স্বপ্নে দেখলাম, মেহগনি কাঠের টেবিলে ঝুঁকে
লিখছি তন্ময় আমি বিশ শতকের সর্বশেষ কবিতা আমার
শিরোনামহীন। এ কবিতা ভিলানেল
নাকি সেসটিনা? এর ছন্দ
সংহত অমিত্রাক্ষর অথবা মরুভূমির বুকে
উটের যাত্রার মতো গদ্যের দুলুনিয়ম-কিছুই স্মরণে
নেই, শুধু মনে পড়ে
কী দ্রুত চলেছি লিখে একটানা, যেমন কর্মিষ্ঠ, অনলস
মাঝি গুণ টানে পাড়ভাঙা
নদীর কিনারের ধুনকের বাঁকানো ছিলার অবয়বে।
কলমের নিব সারসের, চষ্ণু, অবলীলাক্রমে
গেঁথে নেয় মাছ,
কখনো পালক খোঁটে উড্ডয়নপ্রিয়
স্বপ্নময়তায়, কখনো বা তাকায় চরের দিকে,
পানিতে নিজের ছায়াটিকে ভালোবাসে, কিছুক্ষণ।
স্বপ্নে দেখলাম, সর্বশেষে কবিতা আমার কুয়াশায় ঘেরা
স্টিমারের ডেক,; কতিপয় ছায়া করে আসা-যাওয়া,
রেলিঙে হেলান দিয়ে কেউ ঢেউয়ের মাস্তানি দ্যাখে,
কেউ ডেক চেয়ারের
আশ্রয়ে সায়ান্স ফিকশন হাতে ঝিমায়, কেউবা
পুরুটের ছাই ঝাড়ে, খালাসী তাতারি নাচে মাতে। অকস্মাৎ
হরিণের কাটা মুণ্ডু, পোড়া গন্ধময় মোমবাতি
এবং স্থলিত আংটি, ছুরি ডেকে গড়াগড়ি যায়।
বিশ শতক সর্বশেষ
কবিতা আমার ভূর্জপত্রে কালিদাসী হস্তাক্ষরে গড়ে ওঠে,
আবার লাইনো টাইপের ছাঁদে, কিছু রাবীন্দ্রিক
মায়া লেগে থাকে, পিছুটান মৃত বিহঙ্গের মতো
গলায় দোদুল্যমান। তুলোট কাগজে অক্ষরের পরে কত
অক্ষর সাজাই সুশৃঙ্খল, কিন্তু সব ওলট পালট হয়ে যায়,
পংক্তিমালা গায়েব এবং বালিয়াড়িময় পড়ে থাকে
উটের গলিত চোখ, খুলি বিধ্বস্ত বেহালা আর ছেঁড়া তসবিহদানা।
বিশ শতকের সর্বশেষ কবিতায়
সুচেতা দাঁড়ায় এসে খোলা চুলে, মেহগনি কাঠের টেবিলে
বসে পা দোলায় ঘন ঘন, পরনে গাউন তার, কথা বলে
অবোধ্য ভাষায় আর তার দিকে লক্ষ লক্ষ শীর্ণ হস্তধৃত
শূন্য থালা, সে বিহ্বলা, ব্যর্থ অন্নপূর্ণা লহমায়
উধাও এবং আমি ভীষণ পদদলিত, হাতে
ছোঁড়া পাণ্ডুলিপি; একটি বেড়াল, কালো, চুকচুক
চাটে শূন্যতাকে দুধ খাওয়ার ভঙ্গিতে।
স্বপ্নে দেখলাম, মেহগনি কাঠের টেবিলে বসে
কবিতা আমার আজরাইলের সঙ্গে পাশা খেলে, মাঝে-মাঝে
জেনে নিতে চায় কত ব্যাপ্ত জ্ঞানের বলয় আর
সুবিশাল ছত্রাকের মতো কী যেন ছড়িয়ে পড়ে দশদিকে।
সর্বশেষ কবিতা আমার তেজস্ক্রিয় আবর্জনা-স্তূপ থেকে
আবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠে আর বিশ শতকের
শেষ সূর্য রশ্মির চুম্বন খেতে খেতে বেহুলার ভেলার মতন যায়
ভেসে যায় উথাল পাথাল গাঙ্গুড়ের ঢেউয়ের ঢেউয়ের।