ওল্ড স্টেটমেন্ট
নিউ স্টেটমেন্ট
1 of 2

রাজাবলি ১ – ০৭

১ রাজা শলোমন তাঁর নিজের জন্য একটি রাজপ্রাসাদও বানিয়েছিলেন। প্রাসাদটি বানাতে ১৩ বছর সময় লেগেছিল।
২ এছাড়াও তিনি “লিবানোনের বাগান” নামে একটি বাড়ি বানিয়েছিলেন। এই বাড়ীটির দৈর্ঘ্য ছিল ১০0 হাত, প্রস্থ ৫০ হাত ও উচ্চতা ৩০ হাত। বাড়ীটায এরস কাঠের চারসারি স্তম্ভ ছিল। স্তম্ভগুলির মাথায় কাঠের আচ্ছাদন ছিল।
৩ স্তম্ভের শীর্ষভাগে ছিল সারি সারি কড়ি বর্গা। আর তার ওপর ছাদের জন্য এরস তক্তা বসানো হয়েছিল। একেকটি স্তম্ভের ওপর ১৫টি কড়ি মিলিয়ে মোট ৪৫টি কড়ি বসানো ছিল।
৪ প্রত্যেকটি ধারের দেওয়ালে তিন সারি করে মুখোমুখি জানালা বসানো ছিল।
৫ প্রত্যেক সারির শেষে দরজা ছিল। দরজাগুলোর মুখ এবং কাঠামো ছিল চার কোণা।
৬ এছাড়া শলোমন ৫০ হাত লম্বা ও ৩০ হাত চওড়া একটি “ঝুলন্ত বারান্দা” বানিয়েছিলেন। বারান্দার সামনে একটা ছাদ ছিল য়েটা অনেক থাম বা খিলানকে অবলম্বন করেছিল।
৭ লোকের বিচার করার জন্য শলোমন একটি “বিচার কক্ষও” বানিয়েছিলেন। এই ঘরের আগাগোড়া এরস কাঠে মোড়া ছিল.
৮ শলোমনের নিজের বাসগৃহটি এই বিচারকক্ষের ভেতরে ছিল। এই গৃহটি বিচারকক্ষের মতোই ছিল। তিনি তাঁর স্ত্রী, মিশরের রাজার মেয়ের জন্যও একই রকম একটা গৃহ বানিয়ে দিয়েছিলেন।
৯ প্রত্যেকটি বাড়ী মূল্যবান পাথরে তৈরী হয়েছিল। বিশেষ এক ধরণের করাতের সাহায্যে প্রথমে পাথরগুলোকে সঠিক মাপে সামনে ও পেছনে কেটে নেওয়া হত। একেবারে বাড়ির ভিত থেকে দেওয়ালের মাথা পর্য়ন্ত এইসব দামী পাথর বসানো হত। এমনকি উঠোনের চারপাশের দেওয়ালগুলোও এই সমস্ত দামী পাথরে বানানো হয়েছিল।
১০ বাড়ির ভিতগুলো য়ে সমস্ত বড় বড় দামী পাথরে বানানো হত সেগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল ১০ হাত এবং কয়েকটি ছিল ৮ হাত।
১১ ঐসব পাথরের ওপর ছিল অন্যান্য মূল্যবান পাথর এবং এরস গাছের তৈরী থাম।
১২ রাজপ্রাসাদের আঙ্গিনা থেকে শুরু করে মন্দির প্রাঙ্গণ, মন্দিরের বারান্দা, ঘরের চারপাশে তিন সারি পাথর ও এক সারি এরস কাঠের দেওয়াল ছিল।
১৩ রাজা শলোমন খবর পাঠিয়ে সোর থেকে হীরম নামে এক ব্যক্তিকে জেরুশালেমে নিয়ে আসেন।
১৪ হীরমের মা ছিলেন নপ্তালির এক ইস্রায়েলীয় পরিবারগোষ্ঠীর মহিলা। তাঁর মৃত পিতা ছিলেন সোরের বাসিন্দা। হীরম ছিল পিতলের জিনিসপত্রের দক্ষ কারিগর। এ কারণেই শলোমন হীরমকে ডেকে পাঠিয়ে পিতলের কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যা কিছু পিতলের কাজ সে সবই হীরম করেছিল।
১৫ হীরম প্রায় ১৮ হাত দীর্ঘ, ১২ হাত পরিধিযুক্ত এবং ৩ ইঞ্চি পুরু পিতলের দুটো ফাঁপা স্তম্ভ বানিয়েছিল।
১৬ এছাড়া হীরম মন্দিরের জন্য ৫ হাত উচ্চ খাঁটি পিতলের দুটি রাজস্তম্ভ বানিয়েছিল এবং তাদের স্তম্ভগুলির মাথায় বসিযেছিল।
