যখন গোধূলি মেঘে মায়াবী গালিচা পেতে যাচ্ছিলাম ভেসে
বড় একা, দেখি দূর দ্রাক্ষাবন থেকে
একজন বুজুর্গ এলেন উঠে, ঢুলু ঢুলু চোখ,
ঠোঁট ভেজা, যেন এইমাত্র পানপাত্র এসেছেন
রেখে কুঞ্জে, মৃত্যু তাঁর পেছনে পেছনে
তুখোড় গোয়েন্দা, ঘোরে সারাক্ষণ কিংবা মিশে থাকে
বয়েসী শরীরে, তিনি শান্ত মেঘদল উড়ে উড়ে
বললেন প্রগাঢ় কণ্ঠস্বরে-
‘ইতিহাস খচিত সুদূর অতীতের বাগদাদ
শহরে একদা
জ্যোৎস্নাপ্রিয় স্বপ্নশ্রিত ঘাস খেকো ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে তাঁরা
কতিপয় কবি,
মুল্যবান সওদার মতো
ক্রমশ হলেন জড়ো সুলতানের দরবারে। একে
একে কবিকুল গলা খেলিয়ে করেন পাঠ চম্পু, কত
কাসিদা, গজল, ঝকমকে
সুলতানের হাসিতে কবিতা
অধিক জাজ্বল্যমান হয়ে শোভা পায়
দেয়ালে দেয়ালে, নক্সাময় গালিচায়,
তখ্তে পায়ায়,
সভাসদদের ঝলমলে
লেবাসে, কবিতাবলী চঞ্চল চড়ুই হয়ে ঢুকে
পড়ে অবলীলাক্রমে জেবের ভেতর, ঢলাঢলি
করে খুব লাস্যময়ী রমণীর কোলে।
যখন কবিতাবলী দিনারের মতো ওহো হাঃ হাঃ
অত্যস্ত ঝিকিয়ে ওঠে শাহী দরবারে,
তখন রাস্তার ধারে বহু
অনাথ দাঁড়িয়ে থাকে অনাশ্রয়ে, ভিখিরি জটলা
করে পথে রুটির আশায়,
ক্ষুধা চাবুকের তাড়া খেয়ে ফেরে শহরের আনাচে কানাচে
এবং বিপজ্জনক রাজন্দিগণ টিমটিমে
নিঃসঙ্গ জীবন নিয়ে প্রত্যহ শোনেন।
প্রহরীর পদশব্দ, কয়েদখানার রুক্ষ দেয়ালে আঁচড়
কেটে দিন যাপনের হিসেব রাখেন, মাঝে মাঝে
কানে আসে কবে কার ফাঁসি হলো, অন্ধকারে বসে
তম্ময় ভাবেন প্রিয় মুখ আর তারাজ্বলা আকাশের কথা।