৩২তম অধ্যায়
ভীমসহ দ্রোণ-দুর্য্যোধনাদির যুদ্ধ
সঞ্জয় কহিলেন, “অনন্তর মহাবীর বৃকোদর স্বীয় সৈন্য বিনাশ সহ্য করিতে না পারিয়া যষ্টি শরে বাহ্লিক ও দশ শরে কর্ণকে আঘাত করিলেন। দ্রোণ ভীমের প্রাণ নাশের অভিলাষে তীক্ষ্ণধার শরে মৰ্ম্মে প্রহার করিয়া উপর্য্যুপরি ষড়্বিংশতি শরে বিদ্ধ করিলেন। পরে কর্ণ দ্বাদশ, অশ্বত্থামা সাত ও মহারাজ দুৰ্য্যোধন ছয় বাণে তাঁহাকে বিদ্ধ করিলেন। মহাবল পরাক্রান্ত ভীমসেনও তাঁহাদিগকে বিদ্ধ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। তিনি পঞ্চাশৎ শরে দ্রোণকে, দশ শরে কর্ণকে, দ্বাদশ শরে দুৰ্য্যোধনকে ও আট শরে অশ্বত্থামাকে বিদ্ধ করিয়া সিংহনাদ পরিত্যাগ পূর্ব্বক তাঁহাদিগের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। সেই সুলভমৃত্যু তুমুল রণস্থলে রাজা যুধিষ্ঠির ভীমসেনকে রক্ষা করিবার নিমিত্ত যোদ্ধাদিগকে প্রেরণ করিলেন। নকুল সহদেব ও যুযুধান প্রভৃতি বীরেরা ভীমসেনের সন্নিধানে উপনীত হইলেন। অনন্তর ভীমসেন প্রভৃতি মহারথগণ সমবেত হইয়া রোষভরে সুরক্ষিত দ্রোণ সৈন্যদিগকে বিনাশ করিবার বাসনায় গমন করিলে মহাবীর দ্রোণ সেই সকল মহাবল পরাক্রান্ত মহারথদিগকে অনায়াসে গ্রহণ করিলেন । তখন কৌরবগণ রাজ্যস্পৃহা ও মৃত্যুভয় পরিত্যাগ পূর্ব্বক পাণ্ডবদিগের নিকট উপনীত হইলে গজারোহী গজারোহীকে ও রথী রথীরে বিনাশ করিতে লাগিল; বীরগণ শক্তি, অসি ও পরশু-প্রহারে প্রবৃত্ত হইলেন। অনন্তর করি-সৈন্য সকল ঘোরতর সমর করিতে লাগিল। কেহ করিপৃষ্ঠ হইতে কেহ বা অশ্ব হইতে অধঃশিরা হইয়া কেহবা রথ হইতে শরবিদ্ধ হইয়া ধরাতলে পতিত হইল; কোন ব্যক্তি বিমৰ্দকালে বৰ্ম্ম শূন্য ও ভূতলে নিপতিত হইলে একটী হস্তী তাহার বক্ষঃস্থল অক্রিমণ পূর্ব্বক মস্তক চুর্ণ করিয়া ফেলিল। অন্যান্য হস্তীরা নিপতিত বহুসংখ্য লোককে বিমর্দ্দিত করিতে লাগিল। কতকগুলি হস্তী ধরণীতলে নিপতিত হইয়া বিশাল দশনদ্বারা অনেকানেক রথীকে ভেদ করিল। কতকগুলি হস্তী দশন সংলগ্ন নারাচ দ্বারা শত শত মনুষ্যকে বিমর্দ্দিত করত ভ্রমণ করিতে লাগিল। কুঞ্জর সকল নিপতিত অশ্ব, রথ, হস্তী ও পিহিত লৌহতনুত্র মানবদিগকে স্থূল নলের ন্যায় প্রোথিত করিয়া ফেলিল। লজ্জা শালী ভূপালগণ কালবশত গৃধ্রপক্ষাস্তীর্ণ নিতান্ত ক্লেশকর শয্যায় শয়ন করিতে লাগিলেন। পিতা পুত্রকে আক্রমণ করিয়া বিনাশ করিতে লাগিলেন এবং পুত্র মোহপরতন্ত্র হইয়া পিতার মর্যাদা অতিক্রম করিতে লাগিল। চারিদিকে রথের অক্ষ ভয়, ধ্বজ ছিন্ন ও ছত্র নিপতিত হইতে লাগিল। কোন অশ্ব ছিন্ন যুগাৰ্দ্ধ লইয়া ধাবমান হইল। অসিদগুমণ্ডিত বাহুনিপতিত ও কুণ্ডলালঙ্কৃত মস্তক ছিন্ন ভিন্ন হইতে লাগিল। মহাবল পরাক্রান্ত মাতঙ্গগণ রথসমস্ত আকর্ষণ পূর্ব্বক চূর্ণ করিতে আরম্ভ করিল। কোথাও অশ্ব হস্তী কর্ত্তৃক সাতিশয় আহত হইয়া আরোহীর সহিত নিপতিত হইতে লাগিল।
এই রূপে মৰ্য্যাদাশূন্য ঘোরতর যুদ্ধ হইতে লাগিল। হা তাত! হা পুত্র! হা সখে! তুমি কোথায় রহিয়াছ; ঐ স্থানে অবস্থান কর; ধাবমান হইও না; ইহাকে প্রহার কর, উহারে আনয়ন কর; ঐ ব্যক্তিরে বিনাশ কর, এই রূপ ও অন্যান্য রূপ বাক্য, হাস্য, সিংহনাদ ও গর্জ্জন সহকারে সমুত্থিত হইতেছে শ্রুতিগোচর হইল। মনুষ্য, অশ্ব ও হস্তীর শোণিত প্রবাহিত হইতে লাগিল; পার্থিব ধূলিজাল উপশমিত হইল; ভীরুস্বভাব মনুষ্যেরা বিমোহিত হইয়া উঠিল। কোন বীরের রথ চক্র অন্য বীরের রথ চক্রে সংলগ্ন হওয়াতে অস্ত্র প্রয়োগাবসর অতীত হইলে তিনি গদা দ্বারা তাঁহার মস্তক চূর্ণ করিলেন। নিরাশ্রয় সময়ে আশ্রয় লাভার্থী বীর পুরুষেরা নিদারুণ কেশাকর্ষণ, মুষ্টি যুদ্ধ এবং নখ ও দন্ত প্রহারে প্রবৃত্ত হইলেন। কোন বীরের খড়্গসনাথ উদ্যত বাহুদণ্ড খণ্ড খণ্ড হইয়া গেল; কাহারও বা শর, শরাসন ও অঙ্কুশ সমলঙ্কৃত হস্ত ছিন্ন ভিন্ন হইল। কোন ব্যক্তি কাহার উপর আক্রোশ প্রকাশ করিতে লাগিল; কেহ সময়ে পরাঙ্মুখ হইল; কোন ব্যক্তি সমকক্ষ ব্যক্তির শিরচ্ছেদন করিল, কেহ চীৎকার পূর্ব্বক ধাবমান হইল; কেহ সাতিশয় ভীত হইয়া চীৎকার করিতে লাগিল; কেহ শাণিত করে স্বপক্ষকে কেহ বা পর পক্ষকে কিনাশ করিতে লাগিল। গিরিশৃঙ্গ সদৃশ কোন মাতঙ্গ নারাচ অস্ত্রে আহত হইয়া বর্ষাকালীন নদী তটের ন্যায় নিপতিত হইল। প্রস্রবণশালী পর্ব্বত সদৃশ-মদস্রাবী অন্য এক মাতঙ্গ রর্থী অশ্ব ও সারথীকে নিপীড়ন করিয়া দণ্ডায়মান রহিল। ভীরুভাব, দুর্ব্বলহৃদয় মনুষ্যেরা শোণিতসিক্ত মহাবীরদিগকে বিনষ্ট হইতে দেখিয়া মোহাবিষ্ট হইতে লাগিল। সকলেই উদ্বিগ্ন হইল। কিছুই পরিজ্ঞাত হইল না। সৈন্য পদোদ্ধূত ধূলিজালে সমস্ত সমাচ্ছন্ন হইলে সমর বিশৃঙ্খল হইয়া উঠিল।
