নিম্নোক্ত কাব্যগ্রন্থগুলি সাজানো হয়নি

শতাব্দী এবং একটি পাখি

শতাব্দী শারদ ভোরে বারান্দায় নিজের মনের সঙ্গে
খেলছিল কী মধুর খেলা। বাস্তবিক
সে নিজেই জানে না কিছুই
তার মনো-ক্রীড়ার ব্যাকরণ।

সোফাটায় এলিয়ে শরীর বসে থাকে
চুপচাপ, সোনালি পায়ের কাছে লুটোপুটি খায়
বিশ্বের খবর, দ্যাখে বারান্দায় কাছের গাছের
ডালে এক হলুদ রঙের পাখি দোল
খেয়ে ভোরটিকে সুরময় করে তোলে
অজানা আনন্দে। শতাব্দীর হৃদয়ের তন্ত্রীমালা
বেজে ওঠে; চকিতে সে পাখিটিকে দিকে
চোখ রেখে প্রেশ্ন করে, ‘কবি কি আসবে আজ ভোরে?’

পাখি বুঝি শতাব্দীর ব্যাকুলতা বুঝে নেয় নিজের রীতিতে,
বলে সুর তোলে-
‘এই তো এসেছি আমি তোমার কবির দূর হয়ে। হায় মেয়ে,
তুমি তো জানো না, কাল সারারাত কবি
বিছানায় এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দিয়েছে নিদ্রাহীন। কাঁটাবনে
ঘুরে ঘুরে আহত হয়েছে তার শরীর, হৃদয়। নিশীথের
তৃতীয় প্রহরে, শোনো শতাব্দী, তোমার সুরক্ষিত
নিবাসের চারপাশে দীর্ঘশ্বাস বিছিয়ে দিয়েছে
কবি, তুমি ঘুমের নরম মেঘদলে ভাসমান
সে সময়। এ সকালে একবার কাছে ডেকে নাও, আসবে সে
ছুটে নগ্ন পায়ে, রুক্ষ বেশে, উস্‌কো-খুস্‌কো চুলে,
তুমি ওকে কোলে মাথা খানিক রাখতে দিও, হে সুন্দরীতমা।

‘তুমি তো জানোই পাখি,’ শতাব্দীর কণ্ঠস্বর ছোঁয়
হলুদ পাখিকে, আমি আমার প্রতিটি
মুহূর্ত সাজিয়ে রাখি কবির উদ্দেশে, আমি তার
পথ চেয়ে থাকি, তার জন্যে এ হৃদয়ে
সময় কি অসময় নেই, কিন্তু বড়ই নির্দয়

জগৎ-সংসার; করাতের মতো কেটে ফেলে
প্রকৃত মিলন বেলা। ইচ্ছে মতো ডেকে নেব কাছে,
কী করে সঞ্চয় করি সে সাহস, হে পক্ষী, তুমিই বলে দাও!
মাঝে-মধ্যে কী-যে হয়, কেউটের মতো
এক প্রশ্ন ফণা তোলে-কবি কি আমাকে প্রকৃতই
ভালোবাসে? না কি
এ এক মোহন খেলা ওর? হে পাখি জবাব দাও’।

হল্‌দে পাখি শতাব্দীর কানে কানে বলে-
‘ভালোবাসা বলে কাকে, তা আমার অজানা, অথচ
ঠিক জানি, কবির রক্তের প্রতি ফোঁটা
কেবলি তোমারই নাম করে উচ্চারণ। আরো বলি,
এই যে তোমাকে সাত সকালে দেখছি আমি, তা-ও
কবিকে করবে ঈর্ষাতুর। আমি এই মাত্র দেখে
এসেছি, সে তোমাকে ভেবেই অন্তর্গত
যন্ত্রণাকে কবিতায় করছে তর্জমা।
২১.৯.৯৪