ধূম্রাক্ষ পড়িল বার্ত্তা পাইল রাবণ।
অকম্পন বলি ডাক ছাড়ে ঘনে ঘন।।
আজ্ঞামাত্র উপনীত অকম্পন বীর।
রাজার নিকটে আসি নোঙইল শির।।
রাবণ বলে, শুন অকম্পন সেনাপতি।
আজিকার যুদ্ধে তুমি কুলাবে আরতি।।
বীরের মধ্যে বীর তুমি সকলেতে জানে।
ত্রৈলোক্য জিনিতে তুমি পার একদিনে।।
তোমার সম্মুখে যুঝে আছে কোন্ জন।
হাতে গলে বান্ধি আন শ্রীরাম লক্ষ্মণ।।
মধুর বচনে রাজা অকম্পনে তোষে।
যুঝিতে চলিল বীর রাজার আদেশে।।
সারথি যোগায় রথ বিচিত্র-গঠন।
সসৈন্যে সাজিয়া চলে বীর অকম্পন।।
আচম্বিতে গৃধিনী পড়িল রথধ্বজে।
উখাড়িয়া পড়ে ঘোয়া যায় মন্দ-তেজে।।
অকম্পন নাম তার কম্পে না কখন।
যাত্রাকালে হস্ত পদ কম্পে পুনঃ পুনঃ।।
যাত্রাকালে অমঙ্গল দেখিল অপার।
মার মার শব্দে গেল পশ্চিম দুয়ার।।
দুই সৈন্যে মিশামিশি দৃঢ় বাজে রণ।
নানা অস্ত্র গাছ পাথর করে বরিষণ।।
দুই সৈন্যে মহাযুদ্ধ হইল অপার।
রণের ধূলাতে দশদিক অন্ধকার।।
অন্ধকারে কেহ নাহি চিনে আত্মপর।
রাক্ষসে রাক্ষস মারে বানরে বানর।।
রক্তে রাঙ্গা হৈল বাট ধূলা নাহি উড়ে।
দেখাদেখি যুদ্ধ করে দুই দলে পড়ে।।
মহেন্দ্র দেবেন্দ্র আর কুমুদ সেনাপতি।
রণ দেখি তিন বীর এল শীঘ্রগতি।।
তিন বীর করে আসি গাছ বরিষণ।
সম্মুখ সংগ্রামে স্থির নহে তিনজন।।
ভঙ্গ দিয়া তিন বীর পলাইল ত্রাসে।
হাতে ধনু দাণ্ডাইয়া কম্পমান হাসে।।
নীল বীর বড় বীর সকলে বাখানে।
ভঙ্গ দিয়া পলাইল অকম্পনের রণে।।
নল বীর করেছিল একা সেতুবন্ধ।
অকম্পনের বাণে তার চক্ষু হৈল অন্ধ।।
শরভঙ্গ বড় বীর সর্ব্বলোকে জানে।
অকম্পনের গদাঘাতে ভঙ্গ দিল রণে।।
শরভঙ্গ পলাইল পেয়ে অপমান।
রণেতে প্রবেশ করে বীর হনুমান।।
হনুমান বলে, বেটা পালাবি কোথায়।
এক চড়ে যমালয়ে পাঠাব তোমায়।।
পাইক মারিয়া বেটা জিনে যাহ রণ।
অবশ্য আমার হাতে তোমার মরণ।।
এত যদি দুই বীরে হৈল গালাগালি।
দুই জনে যুদ্ধ বাজে, দোঁহে মহাবলী।।
কোটি কোটি বাণ এড়ে বীর অকম্পন।
বাণে অচেতন হৈল পবন-নন্দন।।
সম্বিত পাইয়া উঠে বীর হনুমান।
ক্রোধে আনে শালগাছ দিয়া এক টান।।
বাহুবলে এড়ে গাছ বীর হনুমান।
অকম্পনের বাণে গাছ হৈল দুই খান।।
জিনিতে না পারে হনু ভাবয়ে অন্তরে।
লাফ দিয়া পড়ে তার মাথার উপরে।।
চুলেতে ধরিয়া তারে মারিল আছাড়।
মাথার খুলি ভাঙ্গি গেল চূর্ণ হৈল ছাড়।।
অকম্পন পড়ে যদি সংগ্রামে দুর্জ্জয়।
সকল বানর বলে রাম রাম জয়।।
ভগ্নদূত কহে গিয়া রাবণ-গোচর।
অকম্পন পড়িল শুনহ লঙ্কেশ্বর।।