দ্রোণকর্ত্তৃক পাণ্ডব বিমর্দ্দন
অনন্তর পাণ্ডব সেনাপতি নিত্যোৎসাহী পাণ্ডবগণকে, এই সমুচিত অবসর, এই বলিয়া ত্বরান্বিত করিতে লাগিলেন। বাহুবলশালী পাণ্ডবেরা তাঁহার আজ্ঞানুসারে সৈন্য সংহার পূর্ব্বক, হংসগণ যেমন সরোবরে গমন করে, তদ্রূপ দ্রোণ রথাভিমুখে গমন করিলেন। উহারে গ্রহণ কর; ধাবমান হইও না; শঙ্কা পরিত্যাগ কর; উহাকে বিনাশ কর; দ্রোণাচার্যের রথের অভিমুখে এই রূপ তুমুল ধ্বনি হইতে লাগিল। অনন্তর দ্রোণ, কৃপ, কর্ণ, অশ্বত্থামা, জয়দ্ৰথ, অবন্তি দেশীয় বিন্দ ও অনুবিন্দ এবং শল্য তাঁহাদিগকে নিবারণ করিলেন। পরে জাতক্রোধ, নিতান্ত দুর্দ্ধর্ষ, দুর্নিবার পাঞ্চালগণ পাণ্ডবদিগের সহিত শরজালে একান্ত নিপীড়িত হইয়াও আৰ্য্য ধর্ম্মানুসারে দ্রোণাচাৰ্য্যকে পরিত্যাগ করিলেন না। অনন্তর দ্রোণ অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া শত শত শর পরিত্যাগ করিয়া চেদি, পাঞ্চাল ও পাণ্ডবদিগকে নিতান্ত নিপীড়িত করিতে লাগিলেন। তাঁহার অশনশব্দসঙ্কাশ মানবগণের ত্রাসজনন মৌর্ব্বী ও তল ধ্বনি চতুর্দ্দিকে শ্রুতিগোচর হইতে
লাগিল। এইরূপে দ্রোণাচার্য্য পাণ্ডবগণকে বিমাৰ্দত করিতেছেন
; ইতব্যসরে মহাবীর অর্জ্জুন বহুসংখ্য সংশপ্তককে পরাজয় ও বিনাশ করিয়া শোণিতোদক সম্পন্ন, শরৌঘ মাহবৰ্ত্ত মহাহ্রদ হইতে উত্তীর্ণ হইয়া তথায় সমুপস্থিত হইলেন, অবলোকন করিলাম এবং সেই কীর্ত্তি সম্পন্ন, সূৰ্য্য সঙ্কাশ অর্জ্জুনের প্রদীপ্ত কপিধ্বজও নয়নগোচর হইল। পাণ্ডব মধ্যবর্তী, যুগান্তকালীন সূৰ্য্য স্বরূপ মহাবীর অর্জ্জুন শরনিকর রূপ কর জালে সংশপ্তক সমুদ্র শুষ্ক করিয়া কৌরবগণকে সন্তপ্ত করিতে লাগিলেন। যেমন প্রলয়কালে ধূমকেতু উত্থিত হইয়া সমস্ত প্রাণী দগ্ধ করিয়া থাকে, তদ্রূপ তিনি অস্ত্রতেজে কৌরবগণকে দগ্ধ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। গজারোহী, অশ্বারোহী ও রথারোহিগণ সহস্র সহস্র শরে তাড়িত হইয়া-আলুলিত কেশে নিপতিত হইতে লাগিল। কেহ কেহ আৰ্তনাদ, কেহ কেহ বা চীৎকার করিতে আরম্ভ করিল। কতকগুলি লোক পার্থ শরে আহত হইয়া প্রাণ পরিত্যাগ পূর্ব্বক নিপতিত হইল। বীরবর অর্জ্জুন যোদ্ধাদিগের নিয়ম স্মরণ করিয়া উত্থিত, নিপতিত ও পরাঙ্মুখ ব্যক্তিদিগকে বিনাশ করিলেন না।
