বেদব্যাসকর্ত্তৃক যজ্ঞানুষ্ঠান উপদেশ
ব্যাস বলিলেন, “হে ধৰ্ম্মরাজ! তুমি অদ্যাপি বিশেষরূপ জ্ঞানলাভে সমর্থ হও নাই। ইহলোকে কেহই স্বয়ং কোন কার্য্যের অনুষ্ঠান করিতে পারে না। সকলেই ঈশ্বরকর্ত্তৃক নিযুক্ত হইয়া সাধু বা অসাধু কাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করিয়া থাকে। অতএব অনুতাপ পরিত্যাগ করা লোকের অবশ্য কর্ত্তব্য। তুমি আপনাকে পাপপরায়ণ বলিয়া জ্ঞান করিতেছ। অতএব যে যে কাৰ্য্যদ্বারা মনুষ্যের পাপ ধ্বংস হয়, আমি তৎসমুদয় তোমার নিকট কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। দুষ্কৰ্ম্মকারী ব্যক্তিরা দান, তপস্যা ও যজ্ঞানুষ্ঠান করিলে সমুদয় পাপ হইতে বিমুক্ত হইতে পারে। দেবাসুরগণও পুণ্যলাভের নিমিত্ত যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিয়া থাকেন। যজ্ঞের তুল্য উৎকৃষ্ট কাৰ্য্য আর কিছুই নাই। দেবগণ যজ্ঞানুষ্ঠানপ্রভাবেই সমধিক পরাক্রান্ত হইয়া দানবগণকে পরাজিত করিয়াছেন। অতএব তুমি দশরথাত্মজ শ্রীরাম ও তোমার পূৰ্ব্বপিতামহ শকুন্তলাগৰ্ভসম্ভূত মহারাজ ভরতের ন্যায় যথাবিধানে রাজসূয়, সৰ্ব্বমেধ ও অশ্বমেধ প্রভৃতি যজ্ঞের অনুষ্ঠান কর! অশ্বমেধ যজ্ঞ অতি উৎকৃষ্ট। যথাবিধি দক্ষিণাদানসহকারে ঐ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করা তোমার উচিত।”
যুধিষ্ঠিরের যজ্ঞসাধক অর্থাভাবজ্ঞাপনে ব্যাসোক্তি
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “ভগবন্! অশ্বমেধযজ্ঞের অনুষ্ঠান করিলে ভূপালদিগের নিশ্চয়ই পবিত্রতালাভ হইয়া থাকে, কিন্তু এক্ষণে উহা অনুষ্ঠান করা আমার পক্ষে সহজ নহে। আমার অল্পমাত্রও ধন নাই, আমি এই সমুদয় জ্ঞাতিবধের হেতুভূত হইয়াও কিছুমাত্র দান করিতে পারিলাম না। আমার ঐশ্বৰ্য্য একেবারে নিঃশেষিত হইয়াছে। আর যেসমুদয় রাজপুত্র এই স্থানে বিদ্যমান আছেন, তাঁহারাও নিতান্ত দীনভাবাপন্ন ও ক্ষতবিক্ষত হইয়াছেন; সুতরাং এক্ষণে তাঁহাদিগের নিকট অর্থ প্রার্থনা করা আমার নিতান্ত অনুচিত। দুর্য্যোধনের অপরাধেই পৃথিবীর ভূপালগণের সংহার ও আমাদিগের অকীৰ্ত্তিলাভ হইয়াছে। দুরাত্মা দুর্য্যোধনের অর্থলালসায় পৃথিবী একেবারে বীরশূন্য ও ধনশূন্য হইয়াছে। সুতরাং এ সময় অশ্বমেধযজ্ঞের অনুষ্ঠান কিরূপে সম্ভবপর হইতে পারে? বিশেষতঃ অশ্বমেধ-যজ্ঞে পৃথিবীকে দক্ষিণা দান করাই প্রধান কল্প বলিয়া নির্দ্দিষ্ট হইয়াছে; অন্যান্য প্রকার দক্ষিণাদান উহার অনুকল্প; কিন্তু অনুকল্প অবলম্বন করিতে আমায় কিছুতেই প্রবৃত্তি হয় না; অতএব আপনি এক্ষণে আমাকে সময়োচিত উপদেশ প্রদান করুন।”
তখন ধৰ্ম্মরাজ এই কথা কহিলে মহর্ষি বেদব্যাস ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া তাঁহাকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলেন, “বৎস! তুমি চিন্তাকুল হইও না। তোমার ধনাগার এক্ষণে ধনশূন্য হইয়াছে বটে, কিন্তু অচিরাৎ উহা বিবিধ ধনে পরিপূর্ণ হইতে পায়ে। পূৰ্ব্বে মহারাজ মরুত্ত হিমালয়পৰ্ব্বতে যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়া ব্রাহ্মণগণকে রাশি রাশি সুবর্ণ প্রদান করাতে ব্রাহ্মণগণ তৎসমুদয় বহন করিতে না পারিয়া পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছিলেন। সেই সমুদয় সুবর্ণ অদ্যাপি সেই স্থানে বিদ্যমান রহিয়াছে। এক্ষণে তৎসমুদয় আনয়ন করিলে অনায়াসে যজ্ঞ সম্পন্ন হইবে।”