১৮শ অধ্যায়
মুখ্যসেনাসজ্জা—ভীষ্মের পৃষ্ঠরক্ষা
সঞ্জয় কহিলেন, “মহারাজ! মুহুর্ত্তকাল পরেই হৃদয়কম্পন [হৃৎকম্পকারী] তুমুল শব্দ শ্রবণগোচর হইতে লাগিল; ক্ষণমাত্রেই শঙ্খ ও দুন্দুভির বাদ্য, মাতঙ্গের বৃংহিত, তুরঙ্গের হ্রেষিত, যুদ্ধার্থিগণের গৰ্জিত, রাথনেমির ঘর্ঘরঘোষে যেন ধারামণ্ডল বিদীর্ণ ও নভোমণ্ডল পরিপূর্ণ হইল। উভয় পক্ষেরই সৈন্যগণ পরস্পর সমাগমে কম্পমান হইতে লাগিল। দেখিলাম, হিরণ্যভূষিত নাগ ও রথীসকল চপলাবিলাসিত [বিদ্যুৎযুক্ত] জলদজালের [মেঘের] ন্যায় প্রতীয়মান হইতে লাগিল। স্বীয় ও পরকীয়গণের কাঞ্চনময় অঙ্গদশোভিত জ্বলিতানলসদৃশ বহুবিধ ধ্বজ মহেন্দ্ৰগৃহনিবেশিত [ইন্দ্রপুরে প্রতিষ্ঠিত] শুভ্র মহেন্দ্ৰকেতুর ন্যায় শোভমান হইল, বীরগণ অগ্নি ও সূৰ্য্যের ন্যায় প্রভাসম্পন্ন কবচে বিভূষিত হইয়া অগ্নি ও সূৰ্য্যের ন্যায় দীপ্যমান হইলেন। কুরুযোদ্ধাগণ বিচিত্র আয়ুধ, কামুক ও মৌর্ব্বীত্রাণ [দস্তানা] ধারণ করিলেন। মহাধনুৰ্দ্ধার ঋষভক্ষগণ সেনামুখে গমন করিয়া সাতিশয় শোভা পাইতে লাগিলেন। আপনার পুত্র দুর্বিষহ, দুঃশাসন, দুমুখ, দুঃসহ বিবিংশতি, চিত্ৰসেন ও বিকর্ণ আর সত্যব্রত, পুরুমিত্র, জয়, ভূরিশ্রবা, শল ও তাঁহাদিগের অনুযায়ী বিংশতিসহস্র রথও ভীষ্মের পৃষ্ঠরক্ষক হইল; অভীষাহ, শূর, সেন, শিবি, শাল্ব, বসতি, মৎস্য, অম্বষ্ঠ, ত্রিগর্ত্ত, কৈকেয়, সৌবীর, কৈতব এবং পূর্ব্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ এই দ্বাদশ জনপদের বীরগণ জীবিতাশা পরিত্যাগ করিয়া রথপরম্পরায় পিতামহ ভীষ্মকে রক্ষা করিতে লাগিলেন; মাগধ ভূপতি দশসহস্র তরী কুঞ্জরসৈন্য লইয়া ভীষ্মের সমীপবর্ত্তী হইলেন; সেই সৈন্যের মধ্যে ষষ্টিলক্ষ ব্যক্তি রন্থথমূহের চক্র ও হস্তিগণের পাদরক্ষা করিতে লাগিল এবং লক্ষ লক্ষ পদাতিক ধনু, চর্ম্ম, অসি, নখর [তীক্ষ্ণ নখাগ্রসদৃশ শর] ও প্রাস হস্তে করিয়া অগ্ৰে গমন করিল। হে রাজন! আপনার পুত্রের একাদশঅক্ষৌহিণী সেনা যমুনাসহ সঙ্গত জাহ্নবীর ন্যায় নয়নগোচর হইতে লাগিল।”