বন্ধু, আমাদের যাত্রা ছিল নাকি নম্র আর বিনীত?
দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার রসদ ছিল কি ছিল না, ভেবে দেখিনি
একবারও; রক্তের ভেতরে কী এক ময়ূর
পেখম মেলেছিল, নূপুরের ধ্বনি তুমুল বেজেছিল
চিদাকাশে, রং বেরঙের পাখি আমাদের যৌবনকে
অপার স্নেহে দিয়েছিল সুরের ছায়া এবং
চৌদিকে নেমে-আসা ধোঁয়াশাতেও
আমাদের দৃষ্টি ছিল সর্বদা সমুখে নিবদ্ধ।
ধর্মীয় উন্মাদনার ঢাকের প্রবল আওয়াজ কখনো
আমাদের টানেনি, সাম্প্রদায়িকতার
দন্ত-নখর ভাঙার শপথ আমরা নিয়েছিলাম
যাত্রালগ্নেই, জঙ্গি পুরুত আর মোল্লাদের হিংস্র চিৎকার
আর প্রাণ সংহারের হুমকি উপেক্ষা করে
আমরা ভালোবাসেছি লালন ফকির এবং রবীন্দ্রনাথের গান।
আমাদের জীবন থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছে
রাঙা রোদ; অতিক্রান্ত যৌবনের দিকে আজ তাকাই
মাঝে-মধ্যে, যেমন পিতা দৃষ্টি দেন পুত্রের প্রতি।
বন্ধু, আমার মনে পড়ছে সেই সদ্য যুবক তোমাকে, যে-তুমি
বিউটি বোর্ডিং-এর এক কোণে একটি টেবিলে বসে লিখতে
গল্প, উপন্যাস আর কখনো সখনো কবিতা।
সেখান থেকে তোমার লেখার খাতা গুটিয়ে নিয়ে
সবার অগোচরে কখন যে তুমি কাসবা, লাসানি, বেক্স, মিরান্ডা
ছেড়ে প্রবেশ করলে তোমার গুলশানের নিজস্ব স্টাডিতে
মনেই পড়ছে না। এখন তুমি স্থুলোদর ঝর্ণাকলম
কিংবা বলপেন ব্যবহার করো না, শুনি; পড়েছিও
তোমার কোনো কোনো লেখায়। এখন তোমার
সৃজনশীল আঙুলগুলো
কম্পিউটারে ক্রীড়াশীল, তোমার মেধা আর
সেই যন্ত্রের যুগলবন্দিতে রচিত হচ্ছে গল্পের বর্ণনা,
কাব্যনাট্যের সংলাপ আর কবিতার পঙ্ক্তিমালা।
বন্ধু, এই যে আজ তুমি অজস্র পুষ্পসম্ভারের মাঝখানে বসে
নিজেকে ভাবছ এক সব্যসাচী, তুমি জানো
এ তোমার মেধা, শ্রম ও নিষ্ঠারই উপহার। তোমার
বহুমুখী প্রস্রবণে স্নাত আমরা মুগ্ধাবেশে
চেয়ে আছি তোমার সাফল্যের স্বর্ণচূড়ার দিকে এবং
ভাবছি, আমাদের যাত্রা ছিল নম্র আর বিনীত।
কাঁটাতারের বেড়া ছিল, নানা চোরাবালি,
কিন্তু আমাদের চোখে ছিল দুর্মর
স্বপ্নের স্ফুটনোম্মুখ কুঁড়ি, আমাদের সর্বক্ষণ
পথ দেখিয়েছে মানবিক বোধের
রাহবার জ্যোতি; আমাদের পায়ে যত বেড়িই পরানো
হোক না কেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল স্থির
আর কালপুরুষকে এই ভূখণ্ডে নামিয়ে আনার
কেশর-স্ফীত স্পর্ধা ছিল আমাদেরই।