১৪শ অধ্যায়
ভীষ্মনিধনশ্ৰবণে ধৃতরাষ্ট্রের ত্রাস
ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “সঞ্জয়! বাসবসদৃশ [ইন্দ্ৰতুল্য] কুরুচুড়ামণি [কুরুকুলের মুকুটস্বরূপ] ভীষ্ম কি প্রকারে শিখণ্ডীর হস্তে নিহত হইয়া রথ হইতে নিপতিত হইলেন? যে দেবকল্প বীর পিতার নিমিত্ত [অভিপ্ৰায়ে] ব্ৰহ্মচৰ্য্য অবলম্বন করিয়াছিলেন, আমার পুত্ৰগণ সেই ভীষ্মের অভাবে কিরূপে অবস্থান করিতেছে? সেই মহাপ্ৰাজ্ঞ, মহোৎসাহ, মহাবল, মহাত্মা ভীষ্ম নিহত হওয়াতে তাহাদিগের মন কি প্রকার হইয়াছে? সেই কুরুকুলশ্রেষ্ঠ মহাবীরকে নিহত শ্রবণ করিয়া আমার মন নিতান্ত কাতর হইতেছে। হে সঞ্জয়! তিনি যুদ্ধযাত্রা করিলে কাহারা তাঁহার অনুগমন করিয়াছিল, কাহারা পুরোবর্ত্তী [অগ্রবর্ত্তী] ছিল, কাহারা তাঁহার নিকটে অবস্থান করিয়াছিল, কাহারা তাঁহার নিকট হইতে প্রতিনিবৃত্ত হইয়াছিল, কোন সকল [কোন কোন] বীর তাঁহাকে বেষ্টন করিয়াছিল এবং সেই মহারথ অরিসৈন্যে প্রবেশ করিলে কোন শৌৰ্য্যশালী পুরুষেরাই বা তাঁহার পৃষ্ঠভাগ রক্ষা করিয়াছিল? যেমন দিবাকর তমোরাশি [অন্ধকার] বিনষ্ট করেন, সেইরূপ যে মহাবীর পরসৈন্য [বিপক্ষ সৈন্য—শত্রুসেনা] পর্যাহত [বিনাশ] করিয়াছিলেন ও শক্রগণের ভয় উৎপাদনপূর্ব্বক দুস্তর [দুঃসাধ্য] কর্ম্মসকল সম্পাদন করিয়াছেন, কোন দুৰ্দ্ধৰ্ষ কৃতী [কার্য্যকুশল] আজ সেই ভীষ্মকে নিবারিত করিয়াছে? তুমি কি নিকটে থাকিয়া তাঁহাকে নিরীক্ষণ করিয়াছিলে?
“হে সঞ্জয়! পাণ্ডবগণ কি প্রকারে শান্তনুনন্দনকে সমরে নিবারিত করিল? যুধিষ্ঠির কি প্রকারে সেই সেনান্তক [সেনাগণের যমস্বরূপ—সৈন্যবিনাশক], বাণদন্ত, তরস্বী বিস্তৃতানন, ভীষণমূর্ত্তি, শত্রুসৈন্যের গ্রাসকারী, খড়্গজিহ্ব, দুৰ্দ্ধৰ্ষ, অসামান্য পুরুষবর, হ্রীমান্ [লজ্জাশীল], অপরাজিত, উগ্ৰধন্বা [ভীষণ যোদ্ধা], প্রধান রথারোহী, পরমস্তকচ্ছেদী [শত্রুর মস্তকছেদনকর্ত্তা] ভীষ্মকে নিবারিত করিল? পাণ্ডবগণের মহাসৈন্য যাঁহাকে সমরোদ্যত ও কালাগ্নির ন্যায় দুৰ্দ্ধর্ষ দেখিয়া মৃত্যুগ্রস্তের ন্যায় হস্ত-পদ বিক্ষেপ করিত; তিনি দশ রাত্র পরসৈন্যগণকে আক্রমণ ও দুষ্কর কর্ম্মসকল সম্পাদন করিয়া আদিত্যের ন্যায় অস্তপ্রাপ্ত হইয়াছেন। যে পুরুষ ইন্দ্রের ন্যায় অক্ষয় শরনিকর [বাণসমূহ] বর্ষণপূর্ব্বক দশ দিনের যুদ্ধে দশকোটি যোদ্ধা নিহত করিয়াছিলেন, তিনি আজি আমার দুষ্টমন্ত্রণায় অযোগ্যরূপে [অন্যায়ভাবে] নিহত হইয়া বাতভগ্ন তরুর ন্যায় ধরাশায়ী হইয়াছেন।