১৭ এরপর হীরম এই স্তম্ভগুলি ঢাকার জন্য দুটো শিকলের জাল বানায়।
১৮ তারপর সে ডালিমের মত দেখতে পিতলের দুসারি ফুল বানায়। এগুলি প্রতিটি স্তম্ভের জালের ওপর এমন ভাবে রাখা হয় য়ে স্তম্ভগুলির চূড়া ঢাকা পড়ে যায়।
১৯ ফলতঃ স্তম্ভগুলির সওযা হাত থেকে ৫ হাত পর্য়ন্ত লম্বা শিখরগুলি ফুলের মত দেখতে লাগল। স্তম্ভ চূড়াগুলো স্তম্ভের উপর বাটির মত দেখতে জালে বসানো হয়েছিল। ওখানে স্তম্ভ চূড়াগুলোর চার পাশে
২০ টা ডালিম সারিবদ্ধভাবে বসানো ছিল।
২১ হীরম পিতল নির্মিত মন্দিরের বারান্দাতে দুটি স্তম্ভ স্থাপন করল। দক্ষিণ দিকের স্তম্ভটিকে বলা হত যাখীন। উত্তর দিকের স্তম্ভটিকে বলা হত বোযস।
২২ পুষ্পাকৃতি স্তম্ভ চূড়া দুটোকে স্তম্ভের মাথায় বসিযে স্তম্ভের কাজ শেষ করা হয়।
২৩ অতঃপর হীরম পিতল দিয়ে গোলাকার একটা জলাধার বানালো, যার নাম দেওয়া হল “সমুদ্র।” এটির পরিধি ছিল ৩০ হাত, ব্যাস ছিল ১০ হাত ও গভীরতা ছিল ৫ হাত।
২৪ জলাধারটি ঘিরে পিতলের একটি ফালি বসানো ছিল। এই ফালিটির তলায় জলাধারের গায়ে দুসারি পিতলের লতাপাতার নকশা কাটা ছিল।
২৫ আর গোটা জলাধারটি বসানো ছিল ১২টি পিতলের তৈরী ষাঁড়ের পিঠে ১২টি ষাঁড়ের তিনটির মুখ ছিল উত্তরমুখী, তিনটির দক্ষিণমুখী, তিনটির পূর্বমুখী ও বাকী তিনটির পশ্চিমমুখী।
২৬ জলাধারটির চারিধার ৩ ইঞ্চি পুরু। জলাধারের কাণা পানপাত্রের কাণার সদৃশ অথবা ফুলের পাপড়ির মতো ছিল। জলাধারটিতে প্রায় ১১,000 গ্য়ালন জল ধরত।
২৭ এরপর হীরম ১০টি পিতলের ঠেলা বানালো। প্রত্যেকটি ঠেলা ছিল ৪ হাত লম্বা, ৪ হাত চওড়া আর উচ্চতায় ৩ হাত।
২৮ ঠেলাগুলি কাঠামোয বসানো চৌকোণা তক্তা দিয়ে বানানো হয়েছিল,
২৯ যার ওপর পিতলের সিংহ, ষাঁড় ও করূব দূতের প্রতিকৃতি খোদাই করা ছিল। এইসব প্রতিকৃতির ওপরে ও নীচে নানান ফুলের নকশা কাটা হয়েছিল।
৩০ প্রতিটি ঠেলায ৪টি করে পিতলের চাকা ছিল। কোণায ছিল একটি বড় পাত্র রাখার মতো পিতলের কয়েকটি পাযা, য়েগুলোর গায়ে নানা ধরণের ফুল লাগানো হয়েছিল।
৩১ বাটিগুলির প্রায় ১ হাত ওপরে একটি নকশা খোদাই করা কাঠামো ছিল। বাটিগুলির মুখ ছিল গোল, ব্যাস ১.৫ হাত। কাঠামোটি ছিল চৌকোণা, গোল নয়।
৩২ কাঠামোর নীচের দিকে চারটি চাকা ছিল। চাকাগুলির ব্যাস ১.৫ হাত। চাকার মধ্যের দণ্ডগুলি ঠেলা গাড়ীর সঙ্গে একসঙ্গেই যুক্ত ছিল।
৩৩ এই চাকাগুলো ছিল রথের চাকার মতো এবং চাকার সব কিছুই ছিল পিতলে বানানো।
৩৪ পাত্র ধরে রাখার পাযা চারটি প্রত্যেকটা ঠেলার চারকোণায বসানো ছিল। এগুলোও ঠেলার সঙ্গে একই ছাঁচে বসানো হয়।
৩৫ প্রত্যেকটা ঠেলার ওপরের দিকে পিতলের একটা করে ফালি বসানো ছিল। এই ফালিটাও ছিল একই ছাঁচে বানানো।
