার হাতে।
লক্ষ্মণে পাঠায়ে দেহ আমার সঙ্গেতে।।
আহুতি ঢালিয়া যজ্ঞ করিতেছে সাঙ্গ।
এ সময়ে গিয়া তা যজ্ঞ কর ভঙ্গ।।
রাম বলেন বিভীষণ ধর্ম্মে তব মতি।
কি কথা কহিলে নাহি করি অবগতি।।
বুঝাইয়া কহ দেখি মিত্র বিভীষণ।
কেমনে হইবে ইন্দ্রজিতের মরণ।।
বিভীষণ বলে মিত্র করহ-শ্রবণ।
মেঘনাদে ব্রহ্মা বর দিলেন যখন।।
মেঘনাদ আমি আর রাজা দশানন।
তিন জন ছিলাম না ছিল অন্য জন।।
ব্রহ্মা বলিলেন মেঘনাদ মাগ বর।
মেঘনাদ বলে চাহি হইতে অমর।।
বিধি কর মেঘনাদ সে বড় প্রমাদ।
বাঞ্ছামত অন্য বর মাগ মেঘনাদ।।
মেঘনাদ বলে যদি হইলে সদয়।
মনোমত বর তবে দেহ মহাশয়।।
যজ্ঞ করে যেই দিন যাইব যুঝিতে।
হইব সংসারজয়ী তোমার বরেতে।।
শত্রুরে মারিব বাণ মেঘের আড়ে থেকে।
আমি যারে মারিব সে আমারে না দেখে।।
ব্রহ্মা বলে, যে চাহিলে দিলাম সেই বর।
যুঝিবে লুকায়ে থেকে মেঘের ভিতর।।
যজ্ঞ করে যে দিন যাইবে যুঝিবারে।
সে দিন নারিবে কেহ জিনিতে তোমারে।।
এই যজ্ঞ ভঙ্গ তোমার করিবে যে জন।
মরিবে তাহার হাতে না যায় খণ্ডন।।
মেঘনাদে মারিবারে সন্ধি আমি জানি।
লক্ষ্মণে আমার সঙ্গে দেহ রঘুমণি।।
মায়াসীতা কাটিয়া দুরন্ত নিশাচর।
যজ্ঞে পূর্ণা দিতে গেল লঙ্কার ভিতর।।
বানর-কটক লয়ে যজ্ঞভঙ্গ করে।
এখনি মারিব গিয়া রাবণ-কুমারে।।
লক্ষ্মণে আমার সঙ্গে পাঠাও ত্বরিত।
যজ্ঞভঙ্গ করিয়া মারিব ইন্দ্রজিৎ।।
শুনিয়া সখার কথা রামের উল্লাস।
ইন্দ্রজিৎ-মৃত্যু কথা গাহে কৃত্তিবাস।।