“হে সঞ্জয়! পাঞ্চালাদিগের সেনাগণ কি প্রকারে ভীষণাপরাক্রম ভীষ্মকে প্রহার করিতে সমর্থ হইল, পাণ্ডবগণ কি প্রকারে ভীষ্মের সহিত সংগ্রাম করিল, দ্রোণাচাৰ্য্য জীবিত থাকিতে, ভীষ্ম কি নিমিত্ত জয়ী হইতে পারিলেন না, ভরদ্বাজনন্দন দ্রোণাচাৰ্য্য ও কৃপাচাৰ্য্য সন্নিহিত [নিকটে বিদ্যমান] থাকিতে যোদ্ধৃপ্রধান ভীষ্ম কি নিমিত্ত নিধনপ্রাপ্ত হইলেন এবং পাঞ্চালপুত্ৰ শিখণ্ডিী কি প্রকারে দেবগণের দুরাক্রম্য সেই অতিরথ ভীষ্মকে সমরে সংহার করিল?
“যিনি সংগ্রামকালে প্রতিনিয়ত মহাবল পরশুরামের সমক্ষেও স্পৰ্দ্ধা প্রকাশ করিতেন, যিনি পরশুরামকর্ত্তৃক অপরাজিত ও ইন্দ্রের ন্যায় পরাক্রান্ত, সেই ভীষ্ম কি প্রকারে নিহত হইলেন, বল; আমরা তাঁহার মৃত্যুতে যৎপরোনাস্তি কাতর হইয়াছি। আমাদের কোন সকল মহাধনুৰ্দ্ধর ভীষ্মকে পরিত্যাগ করেন নাই? কোন সকল বীর দুৰ্য্যোধনের আদেশ অনুসারে ভীষ্মকে পরিবৃত [বেষ্টন] করিয়াছিলেন? শিখণ্ডীপ্রভৃতি সকলে যখন ভীষ্মের অভিমুখে গমন করিয়াছিল, তখন কৌরবগণ কি ভীষ্মকে পরিত্যাগ করিয়াছিল? আমার হৃদয় প্রস্তরময় ও নিতান্ত কঠিন, তাহাতে সন্দেহ নাই; এই নিমিত্তই পুরুষোত্তম ভীষ্মের মৃত্যু শ্রবণ করিয়াও তাহা বিদাৰ্ণ হইতেছে না। যে দুৰ্দ্ধৰ্ষ পুরুষ অপ্রমেয় সত্য, মেধা, অস্ত্র ও নীতির আশ্রয়, তিনি আজ কি প্রকারে নিহত হইলেন? ভীষ্মরূপ সমুন্নত মহামেঘ, মৌর্ব্বীগর্জ্জন, ধূনধ্বনিরূপ [ধনুকের টঙ্কারশব্দরূপ] পাণ্ডব, পাঞ্চাল ও সৃঞ্জয়গণের উপর বাণরূপ বারিধারা বর্ষণপূর্ব্বক দানবান্তকারী দেবরাজের ন্যায় অরাতিরথ [শত্রুর পক্ষে প্রধান যোদ্ধা] সমুদয় নিপাতিত করিয়াছেন। অস্ত্ৰসকল সাগর, শরনিকর জলজন্তু, কার্ম্মুকসকল উম্মি, গদা ও খড়্গসকল মকর, গজ ও তুরঙ্গ আবর্ত্ত, পদাতিসকল মৎস্য, শঙ্খদুন্দুভধ্বনিসকল তরঙ্গশব্দ; এই সাগরের ক্ষয় নাই; ইহাতে দ্বীপ নাই ও ভেলাও নাই; যে পরবীরবিনাশী [শত্রুপক্ষীয় বীরগণের বধকারী] ভীষ্ম তুরঙ্গ, মাতঙ্গ, পদাতি ও রথসমুদয় এই দুষ্পার সাগরে নিমগ্ন করিয়া থাকেন, যাহার কোপ অনলের ন্যায় ও যাহার তেজে শত্ৰুগণ পরিতাপিত [পরিত্যাগ প্ৰাপ্ত] হয়, বেলাভূমির সাগররোধের [তীর অতিক্রম করিয়া উপরে জল উঠিতে বাধাদানের] ন্যায় কোন সকল বীর তাঁহাকে অবরুদ্ধ [রুদ্ধগতি— আটক] করিয়াছিল?
