পদ্মার দিকে মুখ রেখে তুমি
বসে আছো
বিকেল বেলা। এইমাত্র
গীতবিতান বন্ধ ক’রে নিজের
কণ্ঠস্বরকে ভাসিয়ে দিয়েছ
বিশ্রামের মেঘে, তোমার
অভিমান ঝুলে আছে
পশ্চিমাকাশের আভায়।
আমাকে মনে না রাখার
চেষ্টায় অবসন্ন তুমি পা রাখতে
চাইছো
পদ্মাতীরের পরিকীর্ণ
বালুরাশিতে।
তোমার আলুথালু ভাবনায়
আমি খুব
লুটোপুটি খাচ্ছি; তোমার
ম্যাক্সিতে আমার আঙুলের
মাতলামি দেখে চমকে উঠছ
নিজের অজ্ঞাতে। তোমার
কাছে আমি নেই, অথচ
আমার দশটি অত্যন্ত উৎসুক
আঙুল
তোমার ম্যাক্সি আকর্ষণ
করছে তুমুল, এ কী ক’রে
সম্ভব, ভেবে-ভেবে তুমি
আকুল, হে পদ্মাপারের
তরুণী।
বাতাসে ঈষৎ আন্দোলিত
তোমার চুলে
আশ্চর্য কিছু উপমা,
তোমার মুখমন্ডলে
অনেকানেক অপরূপ
চিত্রকল্প,
তোমার বুকে, অধরে বহু
উৎপ্রেক্ষা-
সবাই একাট্রা হ’য়ে আমাকে
আমন্ত্রণ জানায়
পদ্মাতীরে, যেখানে এক দারুণ
শুষ্কতায় আমার
স্বপ্নেরা তোমার পদ চুম্বনের
আশায়
উড়তে থাকে গাংচিলের
মতো। তোমার নিশ্বাস,
হৃৎস্পন্দন, পদছাপ, রাতের
মতো চাউনি, নিঝুম তন্দ্রা,
ভোরবেলার জাগরণ,
সন্ধ্যাকালের গীতধারা
আমার কবিতাকে নিয়ে যায়
করুণ রঙিন পথে,
আমাকে পূর্ণ ক’রে তোলে
বার বার।
তোমার হৃৎগোলাপে আমার
কামনার চাতক
মুখ রেখে আবৃত্তি করে,
‘ফটিক জল, ফটিক জল।‘
এই মুহূর্তে তুমি পদ্মাতীর
থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে
এক শহুরে বিবর্ণ বিপন্ন কবির
দিকে তাকাও,
তার কাতর আঁজলা ভ’রে
দাও তৃষ্ণার জলে,
যার শিরার প্রতিটি রক্তকণিকা
মনসুর হাল্লাজের
নিমগ্ন রক্ত বুদ্বুদের মতো
উচ্চারণ করছে-
আমিই ঐশ্বর্য, আমিই ঐশ্বর্য।
৮.৩.৯৪