আমি যে যুবক নই আর, পদে পদে বিলক্ষণ
টের পেয়ে যাই, তাই আয়নার মুখোমুখি হ’লে
নিজের চেহারা দেখে ভীষণ চমকে
উঠি, প্রশ্ন করি-
কে এই লোকটা? আজ এই ভোরবেলা
আমার শোবার ঘরে কী ভাবে প্রবেশ করেছে সে
কারো অনুমতি ছাড়া? যতদূর জানি, এ বাড়ির
কেউ তাকে এই ঘরে ঢোকার দেয়নি অনুমতি।
বুড়োসুড়ো এই লোক শীতের প্রতাপে
বড়ই কাতর, মনে হয়। মুখের চামড়া তার
ভীষণ কুঁকড়ে গেছে, মাথার ক্ষয়িষ্ণু চুল যেন এক রাশ
কাশফুল, চোখ দু’টি ঈষৎ নিষ্প্রভ। এই মাঘে
লোকটাকে, বাড়ির বাইরে তাড়ানো কি
মানবিক আচরণ? এই ঘর থেকে
বাড়ির আলাদা কোনও ঘরে বসানো উচিত হবে,
গরম চা আর এক বাটি মুড়ি দেয়া যেতে পারে।
এসব কী বলছি দাঁড়িয়ে আয়নার
সম্মুখে এমন হাড়-কাঁপানো শীতের ভোরবেলা? হায়, আমি
নিজেকেই অন্য কোনও লোক ভেবে নিয়ে এতক্ষণ
আবোল তাবোল বকে গেছি বাঘ-তাড়ানো মাঘের
হিমায়িত প্রভাতী প্রহরে। কম্পমান আমি শীতের দংশনে
এবং চকিতে চিন্তা ধাবমান দুঃখিনী বাংলার
দুর্ভিক্ষ-পীড়িত এলাকায় যেখানে মানব, মানবীর প্রাণ
শীতের পাতার মতো ঝরে যায় বনি আদমের অগোচরে!