“শত্রুবিনাশন ভীষ্ম যখন দুৰ্য্যোধনের হিতার্থ যুদ্ধ করিয়াছিলেন, তখন কাহারা তাঁহার পুরোবর্ত্তী হইয়াছিলে, কাহারা তাঁহার দক্ষিণ দিক্ রক্ষা
কিরয়াছিল, কাহারা দৃঢ়ব্রত হইয়া তাঁহার পৃষ্ঠভাগে শত্ৰুগণকে নিবারণ করিয়াছিল, কাহারা তাঁহার অগ্রভাগে অবস্থানপূ
র্ব্বক তাঁহাকে রক্ষা করিয়াছিল, কাহারা তাঁহার উভয়চক্র [অগ্রভাগ] রক্ষা করিয়াছিল, কাহারা তাঁহার বামচক্রে অবস্থান করিয়া সৃঞ্জয়গণকে বিনাশ করিয়াছিল, কাহারা অতি দুৰ্গম পুরোবর্ত্তী সৈন্যগণের পুরোভাগ রক্ষা করিয়াছিল, কাহারা অতি দুৰ্গতি ভোগ করিয়া পার্শ্বদেশ রক্ষা করিয়াছিল এবং কাহারাই বা সৈন্যদলে অবস্থান করিয়া পর-বীরগণের সহিত প্রতিযুদ্ধ করিয়াছিল? হে সঞ্জয়! বীরগণ ভীষ্মকে কি প্রকারে রক্ষা করিয়াছিল এবং বীরগণই বা ভীষ্মকর্ত্তৃক রক্ষিত হইয়া কি নিমিত্ত পাণ্ডবগণের সৈন্যগণকে পরাজয় করিতে সমর্থ হয়েন নাই? পাণ্ডবগণ কিরূপে হিরণ্যগৰ্ভসদৃশ [ব্ৰহ্মার তুল্য] ভীষ্মকে প্রহার করিতে সমর্থ হইয়াছিল?
“কৌরবগণ যে দ্বীপের [দুৰ্গম সমুদ্ররূপ ভীষ্মের] আশ্রয় গ্রহণ করিয়া শত্ৰুগণের সহিত সংগ্ৰাম করিতেছিলেন, তাহার নিমজ্জনসংবাদ [জলমগ্ন হওয়ার কথা] কহিতেছ; আমার প্রচুরবলসম্পন্ন পুত্ৰ যাঁহার বীর্য্য আশ্রয় করিয়া পাণ্ডবগণকে গণনা করিত না, শত্ৰুগণ কি প্রকারে তাহার প্রাণসংহার করিল? পূর্ব্বে দেবগণ দানবসংহারসময়ে [দৈত্যবধকালে] যে মহারথ যুদ্ধদুর্ম্মদ ভীষ্মের সাহায্য আকাঙ্ক্ষা করিয়াছিলেন, যে পুত্রের জন্মগ্রহণে ভুবনবিখ্যাত শান্তনু শোক, দৈন্য ও দুঃখ পরিত্যাগ করিয়াছিলেন, তুমি কি প্রকারে কহিতেছ, সেই ভুবনবিখ্যাত, প্রধান আশ্রয়, প্রাজ্ঞ, স্বধর্ম্মনিরত, শৌচাচারপরায়ণ [পবিত্র আচারনিষ্ঠ], বেদবেদাঙ্গের [ঋক্, যজু সাম ও অথর্ব্ববেদের এবং শিক্ষা কল্প ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ ও জ্যোতিষশাস্ত্রের] তত্ত্বজ্ঞা ভীষ্ম প্ৰাণ পরিত্যাগ করিয়াছেন? সর্ব্বাস্ত্ৰে সুশিক্ষিত, শান্ত, দান্ত, মনস্বী শান্তনুনন্দন প্ৰাণ পরিত্যাগ করিয়াছেন, শ্রবণ করিয়া বোধ হইতেছে যে, অবশিষ্ট সমুদয় বলও নিহত হইয়াছে। যখন পাণ্ডবগণ বৃদ্ধ গুরুকে বিনষ্ট করিয়া রাজ্য ইচ্ছা করিতেছে, তখন