যৌবন কালেতে আমি ছিলাম প্রবীণ।
তিনবার করিলাম হরি প্রদক্ষিণ।।
বৃদ্ধকালে বলহীন নিকট মরণ।
আপনারে নাহি পারি করিতে পালন।।
যাহার বিক্রমে লোক করেন ভরসা।
তাহার জীবন ধন্য বিক্রম প্রশংসা।।
জানিয়া সীতার বার্ত্তা আইল হনুমান।
চিন্তিত বানরে সব করে পরিত্রাণ।।
নানাবিধ বানর বসতি নানা দেশে।
তোমার বিক্রম যেন দেশে গিয়া ঘোষে।।
পৌরুষে প্রকাশ কর সাগর লঙ্ঘিয়া।
শ্রীরামেরে তুষ্ট কর সীতা উদ্ধারিয়া।।
হনুমান কহিলেন করহ বিচার।
আমার জন্মের কথা কহি আরবার।।
প্রভাস নামেতে তীর্থ খ্যাত মহীতলে।
মুনিগণ স্নান করে সেই নদীজলে।।
ধবল নামেতে হস্তী দীঘল দশন।
দন্তাঘাতে চিরিয়া মারিত মুনিগণ।।
ভরদ্বাজ মহাঋষি ঋষির প্রধান।
দন্ত সারি যায় হস্তী নিতে তাঁর প্রাণ।।
ব্যাকুল হইয়া মুনি পলায় দৌড়িয়া।
রুষিয়া গেলেন পিতা বিপদ দেখিয়া।।
দয়ালু আমার পিতা অতি ভয়ঙ্কর।
এক লাফে পড়িলেন হস্তীর উপর।।
দুই চক্ষু উপাড়েন নখের আঁচড়ে।
দুই হাতে টানি দুই দশন উপাড়ে।।
দন্ত উপাড়িয়া তার পেটে দেয় দন্ত।
দন্তাঘাতে মাতঙ্গের করিলেন অন্ত।।
পরেতে গেলেন পিতা মুনির সমাজ।
মুনি বলে বর মাগ শুন কপিরাজ।।
কেশরী বলেন যদি বর নিতে হয়।
তবে পাই যেন এক উত্তম তনয়।।
মুনিরাজ বলে তুমি চাহিলা যে বর।
ত্রৈলোক্য-বিজয়ী হবে তোমার কোঙর।।
বর পাইয়া মুনিরাজে করি নমস্কার।
মলয়-পর্ব্বতে গেল যথা পরিবার।।
অঞ্জনা আমার মাতা অতি রূপবতী।
ঋতুস্থান হেতু গেল নর্ম্মদার প্রতি।।
সন্ধান পাইয়া তথা দেবতা পবন।
ঝড়ে বস্ত্র উড়াইয়ে দিল আলিঙ্গন।।
এই সে কারণে আমি পবন-নন্দন।
সভার ভিতরে লজ্জা দিস কি কারণ।।
তুমিত কাহার পুত্র মন্ত্রী জাম্বুবান।
সকলের সব বার্ত্তা জানে হনুমান।।
যত যত আসিয়াছ বীর সেনাপতি।
কেবা না জানহ কহ কার মাতা সতী।।
রামকার্য্য করিতে না করি বিসম্বাদ।
বিসম্বাদ করিলে হইবে কার্য্যে বাদ।।
বানর-কটকে করি অভয় প্রদান।
অঙ্গদ বীরের আজি বাড়াইব মান।।
সাগর যোজন শত দেখি খালি-জুলি।
শতবার পার হই আমি মহাবলী।।
উড়িয়া পড়িব গিয়া স্বর্ণ-লঙ্কাপুরী।
শত্রু মারি উদ্ধারিব রামের সুন্দরী।।
তোমা সবাকারে না ডাকিব যুদ্ধ আশে।
একাকী আনিব সীতা শ্রীরামের পাশে।।
পরম হরিষে থাক কোন চিন্তা নাই।
সকলেতে কিবা কার্য্য একা আমি যাই।।
সবে বলে যত বল কিছু নহে আন।
ত্রিভুবনে বীর নাহি তোমার সমান।।
সুগন্ধি পুষ্পের মাল্য গন্ধে মনোহর।
হনুমান গলে দিল সকল বানর।।
বড় বড় বানরের দেখিয়া কাকুতি।
সাগর তরিতে হনুমান করে গতি।।
পৃথিবী সহিতে নারে মারুতির ডর।
সমুদ্র তরিতে উঠে পর্ব্বত-শিখর।।
চল্লিশ যোজন বীর হইল নিমেষে।
হনুর শরীর গিয়া ঠেকিল আকাশে।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের কবিত্ব বিচক্ষণ।
গাইল সুন্দরাকাণ্ড গীত রামায়ণ।।