২৩তম অধ্যায়
বিবিধবর্ণ অশ্বযোজিত রথে সসৈন্য পাণ্ডবনির্য্যাণ
ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, হে সঞ্জয়! ভীমসেন প্রভৃতি যে যে মহাবীর ক্রোধভরে দ্রোণের অভিমুখীন হইয়াছিলেন, তাঁহাদের সকলের রথচিহ্ন সমুদায় কীৰ্ত্তন কর।
সঞ্জয় কহিলেন, মহারাজ! মহাবীর বৃকোদর ঋষ্যবর্ণ অশ্ব যোজিত রথে আরোহণ করিয়া সংগ্রামস্থলে সমুপস্থিত হইলে মহাবীর সাত্যকি রজত বর্ণ অশ্ব সংযোজিত রথে আরোহণপূর্ব্বক ধাবমান হইলেন। তখন দুষ্প্রধর্ষ যুধামন্যু ক্রোধভরে সারঙ্গ বর্ণ অশ্ব যোজিত রথে ও পাঞ্চালরাজতনয় মহাবীর ধৃষ্টদ্যুম্ন মহাবেগশালী, সুবর্ণমণ্ডিত, পারাবত বর্ণ অশ্বসংযোজিত রথে আরোহণ করিয়া সংগ্রামস্থলে গমন করিতে লাগিলেন। ধৃষ্টদ্যুম্নের তনয় মহাবীর ক্ষত্ৰধৰ্ম্মা স্বীয় পিতার রক্ষা ও সিদ্ধিলাভের নিমিত্ত রক্তবর্ণ হয় যোজিত রথে আরূঢ় হইয়া ধাবমান হইলেন। শিখণ্ডিনন্দন মহাবাহু ক্ষত্রদেব স্বয়ং পদ্মপত্র সন্নিভ, মল্লিকাসদৃশাক্ষ অশ্ব সমুদায় চালন পূর্ব্বক সংগ্রামে গমন করিতে লাগিলেন। শুকপক্ষ বিভূষিত কাম্বোজ দেশীয়, দর্শনীয় অশ্বগণ নকুলকে বহন করত কৌরব সমুদায়ের প্রতি ধাবমান হইল। মেঘ সদৃশ হয়গণ উত্তমৌজাকে বহন করত তুমুল সংগ্রামে গমন করিতে লাগিল। তিত্তিববর্ণ বায়ুবেগগামী অশ্বগণ উদ্যতায়ুধ মহাবীর সহদেবকে তুমুল সংগ্রামে সমুপস্থিত করিল। দন্তসবর্ণ, কৃষ্ণকেশরযুক্ত, মহাবেগ অশ্বগণ মহারাজ যুধিষ্ঠিরকে বহন করিতে লাগিল। সৈন্যগণ সুবর্ণ ভূষণ বিভূষিত বায়ুবেগগামী হয় সমুদায়ে সমারূঢ় হইয়া ধৰ্ম্মরাজের অনুগমন করিল। পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ সুবর্ণমণ্ডিত ও যুধিষ্ঠিরের অনুগামী সৈন্যগণে অভিরক্ষিত হইয়া যুধিষ্ঠিরের পশ্চাৎ সংগ্রামে গমন করিলেন। মহাধনুর্দ্ধর সান্তভী সর্ব্ব শব্দসহ, দিব্যাভরণ ভূষিত অশ্ব সমুদায়ে সংযোজিত রথে অধিরূঢ় হইয়া ভূপতিগণের মধ্যে অবস্থান করিতে লাগিলেন। মৎস্যরাজ বিরাট মহারথগণ সমভিব্যাহারে সান্তভীর পশ্চাৎ ধাবমান হইলেন। কৈকয়গণ, মহাবীর শিখণ্ডী ও ধৃষ্টকেতু স্ব স্ব সৈন্য লইয়া বিরাটের অনুগমন করিতে লাগিলেন। পাটলপুষ্প বর্ণ অশ্বগণ অরাতি নিপাতন মহারাজ মৎস্যরাজকে বহন করত নিরতিশয় শোভা ধারণ করিল। হরিদ্রা বর্ণ, হেমমালা বিভূষিত, বেগশালী অশ্বগণ বিরাটরাজের পুত্রকে বহন করিতে লাগিল। সুবর্ণ
বর্ণ
