স্বপ্নেরা ডুকরে ওঠে বারবার

এবারও সে, ফয়সল, আসেনি, অথচ কথা ছিল
আসবে, বসবে নকশাময়, রঙচটা
খাটে আর
ধরবে সস্নেহে হাত বর্ষীয়ান মহিলার, সতৃষ্ণ তাকাবে
আড়চোখে গৃহকোণে দাঁড়ানো সুন্দরী
তরুণীর দিকে, চশমার কাচ মুছবে খানিক
সফেদ রুমালে,
পানি খেতে চেয়ে গ্লাস ধরবার ছলে
এক ফাঁকে ছুঁয়ে নেবে তার কম্পিত আঙুল যার
ঈষৎ সবুজ
শালের আড়ালে মূক হয়ে আছে প্রগলভ যৌবন, খোলা ছাদে
বলবে অনেক কথা তরুণীর কানে কানে, চুমো
খাবে তাকে খইয়ের যতন
নক্ষত্র ছিটানো আকাশের নিচে স্পন্দিত শরীরে।

না, এসব কিছুই ঘটেনি এই শীতে। ফয়সল কথা দিয়ে
আসেনি নিষ্প্রভ ঘরে। অসুখের খর
জিভ চেটেপুটে
খেয়েছে বেবাক পলস্তারা, দেয়ালের কুলুঙ্গিতে
ব্যর্থতা নিয়েছে ঠাঁই, হতাশা মৌরসীপাট্রা পায়
বিবর্ণ খিলানে। সাধাহ্লাদে ভরপুর
স্বপ্নেরা ডুকরে ওঠে বারবার তৃতীয় প্রহরে
রবীন্দ্রনাথের
ক্ষুধিত পাষাণে অতীতের রূপসীরা যে-রকম। কৃষ্ণসার
হরিণেরা তন্বীর হাতের তেলো থেকে
আকাঙ্ক্ষার তৃণ মুখে নিয়ে
পলাতক বহুদূরে। সিংহভুক্ত হরিণের ভগ্নাংশের মতো
জায়গায় সে বসে থাকে বড় একাকিনী।

নিঃশব্দে সকাল-সন্ধ্যা প্রতীক্ষায় কাটায় সময়
ঝিঁ ঝি-ডাকা রাতে

হ্যারিকেন হাতে ঠায় সে দাঁড়িয়ে থাকে,
পাছে ফয়সল ফিরে আসে
প্রতিশ্রুতি রক্ষার তাগিদে ডাকিনীর
ছড়ানো চুলের মতো অন্ধকারে। নির্বিকার পথ অকস্মাৎ
কেমন নির্দয় আর ব্যঙ্গপরায়ণ হয়ে ওঠে,
তবু সে তরুণী সরায় না
চোখ পথ থেকে, রূপ তার অন্ধকারকে পরায়
অপরূপ সৌন্দর্যের সাজ।

ফয়সল কিংবা তার মতো অন্য কেউ
তারা কি কখনো কথা দিয়ে ফিরে আসে কোনও দিন?