৩৯তম অধ্যায়
ব্রহ্মশাপদগ্ধ চার্ব্বাকের পূর্বজন্মবৃত্তান্ত
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে মহারাজ! অনন্তর সৰ্ব্বদর্শী জনার্দ্দন ভ্রাতৃগণসমবেত ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলেন, “মহারাজ! ব্রাহ্মণগণ সতত অর্চনীয়। উঁহারা ভূতলস্থিত দেবতা। উঁহারা ক্রুদ্ধ হইলে উঁহাদের বাক্য হইতে বিষ নির্গত হয়। ঐ মহাত্মাদিগকে প্রসন্ন করা অতি অল্পায়াসসাধ্য। পূৰ্ব্বে সত্যযুগে চার্ব্বাকনামে এক রাক্ষস বদরীতপোবনে বহুকাল অতিকঠোর তপানুষ্ঠান করিয়াছিল। প্রজাপতি ব্রহ্মা তাহার তপঃপ্রভাবে অতিমাত্র সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে বরগ্রহণার্থ বারংবার অনুরোধ করিতে লাগিলেন। রাক্ষস কমলযোনিকে বরপ্রদানে সমুদ্যত দেখিয়া কহিল, ‘ভগবন্! যদি প্রসন্ন হইয়া থাকেন, তবে আমাকে এই বর প্রদান করুন, যেন কোন প্রাণী হইতে আমার কিছুমাত্র ভয় না থাকে।’ তখন ব্রহ্মা কহিলেন, “হে চাৰ্ব্বাক! আমি তোমাকে তোমার অভিলষিত বর প্রদান করিতেছি; কিন্তু তুমি কদাচ ব্রাহ্মণগণের অবমাননা করিও না। ব্রাহ্মণের অপমান করিলেই তোমাকে বিপদগ্রস্ত হইতে হইবে।’
“চার্ব্বাকরাক্ষস এইরূপে ব্রহ্মার প্রসাদে বরলাভ করিয়া স্বীয় বলবীর্য্যপ্রভাবে দেবগণকে সন্তাপিত করিতে লাগিল। সুরগণ সেই রাক্ষসের বাহুবলে নিতান্ত নিপীড়িত হইয়া তাহার বধসাধনের নিমিত্ত ব্রহ্মাকে অনুরোধ করিলেন। তখন ব্রহ্মা কহিলেন, “হে দেবগণ! যাহাতে অচিরকালমধ্যে ঐ রাক্ষসের মৃত্যু হয়, আমি তাহার উপায়বিধান করিয়া দিয়াছি। মনুষ্যগণমধ্যে দুৰ্য্যোধননামে এক রাজার সহিত চার্ব্বাকের অতিশয় সখ্যভাব জন্মিবে এবং ঐ রাক্ষস দুর্য্যোধনের স্নেহের নিতান্ত বশবর্ত্তী হইয়া ব্রাহ্মণগণের অবমাননা করিবে। ব্রাহ্মণগণ রাক্ষসকৃত অবমাননায় নিতান্ত ক্রোধাবিষ্ট হইয়া উহাকে অভিশাপ প্রদানপূর্ব্বক দগ্ধ করিবেন।’ হে ধৰ্ম্মরাজ! সম্প্রতি এই সেই চার্ব্বাকরাক্ষস ব্রহ্মদণ্ডে নিহত হইয়া শয়ান রহিয়াছে। এক্ষণে আপনি আর শোক প্রকাশ করবেন না। আপনার জ্ঞাতিবর্গ ক্ষত্রিয়ধৰ্ম্মানুসারে যুদ্ধে প্রবৃত্ত ও নিহত হইয়া দেবলোকে গমন করিয়াছেন। অতএব এক্ষণে শোকসন্তাপ পরিত্যাগপূৰ্ব্বক রাজকার্য্যানুষ্ঠান, শত্ৰুসংহার, প্রজাপালন ও ব্রাহ্মণগণকে অর্চ্চনা করাই আপনার কর্ত্তব্য।”