, হেমমালা বিভূষিত, যুদ্ধবিশারদ, লোহিত ধ্বজ সম্পন্ন, বৰ্ম্মিতদেহ, কেকয়দেশীয় পঞ্চ ভ্রাতা ইন্দ্রগোপ সবর্ণ অশ্ব সংযুক্ত রথে আরোহণ করিয়া বারিবর্ষণকারী জীমূতের ন্যায় শোভা ধারণ করিলেন। আমপাত্র বর্ণ, তুঙ্গুরু কর্ত্তৃক প্রদত্ত দিব্য অশ্বগণ অমিততেজা ধ্রুপদতনয় শিখণ্ডীরে বহন করিতে লাগিল। পাঞ্চাল দেশীয় দ্বাদশ সহস্র মহারথ যুদ্ধার্থ নির্গত হইলেন। তাঁহাদের মধ্যে ষট্সহস্র শিখণ্ডীর অনুগমন করিলেন। সারঙ্গ বর্ণ অশ্ব সমুদায় শিশুপালের তনয়কে বহন করিতে লাগিল। চেদীশ্বর মহাবীর ধৃষ্টকেতু অসংখ্য সৈন্য সমভিব্যাহারে কাম্বোজ দেশীয় অশ্ব সংযুক্ত রথে আরোহণ করিয়া সংগ্রামে গমন করিলেন। পলাল ধূম সদৃশ, সুকুমার, সিন্ধুদেশীয় অশ্বগণ কৈকেয় বৃহৎ ক্ষত্রকে বহন করিতে লাগিল। মল্লিকা সদৃশাক্ষ, পদ্ম বর্ণ, দিব্যাভরণ ভূষিত বাহ্লিজ অশ্বগণ শিখণ্ডীর পুত্র ক্ষত্ৰদেবকে বহন করিতে লাগিল। স্বর্ণালঙ্কার সম্পন্ন, কৌশেয় সবর্ণ, ধীর প্রভাব অশ্বগণ অরাতিনিপাতন সেনাবিন্দুকে বহন করিল। ক্রৌঞ্চবর্ণ উৎকৃষ্ট হয়গণ সুকুমার, মহারথ, কাশিরাজ তনয়ের বাহন হইল। সারথির প্রীতিকর শ্বেতবর্ণ, কৃষ্ণগ্রীব বায়ুবেগগামী অশ্বগণ প্রতিবিন্ধ্যকে বহন করিতে লাগিল। মহাবীর অর্জ্জুন সোমের নিকট যে পুত্রটীকে যাচ্ঞা করিয়া ছিলেন, সেই সুতসোম মাসপুষ্পসবর্ণ অশ্বগণ কর্ত্তৃক বাহিত হইয়া সংগ্রামে গমন করিলেন। হে মহারাজ! অর্জ্জুনের ঐ পুত্রটী কৌরবদিগের উদয়েন্দু নামক পুরে জন্ম গ্রহণ করিয়া সহস্র সোম সদৃশ প্রভা সম্পন্ন ও সোমক সভা মধ্যে, খ্যাত হইয়াছেন বলিয়া উহার নাম সুতসোম হইয়াছে।
হে মহারাজ! তরুণাদিত্য সঙ্কাশ, শালপুষ্প সন্নিভ অশ্বগণ শতানীককে, কাঞ্চন সদৃশ যোক্ত্রসম্পন্ন ময়ুর থ্রীবা সবর্ণ, অশ্বগণ শ্রুতকৰ্ম্মাকে ও স্বর্ণ চাতকপক্ষ সন্নিত হয় সমুদায় পার্থতুল্য শ্রুতনিধি শ্রুতকীৰ্তিকে সংগ্রামে বহন করিতে লাগিল। সংগ্রামে যাহার প্রভাব কৃষ্ণ ও অর্জ্জুনের প্রভাব অপেক্ষা সার্দ্বৈকগুণ অধিক, সেই মহাবীর অভিমন্যু পিঙ্গল বর্ণ অশ্বগণ কর্ত্তৃক বাহিত হইলেন। আপনার শত পুত্রের মধ্যে যিনি একাকী সোদরগণকে পরিত্যাগ করিয়া পাণ্ডবগণের নিকট গমন করিয়াছেন, সেই মহাবীর যুযুৎসু মহাকায় অশ্বগণ কর্ত্তৃক বাহিত হইয়া সংগ্রামে গমন করিলেন। পলালকাণ্ড সবর্ণ দিব্যাভরণ ভূষিত বেগবান্ অশ্বগণ বার্দ্ধক্ষেমিকে বহন করিতে লাগিল। সুবর্ণ পত্ৰযুক্ত বৰ্ম্ম ভূষিত, সারথির আজ্ঞাবহ, কৃষ্ণপাদ অশ্বগণ কুমার সৌচিতিকে বহন করিল। সুবর্ণমণ্ডিতপৃষ্ঠ, সুবর্ণমালা