বোধহয়, ধর্ম্ম অপেক্ষা অধর্ম্মের বলই অধিক। পূর্ব্বে সর্ব্বাস্ত্ৰবিৎ [সমগ্র অস্ত্রে অভিজ্ঞ] পুরশুরাম অম্বার নিমিত্ত সমরোদ্যত হইয়া যাঁহার নিকট পরাজিত হইয়াছিলেন, পুরন্দরের সমকক্ষ ধনুৰ্দ্ধরগণের অগ্রগণ্য সেই ভীষ্মের মৃত্যুসংবাদ কহিতেছ; ইহা অপেক্ষা দুঃখের বিষয় আর কি আছে? যিনি পরবীরঘাতী [শত্রুপক্ষীয় বীরনিহন্তা] ক্ষত্রিয়ান্তকারী [ক্ষত্রিয়গণের নিঃশেষে সংহারক] জমদগ্ন্যের হস্তে প্ৰাণ পরিত্যাগ করেন নাই, সেই মহাবুদ্ধি ভীষ্ম আজি শিখণ্ডীর হস্তে নিহত হইলেন। অতএব দ্রুপদানন্দন শিখণ্ডী তেজ, বীৰ্য্য ও বলে মহাবীৰ্য্য পরশুরাম অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ, তাহাতে সন্দেহ নাই। শিখণ্ডী যখন সর্ব্বশাস্ত্ৰবিশারদ, অস্ত্রবিদ্যায় সুশিক্ষিত ভীষ্মকে সংহার করে, তখন কোন সকল বীর অনুগমন করিয়াছিল?
“হে সঞ্জয়! পাণ্ডবগণের সহিত ভীষ্মের কি প্রকার যুদ্ধ হইয়াছিল, কীর্ত্তন কর। আজি আমার পুত্রের সেনা অনাথা যোষার ন্যায়, গোপহীন গোকুলের [গোগণের] ন্যায় সাতিশয় ব্যাকুল হইয়া উঠিল। দেখ, সমরকালে সমুদয় লোকের পৌরুষ [পুরুষত্ব] যাঁহার উপর নির্ভর করে, সেই ভীষ্ম পরলোকগত হওয়াতে আমাদের মন কি প্রকার হইয়াছে! আর তিনি জীবিত থাকিতেই বা আমাদের কিরূপ সামৰ্থ্য ছিল! অগাধ সলিলে নৌকা মগ্ন হইলে যেরূপ দুঃখ হয়, বোধকরি আমার পুত্ৰগণ মহাবীৰ্য্য ভীষ্মকে নিহত দেখিয়া সেইরূপ শোকাকুল হইতেছে। পুরুষোত্তম ভীষ্ম নিহত হইয়াছেন, শ্রবণ করিয়া যখন আমার হৃদয় বিদীর্ণ হইতেছে না, তখন উহা পাষাণময়, তাহাতে সন্দেহ নাই। যাহাতে অস্ত্র ও নীতি ও মেধা অপ্ৰমেয়, আজি সেই ভীষ্ম রণক্ষেত্রে কিরূপে বিনষ্ট হইলেন? যখন শান্তনুতনয় ভীষ্ম কালগ্রাসে নিপতিত হইয়াছেন, তখন কালই মহাবীৰ্য্যসম্পন্ন ও সকল লোকের দুরতিক্রমণীয়। কেহই অস্ত্ৰ, শৌৰ্য্য, তপ, মেধা, ধূতি বা ত্যাগদ্বারা মৃত্যুর হস্ত হইতে মুক্ত হইতে পারে না; আমি পুত্ৰশোকে অভিভূত হইলেও দুঃখচিন্তা না করিয়া ভীষ্ম হইতে পরিত্রাণ প্রত্যাশা করিয়াছিলাম।
