একপঞ্চাশত্তম অধ্যায়
সর্পনাশে রাজার প্রতিজ্ঞা
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, রাজা জনমেজয় এই কথা বলিয়া মন্ত্রিগণের অনুমোদনক্রমে সর্পবংশ ধ্বংস করিতে প্রতিজ্ঞারূঢ় হইলেন। পরে স্বীয় পুরোহিত দ্বারা ঋত্বিক্গণকে আহ্বান করিয়া আপন কার্য্যের অনুকুল এই বাক্য বলিলেন, “দুরাত্মা রক্ষক আমার পিতার প্রাণহিংসা করিয়াছে, এক্ষণে আমি তাহার প্রতীকার করিতে অভিলাষ করি, আপনারা অনুমতি করুন। হে মহাশয়গণ! আপনাদের এমন কোন কর্ম্ম বিদিত আছে, যদ্দ্বারা আমি সেই দুরাত্মাকে ও তাহার বন্ধুবান্ধবদিগকে প্রজ্জলিত হুতাশনে নিক্ষেপ করিয়া সবংশে ধ্বংস করিতে পারি? সে যেমন আমার পিতাকে তীব্র বিষাগ্নিতে দগ্ধ করিয়াছে, তদ্রুপ আমিও সেই পাপাত্মাকে ভস্মসাৎ করিব।” ঋত্বিকগণ কহিলেন, “মহারাজ! পুরাণে বর্ণিত আছে, দেবতারা তোমার নিমিত্ত সর্পসত্র নামে এক অতি মহৎ সত্র সৃষ্টি করিয়াছেন। পৌরাণিকেরা কহিয়া থাকেন, আপনি ব্যতীত সেই যজ্ঞের অনুষ্ঠানকর্ত্তা আর কেহই নাই। সেই যজ্ঞের অনুষ্ঠান-প্রণালীও আমাদিগের বিদিত আছে, অতএব আপনি সর্পসত্র আরম্ভ করুন; তাহাতেই দুরাত্মা তক্ষকের বিনাশ হইবে, সন্দেহ নাই।” রাজর্ষি এই বাক্য শ্রবণ করিবামাত্র বোধ করিলেন, যেন তক্ষক প্রজ্বলিত হুতাশনে দগ্ধ হইয়াছে। পরে মন্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণদিগকে কহিলেন, “আমি সেই যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিব, আপনারা আদেশ করুন, কিরূপ যজ্ঞীয় দ্রব্যসামগ্রী আহরণ করিতে হইবে?” তখন বেদজ্ঞ ও বিচক্ষণ ঋত্বিকগণ শাস্ত্রানুসারে যজ্ঞভূমির পরিমাণ করিয়া মহামূল্য রত্নসমূহে ও প্রভুত ধনধান্যে সেই যজ্ঞায়তন পরিপূরিত করিলেন। ঋত্বিকগণ এইরূপে যজ্ঞভূমি প্রস্তুত করাইয়া সেই সত্রে আপনারা ব্রতী হইলেন এবং রাজাকে যথাবিধি দীক্ষিত করিলেন; কিন্তু যজ্ঞারম্ভের পূর্ব্বে যজ্ঞ-বিঘ্নকর এক মহৎ ব্যাপার উপস্থিত হইয়াছিল। যজ্ঞায়তন নির্ম্মাণকালে একজন বাস্তুবিদ্যা বিশারদ [গৃহাদির স্থান ও কাল বিচারে নিপুণ] পুরাণবেত্তা সূত্রধর তথায় উপস্থিত হইয়া কহিলেন, ‘যে প্রদেশে ও যে সময়ে যজ্ঞায়তনের পরিমাণ করা হইয়াছে, তদ্দ্বারা বোধ হইতেছে যে, একজন ব্রাহ্মণ হইতে এই যজ্ঞের ব্যাঘাত জন্মিবে।’ রাজা এই কথা শ্রবণ করিয়া দীক্ষিত হইবার পূর্ব্বেই দ্বারপালকে আজ্ঞা করিয়াছিলেন, “যেন আমার অজ্ঞাতসারে কোন ব্যক্তি এখানে প্রবিষ্ট হইতে না পারে।”