বিভূষিত, শান্ত প্রকৃতি কৌশেয় সদৃশ অশ্বগণ শ্রেণিমানের বাহন হইল। অরুণবর্ণ অশ্বগণ ধনুর্ব্বেদ ও ব্রাহ্ম বেদ পারগ সত্যধৃতিকে বহন করিতে লাগিল। যিনি সংগ্রাম স্থলে দ্রোণাচার্য্যের মস্তক ছেদন করিয়াছিলেন, সেই পাঞ্চাল সেনানী ধৃষ্টদ্যুম্ন পারাবত সবর্ণ অশ্বমোজিত রথে আরোহণ করিয়া সংগ্রামে গমন করিলেন। মহাবীর সত্যধৃতি, সৌচিত্তি, শ্রেণিমান, বসুদান ও কাশিরাজের পুত্র বিভু বেগশালী, কাম্বোজ দেশীয়, হেমমাল বিভূষিত অশ্ব সমুদায় লইয়া শত্রু সৈন্যগণকে বিভ্রাসিত করত ধৃষ্টদ্যুম্নের অনুগমন করিতে লাগিলেন। হেমমণ্ডিত নানা বর্ণের অশ্ব ও ধ্বজ সম্পন্ন, বিতত কার্ম্মুক কাম্বোজ দেশীয় প্রভদ্রকগণ শরজালে অরাতি সৈন্যগণকে বিকম্পিত করত ধৃষ্টদ্যুম্নের অনুসরণে প্রবৃত্ত হইল। পিঙ্গল কৌশেয় বর্ণ, সুবর্ণ মালাধারী, অম্লানচিত্ত অশ্বগণ চেকিতানকে বহন করিতে লাগিল। সব্যসাচীর মাতুল, কুন্তিভোজ পুরজিৎ ইন্দ্রায়ুধ সবর্ণ হয়োত্তম যোজিত রথে আরোহণ করিয়া সংগ্রামে গমন করিলেন। তারকাপুঞ্জ বিচিত্রিত নভোমণ্ডল সদৃশ অশ্বগণ মহারাজ রোচমানকে বহন করিতে লাগিল। লোহিতবর্ণ অশ্বগণ। গোপতির পুত্র পাঞ্চাল দেশীয় সিংহসেনকে বহন করিল। পাঞ্চালগণের মধ্যে যিনি জনমেজয় নামে বিখ্যাত, সেই মহাত্মা সর্ষপপুষ্প সবর্ণ অশ্ব সমুদায়ে যোজিত রথে আরোহণ পূর্ব্বক সংগ্রামে গমন করিলেন। মহাবেগশালী, হেমমালা বিভূষিত, মাষবর্ণ, দধিপৃষ্ঠ, চন্দ্রমুখ অশ্ব সমুদায় পাঞ্চালকে বহন করিতে লাগিল। শরস্তম্ব সদৃশ, পদ্মকিঞ্জল্ক বর্ণ, মহাবল পরাক্রান্ত অশ্ব সমুদায় দণ্ডধারকে বহন করিল। অরুণবর্ণ, মূষিকসবর্ণপৃষ্ঠ অশ্বগণ ব্যাঘ্রদত্তের বাহন হইল। বিচিত্র কৃষ্ণবর্ণ, চিত্রমাল্য বিভূষিত অশ্বগণ পাঞ্চাল দেশীয় সুধন্বারে বহন করিতে লাগিল। অশনিসমস্পর্শ, ইন্দ্রগোপ সন্নিভ, বিচিত্ৰগতি, চিত্র অশ্বগণ চিত্রায়ুধের বাহন হইল। চক্রবাক সদৃশোদর, হেমমালাধারী অশ্বগণ কোশলাধিপতির পুত্র সুক্ষত্রকে বহন করিল। বিচিত্রবর্ণ, সুবর্ণ মালা মণ্ডিত, অত্যুচ্চ অশ্বগণ সমর নিপুণ, সত্যধৃতি ক্ষেমিকে বহন করিতে লাগিল। মহাবীর শুক্ল শুক্লবর্ণ ধ্বজ, কবচ, ধনু ও অশ্ব সমুদায় লইয়া সংগ্রামে অভিমুখীন হইলেন। সমুদ্রসম্ভূত, শশাঙ্ক সদৃশ অশ্বগণ সমুদ্রসেনের পুত্র মহাতেজা চন্দ্রসেনকে বহন করিতে লাগিল। নীলোৎপল সন্নিভ, সুবর্ণ বিভূষিত, চিত্রমাল্যধারী অশ্বগণ চিত্ররথের বাহন হইল। কলায়পুষ্প সবর্ণ, শ্বেত ও লোহিত রেখায় অঙ্কিত