৪৭তম অধ্যায়
বীরবর বৃক্ষারক বধ
ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, হে সঞ্জয়! কুলানুরূপ কার্য্যকারী ব্যূহমধ্যে প্রবিষ্ট তরুণ অপলায়ী অভিমন্যু ত্রিহায়ণ, বলবান, কুলীন অশ্বগণকর্ত্তৃক বাহিত হইয়া যেন নভোমণ্ডলে সন্তরণ করিতেছেন নিরীক্ষণ করিয়া কোন্ কোন্ বীর তাঁহাকে নিবারণ করিয়াছিল?
সঞ্জয় কহিলেন, “মহারাজ! অভিমন্যু ব্যূহমধ্যে প্রবেশ করিয়া আপনার পক্ষ ক্ষিতিপালগণকে নিশিত শরনিকরে পরাঙ্মুখ করিলে দ্রোণ, কৃপ, কর্ণ, অশ্বত্থামা, কৃতবর্ম্মা ও হার্দ্দিক্য এই ছয় রথী অভিমন্যুকে বেষ্টন করিলেন। সৈন্যগণ জয়দ্রথের প্রতি গুরুতর ভার সমর্পিত হইয়াছে দেখিয়া মহারাজ যুধিষ্ঠিরের প্রতি ধাবমান হইলেন। অন্যান্য বীরগণ তালপ্রমাণ শরাসন আকর্ষণপূর্ব্বক অভিমন্যুর উপর শরবর্ষণ করিতে লাগিলেন। অভিমন্যু সেই সর্ব্ববিদ্যাবিশারদ বীরগণকে শরনিকরে স্তম্ভিত করিয়া পঞ্চাশৎ শরে দ্রোণকে, বিংশতি শরে বৃহদ্বলকে, অশীতিশরে কৃতবর্ম্মাকে, যষ্টি শরে কৃপকে এবং আকর্ণাকৃষ্ট রুক্মপুঙ্খ মহাবেগগামী দশ শরে অশ্বত্থামাকে বিদ্ধ করিলেন; অনন্তর বিপক্ষগণ মধ্যে পীত, নিশিত, কর্ণি অস্ত্রে কর্ণের কর্ণ বিদ্ধ করিলেন; পরে কৃপাচার্য্যের পার্ষ্ণি-সারথিদ্বয় ও অশ্বগণকে নিপাতিত করিয়া দশ শরে তাঁহার বক্ষস্থল বিদ্ধ করিলেন।
অশ্বত্থামার সহিত অভিমন্যুযুদ্ধ – বৃহদ্বল বধ
অনন্তর তিনি আপনার পুত্র ও বীরগণের সমক্ষে কৌরবকুলের কীৰ্ত্তিবৰ্ধন বৃক্ষারক নামে মহাবীরকে বধ করিলেন। অভিমন্যু নির্ভীকের ন্যায় প্রধান প্রধান কৌরব বীরকে নিপীড়িত করিতেছেন দেখিয়া অশ্বত্থামা পঞ্চবিংশতি ক্ষুদ্রকে তাঁহাকে বিদ্ধ করিলে তিনিও ধার্ত্তরাষ্ট্রগণ সমক্ষে অবিলম্বে শাণিত শরনিকরে অশ্বত্থামাকে বিদ্ধ করিলেন। অশ্বত্থামা সুতীক্ষ্ন যষ্টি শরে মৈনাক পর্ব্বতোপম অভিমন্যুকে বিদ্ধ করিয়াও বিচলিত করিতে সমর্থ হইলেন না। পরে সুবর্ণপুঙ্খ দ্বিসপ্ততি শরে তাঁহাকে পুনর্ব্বার বিদ্ধ করিলেন। পুত্রবৎসল দ্রোণাচাৰ্য্য এক শত শর, পিতৃ রক্ষার্থী অশ্বত্থামা ষষ্টিশর, কর্ণ দ্বাবিংশতি ভল্ল, কৃতবর্ম্মা চতুর্দ্দশ ভল্ল, বৃহদ্বল পঞ্চাশৎ ভল্ল এবং শারদ্বত দশ ভল্ল তাঁহার উপর নিক্ষেপ করিলেন। অভিমন্যু তাঁহাদিগকে দশ দশ শরে প্রহার করিলেন। কোশলরাজ কর্ণি অস্ত্রে তাঁহার হৃদয় দেশে আঘাত করিলে অভিমন্যু তাঁহার ধ্বজ, কার্ম্মুক, সারথি ও অশ্বগণকে ভূতলে নিপাতিত করিলেন। অনন্তর কোশলরাজ বিরথ হইয়া খড়্গ চর্ম্ম গ্রহণ পূর্ব্বক অভিমন্যুর কুণ্ডলালঙ্কৃত মস্তক ছেদন করিবার অভিলাষ করিলেন। অভিমন্যু শর দ্বারা কোশলাধি পতি বৃহদ্বলের হৃদয় বিদ্ধ করিবামাত্র তিনি ভূতলে নিপতিত হইলেন। তখন অশুভবাক্যপ্রযোক্তা খড়্গকার্ম্মুকধারী দশ সহস্র ভূপাল রণে ভগ্ন হইতে লাগিলেন। মহাবীর অভিমন্যু বৃহদ্বলকে নিহত ও শরনিকরে সকলকে স্তম্ভিত করিয়া রণস্থলে সঞ্চরণ করিতে আরম্ভ করিলেন।