৫০তম অধ্যায়
পাণ্ডবগণের কাম্যক বনবাসবৃত্তান্ত
জনমেজয় জিজ্ঞাসা করিলেন, হে মুনে! রাজা ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডবগণকে বিবাসিত করিয়া নিরর্থক অনুশোচনা করিয়াছিলেন। যৎকালে অল্পচেতাঃ দুৰ্য্যোধন মহারথ পাণ্ডবগণের কোপােনল প্রজ্বলিত করিতেছিল, তখন তিনি কি বলিয়া উপেক্ষা করিয়াছিলেন? আর বনমধ্যে বন্যবস্তু কি কৃষিজাত দ্রব্যদ্বারা পাণ্ডবগণ জীবিকা-নির্ব্বাহ করিতেন, তাহাই বলুন।
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে রাজন! পুরুষশ্রেষ্ঠ পাণ্ডবগণ বিশুদ্ধ শরনিপাতিত মৃগমাংস ও বন্যবস্তুর আহরণপূর্ব্বক অগ্ৰে ব্ৰাহ্মণগণকে ভোজন করাইয়া পশ্চাৎ আপনারা ভোজন করিতেন। শৌৰ্য্যশালী পাণ্ডবগণ যৎকালে বনমধ্যে বাস করিতে লাগিলেন, তখন কতকগুলি সাগ্নিক ও নিরাগ্নিক ব্ৰাহ্মণ তাঁহাদের সহবাসী হইয়াছিলেন। রাজা যুধিষ্ঠির নানাবিধ বাণদ্বারা রুরু ও কৃষ্ণসার মৃগ এবং অন্যান্য পরিশুদ্ধ বন্যজন্তু নিহত করিয়া সহস্ৰ সহস্ৰ ব্ৰাহ্মণ, মহাত্মা স্নাতকগণ ও দশজন মোক্ষবেত্তাকে ভরণপোষণ এবং অন্যান্য ব্ৰাহ্মণগণকেও ভোজন প্ৰদান করিতেন। তথায় কাহাকেও বিবৰ্ণ, ব্যাধিত, কৃশ, দুর্ব্বল, দীন বা ভীত বোধ হইত না। যশস্বিনী দ্রৌপদী পতি ও দ্বিজাতিগণকে মাতৃবৎ ভোজন করাইয়া পশ্চাৎ আপনি আহার করিতেন। রাজা যুধিষ্ঠির পূর্ব্বদিকে, ভীমসেন, দক্ষিণদিকে, নকুল পশ্চিমদিকে ও সহদেব উত্তরদিকে গমন করিয়া প্রত্যহ মৃগয়া করিতেন। এইরূপে কাম্যকবাসী পাণ্ডবগণ অর্জ্জুনবিরহে উৎকণ্ঠিত হইয়া তদীয় আগমনপ্রতীক্ষায় অধ্যয়ন, জপ ও হোম করিয়া পঞ্চবৎসর অতিবাহিত করিলেন।