১০ম অধ্যায়
সত্যাদি যুগের স্থিতিকাল-পরিমাণ
ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “হে সঞ্জয়! এই ভারতবর্ষ, হৈমবতবর্ষ ও হরিবর্ষস্থ সমস্ত লোকের আয়ু, বল এবং ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্ত্তমান শুভাশুভ বৃত্তান্ত বিস্তারপূর্ব্বক কীর্ত্তন কর।”
সঞ্জয় কহিলেন, “মহারাজ! এই ভারতবর্ষে প্রথমে সত্য, তৎপরে ত্রেতা, তদনন্তর দ্বাপর ও পরিশেষে কলি-এই চারি যুগ ক্ৰমান্বয়ে প্রবর্ত্তিত হয়। সত্যযুগে আয়ুঃসংখ্যা চারিসহস্ৰ বৎসর, ত্ৰেতাযুগে আয়ুঃসংখ্যা তিনসহস্ৰ বৎসর, দ্বাপরযুগে আয়ুঃসংখ্যা দ্বিসহস্ৰ বৎসর; কলিযুগের আয়ুঃসংখ্যার স্থিরতা নাই। এই যুগে প্রাণীগণ কেহ কেহ গর্ভাবস্থায়, কেহ কেহ বা জাতমাত্ৰই বিনষ্ট হইয়া থাকে। সত্যযুগে মানবগণ মহাবল পরাক্রান্ত, বুদ্ধিমান, সারবান, ধনবান, প্রিয়দর্শন হন। তাঁহাদের শতসহস্ৰ সন্তান জন্মগ্রহণ করেন, তাহারা মহোৎসাহসম্পন্ন, ধার্ম্মিক, সত্যবাদী ও তপোধন মুনি হইয়া থাকেন। ত্রেতায় প্রিয়দর্শন, দৃঢ়কায়, অসীম বীৰ্য্যসম্পন্ন, মহাধনুৰ্দ্ধর, যুদ্ধবিশারদ, চক্রবর্ত্তী মহাত্মা ক্ষত্ৰিয়গণ সমুৎপন্ন হয়েন। দ্বাপরে সমুদয় বর্ণই বীৰ্য্যবান, মহোৎসাহসম্পন্ন ও সর্ব্বদা পরস্পর জয়াভিলাষী হইয়া থাকে, এই সমস্ত হইতে মনুষ্যগণের গুণ হ্রাস হইতে আরম্ভ হয়। কলিযুগের পুরুষগণ অল্পতেজঃ, ক্ৰোধনস্বভাব, লুব্ধপ্রকৃতি ও মিথ্যাপরায়ণ হইয়া থাকে, লোকের মনে ঈর্ষা, অভিমান, ক্ৰোধ, কপটতা, অসূয়া, বিষয়ভোগে আসক্তি ও লোভপ্রভৃতি নিকৃষ্ট প্রবৃত্তির প্রাদুর্ভাব হইয়া উঠে। হে রাজন! উৎকৃষ্ট গুণশালী হৈমবতবর্ষ এবং হরিবর্ষও এইরূপ।”
জম্বুখণ্ডবিনির্ম্মাণপৰ্ব্বাধ্যায় সমাপ্ত