অশ্বগণ রণদুৰ্ম্মদ রথসেনকে বহন করিতে লাগিল। লোকে যাহাকে সমুদায় মনুষ্য অপেক্ষা শৌর্য্য সম্পন্ন বলিয়া থাকে সেই পটচ্চর নিহন্তা মহাবীর, শুক্লবর্ণ হয় সংযোজিত রথে আরোহণ করিয়া সমরে গমন করিলেন। কিংশুক সবর্ণ অশ্বগণ চিত্র মাল্য, বিচিত্র বর্ম্ম, বিচিত্ৰ আয়ুধ ও বিচিত্র ধ্বজ সম্পন্ন চিত্ৰায়ুধকে বহন করিতে লাগিল। মহাবীর নীল নীলবর্ণ ধ্বজ, কবচ, ধনু ও অশ্ব সমুদায় লইয়া সংগ্রামে গমন করিলেন। মহাবীর চিত্র বিচিত্র রত্নচিহ্নসম্পন্ন বরূথ, রথ ধ্বজ ও শরাসন এবং বিচিত্র অশ্ব, ধ্বজ ও পতাকা লইয়া সমরে গমনোম্মুখ হইলেন। পুষ্করবর্ণ অশ্বগণ রোচমানের পুত্র হেমবর্ণকে বহন করিতে লাগিল। সমর কুশল, শীঘ্রগামী, কুক্কুটাণ্ড সবর্ণ, শ্বেতাণ্ডযুক্ত, শোভন অশ্বগণ দণ্ডকেতুকে বহন করিতে আরম্ভ করিল।
পিতা কৃষ্ণের হস্তে নিহত, পাণ্ড্যগণের কপাট ভিন্ন ও বন্ধুগণ পলায়িত হইলে যিনি ভীষ্ম, দ্রোণ ও পরশুরামের নিকট অস্ত্র শিক্ষা করিয়া অস্ত্রবিদ্যায় রুক্মি, কর্ণ, অর্জ্জুন ও কৃষ্ণের সমান হইয়া দ্বারকাপুরী উচ্ছিন্ন ও সমুদায় ভূমণ্ডল পরাজিত করিতে বাসনা করিয়াছিলেন, অনন্তর যিনি হিতচিকীর্ষু, প্রাজ্ঞ সুহৃদগণের নিবারণে বৈরনির্যাতন হইতে প্রতিনিবৃত্ত হইয়া এক্ষণে স্বীয় রাজ্য শাসন করিতেছেন, সেই পাণ্ড্যাধিপতি সারঙ্গধ্বজ বৈদূর্য্যজাল সংছন্ন, চন্দ্ররশ্মি সন্নিভ অশ্ব সমুদায় লইয়া স্বীয় বাহুবল প্রভাবে দিব্য শরাসন বিস্ফারণ পূর্ব্বক দ্রোণাভিমুখে ধাবমান হইলেন। বাসক পুষ্পসবর্ণ অশ্বগণ পাণ্ড্যের অনুযায়ী চতুর্দ্দশ অযুত রথীকে বহন করিতে লাগিল। নানাবর্ণযুক্ত, নানাবিধমুখ অশ্বগণ মহাবীর ঘটোৎকচকে বহন করিল। যিনি সমুদায় কৌরবগণের মত ও স্বীয় অভিলষিত দ্রব্যজাত পরিত্যাগ করিয়া ভক্তি সহকারে একাকী যুধিষ্ঠিরকে আশ্রয় করিয়াছিলেন, সেই মহাবহু লোহিতনয়ন বৃহন্ত, মহাবল পরাক্রান্ত মহাকায়, অশ্বগণ সংযোজিত সুবর্ণময় স্যন্দনে আরোহণ পূর্ব্বক সমরে গমন করিলেন। সুবর্ণবর্ণ অত্যুৎকৃষ্ট অশ্বগণ চতুর্দ্দিক হইতে রথিশ্রেষ্ঠ ধৰ্ম্মজ্ঞ যুধিষ্ঠিরের অনুগমন করিতে লাগিল। দেবরূপী প্রভদ্রকগণ নানাবর্ণের অশ্ব সমুদায় লইয়া সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইল। ঐ সমুদায় বীরগণ ভীমসেনের সহিত সমবেত হইয়া ইন্দ্র সমবেত সুরগণের ন্যায় শোভা ধারণ করিল। উহারা পাঞ্চালতনয় ধৃষ্টদ্যুম্নের সবিশেষ মনোনীত হইয়াছিল।
সসৈন্য পাণ্ডবগণের যুদ্ধার্থ আয়ুধধারণ
