২৩তম অধ্যায়
পাণ্ডবসাক্ষাৎকারে সমাগত প্ৰজাগণের স্বস্থানযাত্রা
যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জ্জুন, নকুল, সহদেব, দ্রৌপদী ও পুরোহিত ধৌম্য বেদবেদাঙ্গাদিবেত্তা ব্ৰাহ্মণগণকে অষ্টাধিকশত সুবর্ণ, বসন ও গোসমূহ প্ৰদান করিয়া মনোজ্ঞ তুরঙ্গযোজিত মহামূল্য রথে আরোহণপূর্ব্বক অরণ্যে প্রস্থান করিলেন। বিংশতিজন অনুচর, ধনু, শর, মৌর্বী, শস্ত্র ও যন্ত্রসকল গ্রহণ করিয়া তাহাদিগের অনুবর্ত্তী হইল এবং ইন্দ্ৰসেন ত্বরাপূর্ব্বক রাজপুত্রীর বস্ত্রনিচয়, ধাত্রী, দাসী ও ভূষণ লইয়া রথারোহণপূর্ব্বক পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিল। মহাত্মা পৌরবগণ যুধিষ্ঠিরের সমীপবর্ত্তী হইয়া তাঁহাকে প্ৰদক্ষিণ করিলে কুরুজঙ্গলের প্রধান প্রধান ব্রাহ্মণগণ প্ৰসন্ন হইয়া তাঁহার সমুচিত সম্মান রক্ষা করিলেন। মহারাজ যুধিষ্ঠির ভ্রাতৃগণের সহিত তাঁহাদিগের সৎকার সমাধানপূর্ব্বক কুরুজঙ্গলবাসীদিগকে নয়নগোচর করিয়া গমনে বিরত হইলেন। পুত্রকে নয়নগোচর করিলে পিতার যেরূপ ভাবোদয় হয়, কুরুজঙ্গলবাসী প্ৰজাগণকে অবলোকন করিয়া ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরের তাদৃশ ভাব প্রকটিত হইতে লাগিল; প্ৰজাগণও পুত্রের ন্যায় যুধিষ্ঠিরের চতুর্দ্দিকে লজ্জিতভাবে দণ্ডায়মান হইয়া গলদশ্রুমুখে কহিতে লাগিল, “হা নাথ! হা ধর্ম্ম। আপনি পুত্রসদৃশ প্ৰজাগণ, পৌরজন ও জনপদবাসী লোকদিগকে পরিত্যাগ করিয়া কোথায় গমন করিতেছেন? নৃশংসবুদ্ধি দুৰ্য্যোধন, শকুনি ও পাপমতি কৰ্ণকে ধিক্! সেই পাপাত্মারা এই ধর্ম্মাত্মার ঈদৃশ অনর্থ চিন্তা করিতেছে। সৎকর্ম্মশালী মহাত্মা ধর্ম্মরাজ কৈলাসসদৃশ অনুপম ইন্দ্ৰপ্ৰস্ত নগর ও দেবরক্ষিত ময়দানবনির্ম্মিত অপ্রমিত সুরসভাসদৃশ সভা পরিত্যাগ করিয়া কোন স্থানে গমন করিতেছেন?”
তাঁহাদের বাক্যাবসানে মহাতেজঃ অর্জ্জুন উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, “হে দ্বিজাতিগণ! হে ধর্ম্মার্থবিৎ তপস্বিগণ! রাজা যুধিষ্ঠির অরণ্যমধ্যে বাস করিয়া বলপূর্ব্বক অরাতিগণের যশোরাশি গ্রহণ করিবেন। যাহাতে আমাদিগের এই উৎকৃষ্ট মনোরথ সুন্দররূপে সম্পন্ন হয়, আপনারা সকলে প্রসন্ন হইয়া একবাক্যে তাঁহাই বলুন।”
অর্জ্জুনের বাক্যাবসানে ব্রাহ্মণেরা সকলেই বিষণ্নভাবে অভিনন্দনপূর্ব্বক ধর্ম্মরাজকে প্রদক্ষিণ করিলে রাজা যুধিষ্ঠির তাহাদিগকে প্রস্থান করিতে অনুমতি দিলেন। অনন্তর তাহারা যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জ্জুন, নকুল, সহদেব ও দ্রৌপদীকে প্রিয়সম্ভাষণ করিয়া স্ব স্ব স্থানে প্রস্থান করিলেন।