হঠাৎ আজ বিকেলে চারদিকে অন্ধকারে ডুবিয়ে
বৃষ্টি এলো। শত শত আরবি ঘোড়ার পদশব্দে মনে পড়ল তোমাকে
আর মনে এলো অনেক বছর আগেকার কথা।
তখন আমি কৈশোরের বেড়া-ডিঙানো যুবা এবং
আমার বাবা ছিলেন জীবিত। আমি কোনো কোনো বিকেলবেলা
বিছানায় গা এলিয়ে, হাতের তালুতে থুৎনি রেখে
বাঈজির ঘুঙুরের মদির আওয়াজের মতো
বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে তাকিয়ে থাকতাম বাইরে। এই দৃশ্য
অসহ্য ছিল বাবার কাছে। বিরক্তির হুলে কাতর তিনি ভাবতেন-
তাঁর ছেলেটার মাথায় শ্রাবণের আকাশ আর
বৃষ্টির অজস্র বিপজ্জনক জুঁই ঢুকে পড়েছে। আজো আমি
বাবার বর্ষাকালীন চোখের আগুন ভুলতে পারিনি।
আজ অন্ধকারময়, সপসপে বিকেলে বৃষ্টিপাত দেখে যুগপৎ
আমার বাবার চোখের ফুলকি এবং
তোমার দৃষ্টির বিদ্যুৎ মনে পড়ল। আমার
প্রয়াত পিতা আজকের দৃশ্য থেকে তাড়াতাড়ি দূরে
সরে দাঁড়ালেন তোমাকে প্রধান ভূমিকা দান করে। এই উতল হাওয়ায়
এখন তুমি আমার একার, একাকিত্বের অধীশ্বরী।
বৃষ্টির অন্তরঙ্গ সুর শুনতে শুনতে দেখি এইমাত্র গোসল সেরে
তুমি এসে দাঁড়িয়েছ আমার
শয্যার পাশে, চুলের ভেজা সুগন্ধে আমি মাতাল,
তোমার চুলের ঝর্নাধারা আমার সারা মুখে আর তুমি
আমার মুখ চুম্বন করছ আমাকে মহিমার চূড়ায় পৌঁছে দিয়ে। বৃষ্টি
গেছে থেমে; এখন ঘরে নীরবতা
আমজাদী সরোদের সুর। কোথাও তুমি নেই।
শীতল জলে গা ধুয়ে
তুমি আদৌ আসোনি আমার কাছে। এভাবে
আসবেও না কোনোদিন। আমাকে এই মুহূর্তে বৃষ্টিহীনতায়
শাসন করছে আমার বাবার বর্ষাকালীন চোখের আগুন;
জলজ অন্ধকারে একলা ঘরে আমি ভীষণ পুড়ে যাচ্ছি।
২৫.৫.৯৪