বুড়োটা বিরাট এক মাছের কংকাল টেনে টেনে ক্লান্ত হয়ে
জলজ স্মৃতির ভারে স্বপ্ন দেখেছিল
সমুদ্রের তীরে তীরে ঘুরে-বেড়ানো সিংহের।
এমন একটি স্বপ্ন চাই, অভ্রঝরা বিশাল প্রান্তরে যার
তুমিই থাকবে শুধু, তুমি।
অথচ আমার স্বপ্ন হায়রে সে কোন্ চোরা নিয়ে গেছে
সিঁদ কেটে অকস্মাৎ। আমি স্বপ্ন-তাড়ুয়ার পেছনে পেছনে
ঘুরে মরি দিনরাত; তোমাকে দেখার জন্যে ভাদ্রের রৌদ্রেও
ফেঁপে-ওঠা জনসমুদ্রের প্রতিটি তরঙ্গে ভাসি,
স্বপ্নে সমুদ্রের তীরে সোনালি বালিতে
সিংহের পায়ের ছাপ খুঁজি না কখনো।
নিদ্রার বাগানে কোনো হরিদ্রাভ ডাল ধরে তুমি
ইমন কল্যাণে ভরে ওঠো কানায় কানায়, চাই।
আপাতত আমি স্বপ্ন-তাড়ুয়ার হাড্ডিসার হাতে
খাচ্ছি মার বারবার। কখনো-সখনো
ঘুমঘোরে আওড়াই স্বপ্নহীনতায়
কে বাঁচিতে চায় হে কে বাঁচিতে চায়?
আমি টোটো কোম্পানির একজন, ঘুরি ফুটপাতে,
কুলীন রাস্তায় ব্যাপ্ত চৌমাথায়, কলোনিতে, শেডে;
পকেটের উজাড় বিবর থেকে দুমড়ানো, ম্লান
প্যাকেটটা বের করে বগা ফুঁকে বিরক্তিকে হাওয়ায় ওড়াই,
কখনো আবার
ভিড়ে যাই বাস-ভাড়া-কমানোর দাবির মিছিলে,
কখনোবা খবরের কাগজের অন্তঃস্তল ফুটো করে গোল
চাঁদ দেখি চুপিসারে। মনে পড়ে অতীতের মুখ; দিনগুলি
সাহানা দেবীর গাওয়া রবীন্দ্রনাথের
গানের মতোই মনে হয়, কেমন সুদূর, হু-হু-
মীড়ে মীড়ে, কখনো গমকে ভরপুর। মনে পড়ে,
ভোরবেলাকার হাসপাতালের করিডরে
নার্সদের আগাগোনা, শাদা হাঁস কজন ব্যস্ততা-ঝলসিত।
কী করে নিজের দেখাশোনা করা চলে
ভালোমতো, তাওতো শিখিনি।
অথচ পাখিও বাসা আজীবন গোছগাছ করে
রাখে আর রৌদ্রের ছটায়
খড়কুটো দিব্যি মুকুটের মতো হয়ে যায়। দ্যাখো আমি শুধু
থপথপে ফুটপাতে ঘুরি, নির্জন পার্কের মতো এই বুক
খবর কাগজে ঢেকে বিবর্ণ চাটাইয়ে শুই আর
মধ্যে মধ্যে ঘুমঘোরে আওড়াই স্বপ্নহীনতায়
কে বাঁচিতে চায় হে বাঁচিতে চায়?