যেন খুব অনিচ্ছা সত্ত্বেও আসমানে পূর্ণিমা-চাঁদটি দেখা
দিয়েছে, বিলোচ্ছে জ্যোৎস্না আমাদের আপন শহরে, পরক্ষণে
মনে হয়, ওর মুখ জুড়ে স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ। বুকে তার
ছোরা বিঁধে আছে, বুলেটের সন্ত্রাসের চিহ্নগুলো
ছড়ানো ছিটোনো ইতস্তত। বেজায় ঝরছে রক্ত,
আক্রান্ত চাঁদের বোবা আর্তনাদে কম্পমান চৌদিক এখন।
চাঁদের এমন হাল দেখে আমার শহর আজ
আহ্লাদে হবে কি আটখানা? আমরা কি ধেই ধেই
করে নেচে বেড়াব সবাই ঘরে আর খোলা পথে
অগ্নিঝরা মাছ মাংস আর সব্জির বাজারে?
সম্প্রতি শংকার ছায়া ঘিরে ধরেছে আমার শহরকে
বড় গাঢ় হয়ে, বুঝি তাই বৈদ্যুতিক
বাতিও পারে না কিছুতেই ঘোচাতে শজারু-তিমিরের এই
হিংস্র দৃষ্টি একই ঘরে বাস করে পারি না দেখতে
কেউ কারও মুখ আর পরস্পর ঠোকাঠুকি হলে
ব্যর্থ হই চিনে নিতে কেউ কারও কণ্ঠস্বর, ভয়ার্ত চেহারা।
এভাবেই কি কাটবে দিনরাত নির্ঘুম আতঙ্কে? প্রায়শই
মিত্রকে শক্রর ছায়া ভেবে কেঁপে উঠি, পড়ি মরি
দূরে সরে যেতে চেয়ে চকিতে পাথুরে
পা দু’টির ভারে এক চুলও নড়তে পারি না আর
দুঃস্বপ্নের কাঁটাময় বিষাক্তি আঁধারে। কাছ থেকে, গিরগিটি,
নেউল, বৃশ্চিক তেড়ে আসে আমাকে ঠুকরে খেতে।
এই বিভীষিকা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় প্রিয়জনদের
নিয়ে অন্য কোথাও আশ্রয় খুঁজে বেড়াবার লোভ
মাঝে মাঝে মাথা তোলে। কিন্তু এই জন্মমাটি, এই
চিরচেনা গলি, এই গাছপালা, মাঠ, নদী মানুষের মেলা
ছেড়ে কোন অজানায়, কোন সে চুলোয় যাবো? এই
দম-বন্ধ-করা, স্টেনগান উঁচানো স্থানেই শ্বাস নিতে চাই।