সপ্তদশ অধ্যায়
সমুদ্রমন্থনের প্রশ্ন
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, হে তপোধন! ঐ সময়ে উচ্চৈঃশ্রবা কদ্রু ও বিনতার সমীপ দিয়া গমন করিতেছিল। দেবগণ অমৃতমন্থনকালে উৎপন্ন সেই সর্ব্বোৎকৃষ্ট ও সর্ব্ব-সুলক্ষণ-সম্পন্ন হয়-রত্নকে গমন করিতে দেখিয়া প্রশংসা করিতে লাগিলেন।
শৌনক কহিলেন, হে সূতপুৎত্র! তুমি কহিলে, সেই মহাবীর্য্য অশ্বরাজ সুধা-মন্থনসময়ে উৎপন্ন হয়; অতএব জিজ্ঞাসা করিতেছি, বল, দেবগণ কি কারণে ও কোন্ স্থানে অমৃত-মন্থন করিয়াছিলেন?
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, সুমেরু নামে এক পরম রমণীয় মহীধর আছে। যাহার সুবর্ণময় শৃঙ্গ-পরম্পরার প্রভাজাল প্রদীপ্ত সূর্য্যের প্রভামণ্ডলকে তিরস্কৃত করে, যে অপ্রমেয় ভূধর দেবগণ ও গন্ধর্ব্বগণের আবাস-স্থান, যাহাতে দুর্দ্দান্ত হিংস্র-জন্তুগণ সর্ব্বদা বিচরণ করে, যে পর্ব্বত প্রতিদিন রজনীযোগে নানা প্রকার ওষধি দ্বারা আলোকময় হয় এবং যে পর্ব্বত উন্নতি দ্বারা অমরলোক আচ্ছন্ন করিয়া রহিয়াছে, নানাবিধ নদ নদী ও তরুলতাগণ যাহাকে সুরভিত করিয়াছে, মনোহর বিহঙ্গমগণ যাহার বৃক্ষশাখায় বসিয়া সর্ব্বদা সুমধুরস্বরে কলরব করিতেছে, যে সুবর্ণময় মহীধর প্রাকৃত-জনসমূহের মনেরও অগোচর, একদা, তপোনিয়মানুরক্ত, প্রবলপরাক্রান্ত দেবগণ সেই পর্ব্বতের নানারত্ন সুশোভিত শিখরদেশে উপবেশনপূর্ব্বক অমৃতপ্রাপ্তিবিষয়ক মন্ত্রণা করিতেছিলেন। ভগবান্ ভূতভাবন নারায়ণ দেবতাদিগকে এইরূপে মন্ত্রণা করিতে ব্যাসক্ত দেখিয়া ব্রহ্মাকে কহিলেন, “দেবগণ ও অসুরগণ একত্র হইয়া জলধিমন্থন করিতে আরম্ভ করুন। মন্থন করিলে সমুদ্র হইতে অমৃত উত্থিত হইবে।” তদনন্তর দেবগণকে কহিলেন, “হে সুরগণ! তোমরা সমুদ্র-মন্থন কর, কিন্তু বহুবিধ ওষধি এবং রত্নসমূহ পাইয়াও মন্থনে ক্ষান্ত হইও না। ধৈর্য্যাবলম্বনপূর্ব্বক অনবরতই মন্থন করিতে থাকিবে, তাহা হইলেই তোমাদের অমৃতলাভ হইবে, সন্দেহ নাই।”