পরিতোষ সেন শ্রদ্ধাস্পদেষু
ঐন্দ্রজালিকের ভোজবাজি নয় আদৌ বাস্তবিকই
আছে, জলজ্যান্ত, বসে আছে
বড় একাকিত্বে মাথা উঁচিয়ে নিশ্চুপ। ছুঁতে পারি
হাত বাড়ালেই, গৃহকোণে
অনেক পুরোনো
কাঠের চেয়ার ধ্যানী, কে আসে কে যায় লক্ষ নেই,
নিত্যদিন বসে থাকে
নিজস্ব সম্ভ্রম নিয়ে। ভাবি খুব ঝাঁকে
তাজিমে কুর্ণিশ করি তাকে বার বার; মনে হয়
আমাকে পছন্দ করে, কোনো কোনোদিন হাত নেড়ে কাছে ডাকে।
কখনো গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি কবেকার
আহত স্বপ্নেরা
তার কাছে যায় ক্রাচে ভর দিয়ে কিংবা হুইল চেয়ারে।
তার সঙ্গে আছি বহুকাল
একই ঘরে, কত স্মৃতি টাঙিয়ে দিয়েছি
তার গায়ে, তাকে
বোঝার আশায় আমি কাছে যাই, খানিক দাঁড়াই
নিরিবিলি, অথচ বসি না কোনোকালে।
একটি রুমাল, দেশলাই, মোমবাতি, বলপেন
চেয়ারে রয়েছে, যেন কেউ এই মাত্র উঠে গেছে
শূন্যতা গচ্ছিত রেখে, হয়তো আবার বসবে এসে
চুপচাপ, টানবে পাইপ,
রুমাল বুলিয়ে মুছে নেবে
কপালের ঘাম আর কাটাবে সময় অন্তর্গত
কত সুর্যমুখী, কাকময় শস্যক্ষেত,
গহন সন্ধ্যার স্পর্শলাগা পাখি, গাছগাছালির ভাবনায়।
মনে নেই, কতকাল এ চেয়ার বাশিন্দাবিহীন
পাখির বাসার মতো আছে
গৃহকোণে, আছে
আমার আত্মার অভিভাবকের মতো,
কখনো কখনো যেন অতিশয় গাঢ় কণ্ঠস্বরে
শুধায় আমাকে ‘সারারাত
নির্ঘুম কাটিয়ে ফের ভোরবেলা সাত তাড়াতাড়ি
কোথায় চলেছো?
কোথায় চলেছি আমি? কী দেবো জবীব?
কোন্ চোরাবালি গিলে খাবে
আমাকে, কেমন
গোলকধাঁধায় পথ হারিয়ে ফেলবো
যাত্রা শুরু না হতেই? কোন্ শত্তুরের
গলা আমি জড়িয়ে ধরবো নির্দ্ধিধায় মিত্র ভেবে?
দেখবো কি গুপ্তহত্যা, গণহত্যা? বুকের পাঁজর
কখনো কি ঝলসে উঠবে অস্ত্র হয়ে?
জানা নেই, শুধু জানি,
কোনো কোনো এমন চেয়ার আছে শূন্য থাকে, থাকে চিরদিন।