জাম্ববান হনুমানে দিলেন বিদায়।
ঔষধ আনিতে বীর হনুমান যায়।।
উভ লেজ করিয়া সারিল দুই কাণ।
এক লাফে আকাশে উঠিল হনুমান।।
মহাশব্দে চলিল পবনে করি ভর।
লেজের সাপটে উড়ে পর্ব্বত পাথর।।
দশ যোজন হৈল বীর আড়ে পরিসর।
দীর্ঘেতে যোজন ত্রিশ, চমকে অমর।।
লাঙ্গুল বাড়ায়ে কৈল যোজন পঞ্চাশ।
সারিয়া তুলিল লেজ ঠেকিল আকাশ।।
নিমিষেতে সাগর হইয়া গেল পার।
সরা গোটা জ্ঞান করে সকল সংসার।।
নদ নদী এড়াইল পর্ব্বত কন্দর।
কত বন উপবন হয়ে গেল পার।।
নানা তীর্থ-ক্ষেত্র কত মুনির বসতি।
বারো বৎসরের পথ যায় এক রাতি।।
হিমালয়-পর্ব্বত ছাড়য়ে শীঘ্রগতি।
কৈলাস পর্ব্বত দেখে ধবল আকৃতি।।
ঋষ্যমূখ-পর্ব্বতে উঠিল হনুমান।
ঔষধের গন্ধ পাইয়া রহে সেই স্থান।।
ঔষধের গন্ধেতে সুগন্ধি বাত বহে।
সন্ধান পাইয়া বীর সেইখানে রহে।।
শিখরে শিখরে ফিরে পবন-নন্দন।
চারি জাতি ঔষধ না পায় দরশন।।
দেব মূর্ত্তি ঔষধ কি দিব তার লেখা।
কারে হয় অদর্শন কারে দেয় দেখা।।
ঔষধ না পায় বীর রজনী বিস্তর।
মনে মনে চিন্তা তবে করে বীরবর।।
মনে মনে হনু তবে করে অনুমান।
বাণ খেয়ে বুদ্ধি গেছে বুড়া জাম্ববান।।
তল্লাসিয়া পর্ব্বত করিনু পাতি পাতি।
চারিজাতি ঔষধ না পাই এক জাতি।।
অকারণে আইলাম ভল্লুকের বোলে।
এত দুঃখ বিধাতা কি লিখিল কপালে।।
বুদ্ধিমন্ত হনুমান বিচারে পণ্ডিত।
সাত পাঁচ ভাবি মনে স্থির করে চিত।।
ব্রহ্মার নন্দন বীর আছে বহু জ্ঞান।
সর্ব্বলোকে বলে মহামন্ত্রী জাম্ববান।।
তার বাক্য মিথ্যা নহিবেক কোনকালে।
পর্ব্বত চাতুরী করি ঔষধ লুকালে।।
সাধে কি তোমার পাখা কাটে পুরন্দর।
আমারে ভাবিলে তুমি বনের বানর।।
পরিহাস কর তুমি বিপত্তির কালে।
উপাড়িয়া ফেলে দিব সাগরের জলে।।
সুগ্রীবের চর আমি শ্রীরামের দাস।
আমার সঙ্গেতে তুমি কর পরিহাস।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের মধুর ভারতী।
যার কণ্ঠে বিরাজেন দেবী সরস্বতী।।