হে মহারাজ! ঐ সময় মহাবীর দ্রোণাচাৰ্য্য সমুদায় সৈন্যগণকে অতিক্রম করিয়া শোভা পাইতে লাগিলেন। তাঁহার ধ্বজদণ্ডাগ্রস্থিত কৃষ্ণাজিন ও সুবর্ণময় কমণ্ডলু সাতিশয় শোভা পাইতে লাগিল। মহাবীর ভীমসেনের বৈদূৰ্য্যমণি নিৰ্ম্মিত লোচন সম্পন্ন মহাসিংহধ্বজ অপূর্ব্ব শোভা ধারণ করিল। মহারাজ যুধিষ্ঠিরের সুবর্ণ নির্মিত, গ্রহগণ পরিবৃত চন্দ্ৰধ্বজ সাতিশয় শোভমান হইল। উহার ধ্বজে নন্দ ও উপনন্দ নামে দুই বিপুল মৃদঙ্গ যন্ত্র সহকারে সুমধুর স্বরে বাদিত হইয়া হর্ষ বর্দ্ধন করিতে ছিল। মহাবীর নকুলের ধ্বজে অতিভীষণ অত্যুগ্ৰ সুবর্ণপৃষ্ঠ সরভ দৃষ্ট হইতে লাগিল। মহাবাহু সহদেবের ধ্বজে শত্রুগণের শোকবর্দ্ধন, ঘণ্টা ও পতাকা যুক্ত, দুর্দ্ধর্ষ হংস সাতিশয় শোভমান হইল। দ্রৌপদীর পঞ্চ পুত্রের পঞ্চ ধ্বজে ধৰ্ম্ম, পবন, ইন্দ্র ও অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের প্রতিমূর্ত্তি শোভা পাইতে লাগিল। কুমার অভিমন্যুর রথে তপ্ত কাঞ্চন বিনির্মিত শার্ঙ্গপক্ষী সনাথ ধ্বজ দৃষ্ট হইল, মহাবীর ঘটোৎকচের ধ্বজে গৃধ্র শোভা পাইতে লাগিল। এবং পূর্ব্বে যেমন রাবণের অশ্বগণ কামচারী ছিল, ঘটোৎকচের অশ্বগণ সেই রূপ কামচারী বোধ হইল।
মহারাজ যুধিষ্ঠির দিব্য মাহেন্দ্র ধনু ও ভীমসেন বায়ব্য শরাসন গ্রহণ করিলেন। ভগবান্ ব্রহ্মা ত্রৈলোক্য রক্ষার নিমিত্ত যে শরাসন নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, মহাবীর ধনঞ্জয় সেই দিব্য অজয় গাণ্ডীব গ্রহণ করিয়া সংগ্রামে অভিমুখীন হইলেন। মহাবীর নকুল বৈষ্ণব শরাসন, সহদেব আশ্বিন শরাসন, ঘটোৎকচ অতিভীষণ পৌলস্ত শরাসন এবং দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্র রৌদ্র, আগ্নেয়, কৌবের্য্য, যাম্য ও গিরিশ ধনু গ্রহণ করিয়া সমরে গমন করিলেন। রোহিণীতনয় বলভদ্র যে রৌদ্র ধনু প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, তুষ্ট হইয়া সেই ধনু অভিমন্যুকে প্রদান করেন। অর্জ্জুনতনয় সেই শরাসন লইয়া সংগ্রামে ধাবমান হইলেন।
হে মহারাজ! যে সমুদায় ধ্বজের বৃত্তান্ত কীৰ্ত্তন করিলাম, তদ্ভিন্ন মহাবীরগণের অন্যান্য অসংখ্য হেমমণ্ডিত, অরাতিগণের ভয়াবহ ধ্বজ সকল দৃষ্ট হইতে লাগিল। তৎকালে সেই সুরগণ পরিবৃত, ধ্বজসঙ্কুল কাপুরুষ শূন্য দ্রোণ সৈন্য চিত্রার্পিতের ন্যায় বোধ হইল। স্বয়ম্বর স্থল সদৃশ সেই সমরাঙ্গনে দ্রোণের প্রতি ধাবমান বীরগণের কেবল নাম গোত্র শ্রবণগোচর হইতে লাগিল।