তোমাকে লিখি না চিঠি অথবা করি না টেলিফোন।
কেননা সম্প্রতি
সে নিবাসে তুমি আছো কিনা
তাও-তো জানি না
এবং তোমার দেখা মেলা
ভার এ শহরে ইদানীং।
মনে পড়ে, তোমাদের বাগানে একদা
সন্ধ্যায় আমাকে
একটি গোলাপ দিয়ে বলেছিলে তুমি-
‘এর বুক থেকে দেবদূতদের গান ভেসে আসে। তোমাকে যে
ভালোবাসি তাতে নেই তিলার্ধ সংশয়, তবু তোমার সকল
উক্তিতে জোগাবো সায়, এমন সরলমতি কোনো
লোক নই; পটু অভিনেতার ধরনে
সন্ধ্যার আকাশে আমি ধ্রুবতারা খুঁজি অন্যমনে।
সে গোলাপ নিয়ে স্মিত চোখে তাকালাম, কিছুই না ব’লে
করলাম ভান, যেন কান পেতে আছি। তুমি কিছু
বুঝলে কি বুঝলে না,
আমাকে দাওনি পেতে টের। তোমাকে নিবিড় ছুঁয়ে
যখন বললাম, ‘বলো ভালোবাসো কিনা,
গভীর তাকালে তুমি; তোমার দু’চোখ
আশ্চর্য বাঙময় হয়, যেন বলে, ‘আমাকে বিশ্বাস
করো তুমি কতটুকু?’ নিরুত্তর আমি।
ঝড়ে কম্পমান, তছনছ-হয়ে-যাওয়া তার নীড়টিকে
যেমন বিশ্বাস করে পাখি,
ঠিক তেম্নি বলি মনে মনে।
ঘরে ফিরে গোলাপের শোভা দেখি চোখ ভ’রে, শুঁকি
বারবার। ভাবি,
যদি গোলাপের বুক থেকে বাস্তবিক ভেসে আসে
দেবদূতদের গান? আমার ভেতরকার ঘোর
অমাবস্যা হেসে ওঠে। অন্যমনস্কতা কখন যে
গোলাপের পাপড়ি সমুদয় ছিঁড়ে ছিঁড়ে
হাওয়ায় উড়িয়ে দেয়, করিনি খেয়াল। অকস্মাৎ
বুকের ভেতর তীক্ষ্ণ কাঁটা কর্কশ গজিয়ে ওঠে।
রাত তিনটায় ঘুম ভেঙে গেলে, তোমার উদ্দেশে
কবিতা লিখতে বসি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি অক্ষরে
অন্ধ এক দেবতার বুক থেকে ফোঁটা
ফোঁটা রক্ত ঝ’রে পড়ে। যদি কোনোদিন
তোমাকে এ-কথা বলি, তুমি কি তখন
শব্দগুচ্ছটিকে অবিশ্বাসী সুরে অসত্যের ঘাটে নিয়ে যাবে?