৪৪তম অধ্যায়
যুধিষ্ঠিরাদেশে ভীমাদির বিশ্রামসুখোপভোগ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে মহারাজ! অনন্তর ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির প্রজাগণকে গৃহগমনে অনুমতি করিলে তাহারা স্ব স্ব আবাসে প্রস্থান করিল। তখন ধৰ্ম্মনন্দন ভীমপরাক্রম ভীমসেন, অর্জ্জুন, নকুল ও সহদেবকে সান্ত্বনা করিয়া কহিলেন, “হে ভ্রাতৃগণ! তোমরা মহারণে শত্ৰুদিগের শরজালে ক্ষতদেহ ও পরিশ্রান্ত এবং শোক-দুঃখে নিতান্ত সন্তপ্ত হইয়াছ। আমার নিমিত্তই তোমাদিগকে কাপুরুষের ন্যায় অরণ্যবাসক্লেশ স্বীকার করিতে হইয়াছিল। অতএব এক্ষণে তোমরা নিভৃতস্থানে অবস্থানপূর্ব্বক পরিশ্ৰমাপনোদন ও স্বচ্ছন্দে বিজয়সুখ অনুভব কর। কল্য প্রাতে পুনরায় আমরা পরস্পর মিলিত হইব।”
ধৰ্ম্মরাজ এই বলিয়া জ্যেষ্ঠতাত ধৃতরাষ্ট্রের অনুমতিগ্রহণপূর্ব্বক বৃকোদরকে দুৰ্য্যোধনের প্রাসাদপরিশোভিত নানা-রত্নখচিত দাসদাসীসমন্বিত ইন্দ্রালয়তুল্য গৃহ, অর্জ্জুনকে দুৰ্য্যোধন-গৃহের ন্যায় সুদৃশ্য মাল্যসংযুক্ত হেমতোরণবিভূষিত, দাসদাসী ও ধনধান্যপরিপূর্ণ দুঃশাসন-ভবন, নকুলকে দুৰ্ম্মর্ষণের সুবর্ণমণি মণ্ডিত কুবেরভবনতুল্য প্রাসাদ এবং প্রাণাধিক সহদেবকে দুর্ম্মুখের কমলদলাক্ষী[পদ্মপত্র তুল্য প্রশস্তনেত্রা] কামিনীগণে পরিপূর্ণ কনকভূষিত গৃহ প্রদান করিলেন। পাণ্ডুতনয়গণ এইরূপে জ্যেষ্ঠভ্রাতার অনুগ্রহে সুরম্য হর্ম্ম্য[অট্টালিকা]সমুদয় প্রাপ্ত হইয়া তথায় গমনপূৰ্ব্বক সুস্থচিত্তে সুখানুভব করিতে লাগিলেন। মহাত্মা যুযুৎসু, বিদুর, সঞ্জয়, সুধৰ্ম্মা ও ধৌম্য পূৰ্ব্বনির্দিষ্ট স্ব স্ব আলয়ে গমন করিলেন। মহাত্মা মধুসূদন সাত্যকির সহিত অর্জ্জুনের মন্দিরে সমুপস্থিত হইলেন। এইরূপে তাঁহারা সকলেই স্ব স্ব আবাসে অবস্থানপূর্ব্বক বিবিধ বস্তু উপভোগ ও নিদ্রাসুখ অনুভব করিয়া পুনরায় রাজা যুধিষ্ঠিরের সন্নিধানে গমন করিলেন।