৩৬ ঠেলার চারপাশে এবং কাঠামোর গায়ে সিংহ, তালগাছ, করূব দূত ইত্যাদির ছবি খোদাই করা ছিল। গোটা ঠেলার যেখানেই জায়গা ছিল সেখানেই এই সব খোদাই করে দেওয়া হয়। আর ঠেলার চতুর্দিকে ফুলের নকশা খোদাই করে দেওয়া হয়েছিল।
৩৭ হীরম একই রকম দেখতে মোট ১০টি ঠেলা বানিয়েছিল। এই প্রত্যেকটা ঠেলাই পিতল দিয়ে তৈরী একই ছাঁচে ফেলে বানানো হয়েছিল, য়ে কারণে এই সব কটাই এক রকম দেখতে ছিল।
৩৮ এছাড়াও হীরম প্রত্যেকটা ঠেলার জন্য একটা করে মোট ১০টি বড় বাটি বানিয়েছিল। য়েগুলো প্রায় ৪ হাত করে চওড়া ছিল এবং এই পাত্রগুলোয ২৩০ গ্য়ালন পর্য়ন্ত পানীয় ধরত।
৩৯ হীরম ঠেলাগুলোর পাঁচটি রেখেছিল মন্দিরের উত্তর দিকে এবং পাঁচটি মন্দিরের দক্ষিণ দিকে। আর বড় পাত্রটিকে মন্দিরের দক্ষিণপূর্ব কোণায বসিযেছিল।
৪০ এছাড়াও শলোমনের নির্দেশ মতো অজস্র পাত্র, ছোট হাতা, ছোট বাটি যা কিছু তাকে বানাতে বলা হয়েছিল সে বানিয়েছিল। প্রভুর মন্দিরে হীরম যা কিছু বানিয়েছিল তার তালিকা দেওয়া হল:২টি স্তম্ভ, স্তম্ভের ওপরে বসানোর জন্য বাটির মতো দেখতে২টি স্তম্ভ চূড়া, গম্বুজগুলো ঘেরার জন্য২টি জাল, জালে লাগানোর জন্য৪০0টি ডালিম। প্রতিটি জালের জন্য ২ সারি ডালিম ছিল যাতে স্তম্ভগুলির মাথার ওপরের গম্বুজ ঢাকা পড়ে, একটা বাটি সহ ১০টি ঠেলা, একটি বড় চৌবাচ্চা যার নীচে ছিল ১২টি ষাঁড়, ছোট হাতা, ছোটখাটো পাত্র ও প্রভুর মন্দিরের জন্য রয়োজনীয় অন্যান্য বাসনকোসন।শলোমন যা যা চেয়েছিলেন, হীরম তার সবই বানিয়ে দিয়েছিল চক্চকে পিতল দিয়ে।
৪১
৪২
৪৩
৪৪
৪৫
৪৬ পিতল দিয়ে এতো বেশী জিনিসপত্র বানানো হয়েছিল য়ে শলোমন কখনও এসব ওজন করার চেষ্টা করেন নি। শলোমন এসবই য়র্দ্দন নদীর সুক্কোত্‌ ও সর্ত্তনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই সব জিনিসই পিতল গলিযে ছাঁচে ঢেলে বসানো হয়।
৪৭
৪৮ শলোমন তাঁর মন্দিরের জন্য অনেক জিনিসই সোনা দিয়ে বানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। মন্দিরের য়েসব জিনিস শলোমন সোনা দিয়ে বানিয়েছিলেন সেগুলো হল:সোনার বেদী,একটি সোনার টেবিল (যার ওপরে সাজিযে ঈশ্বরকে রুটির নৈবেদ্য দেওয়া হত),পবিত্রতম স্থানের উত্তর ও দক্ষিণে পাঁচটি পাঁচটি করে মোট ১০টি বাতিদান,পবিত্রতম স্থানের উত্তর ও দক্ষিণের জন্য ৫টি করে চিমটে, সোনার বাটি,কব্জাসমূহ, ছোট বাটি, পবিত্রতম স্থান ও মূল ঘরটির দরজার জন্য সোনার কপাট।
৪৯
৫০
৫১ এমনি করে শেষ পর্য়ন্ত শলোমন প্রভুর মন্দিরের জন্য যা যা করতে চেয়েছিলেন সেই কাজ শেষ হল। এরপর তাঁর পিতা রাজা দায়ূদ মন্দিরের জন্য য়ে সব জিনিস তাঁর কোষাগারে রেখে দিয়েছিলেন, শলোমন সেই সমস্ত জিনিস মন্দিরে নিয়ে এলেন। সোনা ও রূপো তিনি প্রভুর মন্দিরের কোষাগারে তুলে রাখলেন।