অগস্ত্যে জিজ্ঞাসে রাম কমললোচন।
কার তরে কৈলা ব্রহ্মা লঙ্কার সৃজন।।
মুনি বলিলেন, শুন পুরাণ উত্তর।
লঙ্কার সৃজন হেতু শুন রঘুবর।।
সুমেরু পবনে বাদ অযুত-বৎসর।
পবন লঙ্ঘিতে নারে সুমেরু শিখর।।
তিনশৃঙ্গে পর্ব্বত সে জুড়িল গগন।
সুমেরুতে চন্দ্র-সূর্য্যের নাহিক গমন।।
সকল পর্ব্বত জিনি উভেতে প্রবীণ।
নিত্য নিত্য সূর্য্য যান করি প্রদক্ষিণ।।
হিমালয়-নন্দিনী সে জন্মিলা পার্ব্বতী।
তাঁহাকে করিতে বিভা গেলা পশুপতি।।
শিব আরাধিয়া তপ কৈল তপোবনে।
শিব-পর্ব্বতীর হৈল শুভ দরশনে।।
কাহার দুহিতা তুমি, কাহার বা নারী।
এ বিষম স্থানে তুমি কেন একেশ্বরী।।
শঙ্করের কথা শুনি কন ততক্ষণ।
নিবেদন করি কথা, শুন দিয়া মন।।
হিমালয়-কন্যা আমি, শুন মহাশয়।
হর লাগি তপ করি, কারে মোর ভয়।।
হাসেন বচন শুনি দেব শূলপাণি।
মিলিল শঙ্কর বর, শুনহ ভামিনি।।
অধিষ্ঠিত হয়ে বর নিজে দিলা হর।
শিব গেলা নিজপুরে, দেবী আইলা ঘর।।
ব্রহ্মাকে কহিলা শিব এসব উত্তর।
মোর কাজে যাহ তুমি হিমালয়-ঘর।।
ব্রহ্মা বিষ্ণু কুবের ও বরুণ পবন।
অষ্টঋষি চলে আর যত দেবগণ।।
একত্র হইয়া গেলা হিমালয়-ঘর।
বাহিরিলা হিমালয় হরিষ অন্তর।।
বসিতে আসন দিল পাদ্য অর্ঘ্য জল।
যোড়হাতে দেবগণে পুছেন কুশল।।
বলেন, কিহেতু তোমা সবা আগমন।
বড় ভাগ্য মানি আজি সফল জীবন।।
ব্রহ্মারে বলেন গিরি এতেক উত্তর।
শুনিয়া হইলা ব্রহ্মা সানন্দ অন্তর।।
ব্রহ্মা বলে, শুন মোর কথার প্রবন্ধ।
মোর ভাই শিবে কর কন্যার সম্বন্ধ।।
হিমালয় বলে মোর জীবন সফল।
মহাদেবে কন্যা দিব বড়ই মঙ্গল।।
বিনয় বচনে গিরি করে পরিহার।
শিবে কন্যা দিব আমি কৈনু অঙ্গীকার।।
রবি সোম কুজ আর বুধ বৃহস্পতি।
শুত্রু শনি রাহু কেতু নবগ্রহ-পতি।।
যবে গৌরী তপস্যা করিল তপোবনে।
ভবানী-শঙ্করে বিভা জানে গ্রহগণে।।
শুভক্ষণে গ্রহগণ হয়ে সমবায়।
কেহ বিঘ্ন না করিব গৌরী বিভায়।।
এত বাক্য হিমালয় কৈলা দেব পাশে।
বর এলে বিভা দিব, লগ্ন তার কিসে।।
অঙ্গীকার কৈল গিরি আপনার মুখে।
দেবগণ গেলা ঘর নিজ মনঃসুখে।।
সব কথা কহে গিয়া শঙ্করের ঠাঁই।
বিবাহের আয়োজন করহ শিবাই।।
কালি বিভা হবে তব, আজি অধিবাস।
শঙ্করের সম্বন্ধ গাহিল কৃত্তিবাস।।