“হে সঞ্জয়! যখন দুৰ্য্যোধন ভীষ্মকে আদিত্যের ন্যায় ধরাতলে নিপতিত হইতে দেখিলেন, তখন তিনি কিরূপ হইয়াছিলেন? আমি চিন্তা করিয়া দেখিতেছি যে, আত্মীয় ও পরকীয় [পরপক্ষীয়] মহীপালগণের সৈন্য কিঞ্চিম্মাত্রও অবশিষ্ট থাকিবে না। ঋষিগণ অতি নিদারুণ ক্ষত্রধর্ম্ম প্ৰদৰ্শন করিয়াছেন, তন্নিমিত্তই [সেই জন্য] পাণ্ডবগণ ভীষ্মকে নিহত করিয়া রাজ্যাভিলাষ করিতেছেন; অথবা আমরাই তাঁহাকে নিপাতিত করিয়া রাজ্যলাভে ইচ্ছা করিতেছি। ক্ষত্রিধর্ম্মপরায়ণ পাণ্ডবগণের কিছুমাত্র অপরাধ নাই; সাতিশয় কষ্টজনক আপৎকাল উপস্থিত হইলে আৰ্য্যগণের ইহা অবশ্যকর্ত্তব্য।
“হে সঞ্জয়! পাণ্ডবগণ কি প্রকারে সেই মহাবলপরাক্রান্ত অপরাজিত [অজেয়] ভীষ্মকে প্রতিরুদ্ধ [নিবারিত] করিয়াছিল, সেনাসকল কি প্রকারে সংযোজিত [বিন্যস্ত] হইয়াছিল, মহাত্মাগণ [প্ৰবীণ বীরগণ] কি প্রকারে যুদ্ধ করিয়াছিলেন, কুরুকুলপিতামহ ভীষ্ম শত্রুহস্তে কি প্রকারে যুদ্ধ বিনাশিত হইলেন, তিনি নিহত হইলে দুৰ্য্যোধন, কর্ণ, শকুনি ও শাঠ্যপরায়ণ [শঠতায় অভ্যস্ত] দুঃশাসন কি কহিয়াছিল, যুদ্ধবিশারদ দুরাত্মা ধূর্ত্তগণ নর, বাণর [হস্তী] ও বাজি [অশ্ব] গণের শরীরে আস্তীর্ণ [বাহনার্থ সজ্জিত], শর, শক্তি, মহাখড়্গ ও তোমরসঙ্কুল অতি ভীষণ সংগ্রামসভায় [যুদ্ধক্ষেত্রে] প্রবেশ করিলে ভীষ্ম ভিন্ন আর কোন যোদ্ধারা সেই যুদ্ধরূপ প্রাণদ্যূতে [প্ৰাণপণে—জীবনের আশা ত্যাগ করিয়া] ক্রীড়া করিয়া থাকে এবং শরাবদ্ধ, নিপাতিত ও পরাজিত হইয়াও জয়যুক্ত হয়, বল? সংগ্রামভূষণ [যুদ্ধপ্রিয়—যুদ্ধনিপুণ] ভীষণকর্ম্ম ভীষ্ম নিহত হইয়াছেন শ্রবণ করিয়া আমার আর শান্তি নাই। আমার হৃদয়ে পুত্রবিয়োগজনিত [পুত্রবিয়োগতুল্য] যে শোকানল সমুথিত হইয়াছে, তুমি যেন তাহা ঘূতদ্বারা উদ্দীপিত করিতেছ। সকললোকবিখ্যাত [সমস্ত লোকে প্ৰসিদ্ধ] যে পুরুষ মহদ্ভার [গুরুভার] গ্রহণ করিয়াছিলেন, আমার পুত্ৰগণ তাঁহাকে নিহত দেখিয়া যে প্রকার পরিতাপ করিতেছে, তাহা শ্রবণ করিব। অতএব সেই সংগ্রামে যাহা কিছু ঘটনা হইয়াছে, তৎসমুদয় বর্ণন কর। দুরাত্মা দুৰ্য্যোধনের বুদ্ধিতে নীতিযুক্ত বা নীতিবহির্ভূত যাহা যাহা ঘটিয়াছে, জয়লাভসমুৎসুক [জয়লাভে উন্মুখ] কৃতাস্ত্র ভীষ্ম সকল তেজোযুক্ত কাৰ্য্য করিয়াছেন, কুরু ও পাণ্ডবসৈন্যের যে ব্যক্তি যে সমরে যাহার সহিত যে প্রকারে সংগ্রাম করিয়াছে, তৎসমুদয় নিঃশেষে কীর্ত্তন কর।”