শীতের ঝাঁজ অনেকটাই কমে গেছে, এখন শুধু
ফতুয়া পরলেই আরাম। ঘরের শাদামাঠা
পোশাকে বসেছিলাম বারান্দায়, গলির
রাধাচূড়া গাছে দৃষ্টি ছড়ানো। কান পেতে আছি
কোকিলের গানের উদ্দেশে। সূর্য ডোবার আগে হঠাৎ
আমার লেখার খাতা থেকে একটি কবিতা উঠে এসে
দাঁড়ায় পাশে; ওর দিকে তাকাই প্রশ্নাকুল।
আমার চোখে চোখ রেখে সে বলে, তোমার কি মনে পড়ে
অনেক আগে তুমি এক ঝকঝকে ভোরবেলা গলির মোড়ে
হাজির হয়েছিলে কী একটা ম্যাগাজিন
কেনার জন্যে? খানিক দূরে বাসস্টপের কাছে
তোমার সঙ্গে আমার হঠাৎ দৃষ্টি বিনিময়, মনে পড়ে?
বিদ্যুল্লতার মতো ক্ষণিক ঝলসে উঠে
কোথায় মিলিয়ে গেলাম, তুমি বুঝতে পারনি। তোমার ভেতর
কী যেন ঘটে গেল, প্রায় বিড়বিড় করতে করতে
গলি পেরিয়ে নিজের ঘরে পৌঁছে গেলে। আমাকে
দেখা না দেখার ভাবনা কুয়াশা হয়ে
ছড়িয়ে পড়ে তোমার শিরায় শিরায় হৃৎস্পন্দনে।
ক’দিন পর এক সন্ধ্যারাতে পুরোপুরি ধরা দিলাম
তোমার ব্যাকুলতার কাছে; আমরা দু’জন
এক হয়ে গেলাম কথা ও সুরের সফল মিলনের মতো।
সেই মুহূর্তে তুমি যেন এক দেবদূত। তোমার দু’টি চোখ
সহস্র চোখ হয়ে আমাকে দেখছিল অনাবিল মুগ্ধতায়, যেমন
প্রসূতি দেখে নবজাতককে। তুমি উচ্চারণ
করলে, ‘পদ্মার তরুণী ইলিশের মতো
মসৃণ, উজ্জ্বল তোমার ত্বক, জ্যোৎস্নাস্নাত গোলাপের মতো
তোমার হৃদয়। অথচ নিন্দুকেরা অষ্টপ্রহর রটায়
কুরূপা তুমি, তোমার ত্বক
লোলচর্ম বৃদ্ধার মতোই ছড়ায় ভাগাড়ের দুর্গন্ধ,
তুমি নাকি ডাস্টিবিনে ফেলে-দেওয়া ঝালমুড়ির ঠোঙা।
কবিতা আঁচলে আঙুল ছড়িয়ে কিছুক্ষণ গুন্গুনিয়ে বলে,-
আমার পরিণতি তোমাকে দুর্ভাবনার কালো মেঘে ঢেকে ফেলুক, চাই না।
আখেরে কালের এজলাসে নির্ধারিত হবে তা। এখন দেখ,
কখনও টাঙ্গাইলের জামদানি, কখনও
রাজশাহী সিল্ক গায়ে আমার আসা-যাওয়া, আবার
কখনও কী সহজে নগ্ন হেঁটে যাই পূর্ণিমা-ছাওয়া বালুচরে।
আমাকে দেখা যায় ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে,
কখনও তরুণ তরুণীদের নন্দনতত্ত্ববিষয়ক আসরে,
কখনও সাম্প্রদায়িক্তা-বিরোধী মিছিলে।
কখনও আবার ডুবে শাড়ি-পরা আমাকে
দেখা যায় তোমার পিতৃপুরুষদের পাড়াতলী গাঁয়ের বিকেলে
হল্দে প্রজাপতিময় সর্ষেক্ষেতের আলে, রাতের দিঘির নিঝুম ঘাটে।