এক দিন সে বাল্মীকি সরোবর-কূলে।
রামনাম জপেন বসিয়া বৃক্ষমূলে।।
ক্রৌঞ্চ ক্রৌঞ্চী বসিয়া আছিল বৃক্ষডালে।
এক ব্যাধ আসি পক্ষী বিন্ধিলেক নলে ।।
বিন্ধিলেক ব্যাধ পক্ষী শৃঙ্গারের কালে।
ব্যাকুল হইয়া পড়ে বাল্মীকির কোলে।।
রামে স্মরি বলে মুনি কাণে দিয়া হাত।
জীবহত্যা কৈলে পাপী আমার সাক্ষাৎ।।
শৃঙ্গারে মারিলে পক্ষী বড়ই কু-কর্ম্ম।
পাপিষ্ঠ নারকী তুই নাহি কোন ধর্ম্ম।।
বিনা অপরাধে হিংসা কর পক্ষীজাতি।
বুঝিলাম তোমার নরকে হবে স্থিতি।।
এতেক বলিয়া মুনি শাপ দিল তাকে।
সেই শোকে এই শ্লোক নিঃসরিল মুখে।।
শোক হৈতে শ্লোকের হইল উপাদান।
মা নিষাদ বলিয়া তাহার উপাখ্যান।।
চারি পদ ছন্দ মুনি লিখিলেক পাতে।
লিখিয়া আপনি মূল না পারে বুঝিতে।।
ভরদ্বাজ সন্নিধানে করিল গমন।
গুরু শিষ্য বসিয়া আছেন দুই জন।।
ব্রহ্মা পাঠাইয়া দিল তথা নারদেরে।
বাল্মীকিরে উপদেশ করিবার তরে।।
যেখানে বাল্মীকি মুনি ভাবেন বসিয়া।
সেখানে নারদ মুনি উত্তরিল গিয়া।।
নারদে দেখিয়া মুনি সম্ভ্রমে উঠিল।
দণ্ডবৎ করিয়া আসন তাঁরে দিল।।
সেই শ্লোক শুনাইল মুনি নারদেরে।
নারদ করিয়া অর্থ বুঝাইল তারে।।
এই শ্লোকছন্দে তুমি কর রামায়ণ ।
উপদেশ কহি, জানি তুমি সে ভাজন ।।
সূর্য্যবংশে দশরথ হবে নরপতি।
রাবণ বধিতে জন্মিবেন লক্ষ্মীপতি।।
শ্রীরাম লক্ষ্মণ আর ভরত শত্রুঘ্ন।
তিন গর্ভে জন্মিবেন এই চারি জন।।
সীতাদেবী জন্মিবেন জনকের ঘরে।
ধনুর্ভঙ্গ পণে তাঁর বিবাহ তৎপরে।।
পিতার আজ্ঞায় রাম যাইবেন বন।
সঙ্গেতে যাবেন তাঁর জানকী লক্ষ্মণ।।
সীতারে হরিয়া লবে লঙ্কার রাবণ।
সুগ্রীব সহিত রাম করিবে মিলন।।
বালিকে মারিয়া তারে দিবে রাজ্যভার।
সুগ্রীব করিয়া দিবে সীতার উদ্ধার।।
দশ মুণ্ড বিশ হাতে মারিয়া রাবণ।
অযোধ্যায় রাজা হইবেন নারায়ণ।।
কহিবেন অগস্ত্য রাবণ-দিগ্বিজয়।
পুনরায় সীতাকে বর্জ্জিবে মহাশয়।।
পঞ্চমাস গর্ভবতী সীতারে গোপনে।
লক্ষ্মণ রাখিবে তাঁরে তপ তপোবনে ।।
লব কুশ নামে হবে সীতার নন্দন।
উভয়ে শিভাবে তুমি বেদ রামায়ণ।।
এগার সহস্র বর্ষ পালিবেন ক্ষিতি।
পুত্রে রাজ্য গিয়া স্বর্গে করিবেন গতি।।
জন্ম হৈতে কহিলাম স্বর্গ আরোহণ।
জন্মিয়া করিবে ইহা প্রভু নারায়ণ।।
এত বলি নারদ গেলেন স্বর্গবাস।
আদিকাণ্ড রচিল পণ্ডিত কৃত্তিবাস।।