অর্জ্জুনকর্ত্তৃক শত্রুঞ্জয়াদি কর্ণভ্রাতৃবধ
কৌরবগণ প্রায় সকলেই বিস্মিত ও সমরে পরাঙ্মুখ হইয়া হাহাকার ও কর্ণ! কর্ণ! বলিয়া চীৎকার করিতে লাগিলেন; মহারথ কর্ণ তৎকালে, তাঁহাদিগের সমভিব্যাহারে ছিলেন না; এক্ষণে শরণার্থী কৌরবগণের রোদন শব্দ শ্রবণ করিয়া ভীত হইও না বলিয়া অর্জ্জুনের অভিমুখে ধাবমান হইলেন এবং আগ্নেয়াস্ত্র পরিত্যাগ কবিতে লাগিলেন। ধনঞ্জয় প্রদীপ্ত শাসন ধারী, শাণিত শরনিকর সম্পন্ন কর্ণের শর জাল শর সমূহ দ্বারা নিবারণ করিলেন। কর্ণও তাঁহার শর সকল শর নিকরে নিবারণ ও শরবর্ষণ পূর্ব্বক সিংহনাদ করিতে লাগিলেন। ধৃষ্টদ্যুম্ন, ভীম ও সাত্যকি তিন তিন শরে কর্ণকে বিদ্ধ করিলেন। কর্ণ শর বর্ষণ পূর্ব্বক অর্জ্জুনের শর নিবারণ করিয়া তিন বাণে ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতি তিন বীরের কাৰ্ম্মক ছেদন করিয়া ফেলিলেন। ছিন্নায়ুধ সেই সকল বীর নির্ব্বিষ ভুজঙ্গের ন্যায় রথ হইতে শক্তি নিক্ষেপ পূর্ব্বক সিংহের ন্যায় গৰ্জন করিতে লাগিলেন। সেই আশীবিষ সদৃশ মহাবের্গসম্পন্ন শক্তি সমস্ত প্রদীপ্ত হইয়া মহাবেগে কর্ণের প্রতি গমন করিতে লাগিল। কর্ণ তিন তিন শরে সেই সমস্ত শক্তি ছেদন করিয়া অৰ্জ্জুনের প্রতি শর পরিত্যাগপূর্ব্বক সিংহনাদ করিতে লাগিলেন। অর্জ্জুনও সাত শরে কর্ণকে বিদ্ধ করিয়া তীক্ষ্ন বাণে কর্ণের কনিষ্ঠ ভ্রাতাকে বিনাশ করিলেন। পরে ছয় শরে শত্রুঞ্জয়কে বিনাশ করিয়া ভল্লাস্ত্রে বিপাটের মস্তক ছেদন করিলেন। এই রূপে কর্ণের তিন ভ্রাতা ধার্ত্তরাষ্ট্রগণের সমক্ষে ও কর্ণের সম্মুখে একমাত্র অর্জ্জুনের হস্তেই বিনষ্ট হইলেন।
উভয়পক্ষের ভীষণ সঙ্কুল যুদ্ধ
অনন্তর ভীমসেন পক্ষিরাজ গরুড়ের ন্যায় রথ হইতে অবতীর্ণ হইয়া খড়্গ দ্বারা কর্ণপক্ষ পঞ্চদশ বীরকে বিনাশ করিলেন; পরে পুনরায় রথে আরোহণ ও অন্য কাৰ্ম্মক গ্রহণ করিয়া দশ শরে কর্ণকে এবং পঞ্চ শরে সারথী ও অশ্বগণকে বিদ্ধ করিলেন। ধৃষ্টদ্যুম্ন খড়্গ ও ভাস্বর চর্ম্ম গ্রহণ পূর্ব্বক চন্দ্রবর্ম্মা ও নিষধ দেশীয় বৃহৎক্ষত্রকে আহত এবং রথে আরোহণ ও অন্য কাৰ্ম্মক গ্রহণ করিয়া সিংহনাদ পরিত্যাগ পূর্ব্বক একবিংশতি শরে কর্ণকে বিদ্ধ করিলেন। সাত্যকি অন্য শরাসন গ্রহণ ও সিংহনাদ পরিত্যাগ পূর্ব্বক চতুঃযষ্টিশরে কর্ণকে বিদ্ধ করিলেন; পরে ভল্লাস্ত্রে উঁহার কাৰ্ম্মক ছেদন করিয়া পুনরায় তিন বাণে তাঁহার ভুজযুগল ও বক্ষস্থলে আঘাত করিলে রাজা দুৰ্য্যোধন, দ্রোণ ও জয়দ্রথ সাত্যকিরূপ মহাসাগরে নিমজ্জমান কর্ণকে উদ্ধার করিলেন; তাহার শত শত পদাতি অশ্ব ও হস্তী নিতান্ত ভীত হইয়া তাঁহারই পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবমান হইল। ধৃষ্টদ্যুম্ন, ভীম, অভিমন্যু, অর্জ্জুন, নকুল ও সহদেব সাত্যকিকে রক্ষা করিতে লাগিলেন। হে মহারাজ! এই রূপে আপনার ও পাণ্ডবপক্ষ বীরগণের বিনাশার্থ ঘোরতর যুদ্ধ হইতে লাগিল। সকলেই জীবন নিরপেক্ষ হইয়া সমরে প্রবৃত্ত হইলেন।
পদাতি, রথী, হস্তী ও অশ্বগণের পরস্পর যুদ্ধ আরম্ভ হইল। কোথাও হস্তী সকল রথী ও পদাতির সহিত রথী সকল হস্তী পদাতি ও অশ্বের সহিত এবং রথী ও পদাতিগণ রথী ও হস্তীর সহিত, কোথাও বা অশ্বের সহিত অশ্ব, হস্তীর সহিত হস্তী, রথীর সহিত রথী ও পদাতির সহিত পদাতিগণ মাংসাশী পশুগণের হর্ষসূচক যমরাজ্য বিবর্দ্ধন ঘোরতর যুদ্ধ করিতে লাগিল। অনন্তর মনুষ্য, রথ, অশ্ব ও হস্তী কর্ত্তৃক বহুসংখ্য হস্তী, রথ, পদাতি ও অশ্বগণ বিনষ্ট হইল; কোথাও হস্তী কর্ত্তৃক হস্তী, রথী কর্ত্তৃক রথী, অশ্ব কর্ত্তৃক অশ্ব, পদাতি কর্ত্তৃক পদাতি, কোথাও বা রথী কর্ত্তৃক হস্তী, হস্তী কর্ত্তৃক অশ্ব ও অশ্ব কর্ত্তৃক মনুষ্য ছিন্নজিহ, ভয়দশন গলিতনয়ন, মথিতকবচ ও বিগতভূষণ হইয়া বিনাশ প্রাপ্ত হইতে লাগিল। ভীষণদর্শন মাতঙ্গগণ বহু শস্ত্র সম্পন্ন শত্রুগণ কর্ত্তৃক আহত, অশ্ব ও গজচরণে তাড়িত, রথনেমি দ্বারা ক্ষত বিক্ষত, ক্ষিতি তলে প্রোথিত ও সাতিশয় সমাকুল হইয়া বিনষ্ট হইল। এইরূপে পক্ষী, শ্বাপদ ও রাক্ষসদিগের আহ্লাদকর, অতি ভয়ঙ্কয় জনক্ষয় উপস্থিত হইলে মহাবল পরাক্রান্ত বীরগণ একান্ত কুপিত হইয়া বলপূর্ব্বক পরস্পরকে বিনাশ করত সমরক্ষেত্রে সঞ্চরণ করিতে লাগিলেন এবং শোণিতসিক্ত ও সাতিশয় ছিন্ন ভিন্ন হইয়া পরস্পর মুখাবলোকন করিতে লাগিল। ইত্যবসরে ভগবান্ মরীচিমালী অস্তাচল চূড়াবলম্বী হইলে কৌরব ও পাণ্ডব পক্ষ বীর পুরুষেরা মৃদু পদ সঞ্চারে স্ব স্ব শিবিরে গমন করিলেন।
সংশপ্তকবধ পর্ব্ব সমাপ্ত