অনেক পায়ের নিচে তিনি;
মাটির পালঙ্কে শুয়ে অবসর ভোগ
করছেন যেন আরামের
সুশান্ত চাদরে ঢেকে আপাদমস্তক।
আমরা ওপরে স্তব্ধ, প্রায়-স্তব্ধ, নিচে তিনি। আমার পিতার
কালো আচকানটার, দেখলাম, একটি বোতাম নেই; ঢোলা
পাজামায় ভেজা মাটি।
আমার নতুন হাফপ্যান্টে
হঠাৎ কাদার ফুল ফুটেছে দেখেই মনমরা
হলাম কেমন।
আমাদের পায়ের তলায় মাতামহ,
মাটির গভীরে মাতামহ,
মাতামহ এক খণ্ড হুহু সাদা কাপড়ের মোড়কে জড়ানো,
যেন প্রেরিতব্য সওগাত কোনো, যাবেন সুদুরে।
একজন ফেরেস্তা গাছের মগডালে, নাক তার মাতামহের ফরসির
নলের মতন আর চুল আগুনের ঝোপ, গোঁফে
প্রজাপতি বাঁধা পড়ে গেছে; হাতে টফির রঙিন বাক্স নিয়ে
বিড়বিড় পড়ছে দরুদ।
কান্না-ক্লান্ত কিছু মুখ। কেউ শূন্য দৃষ্টি মেলে চায়,
চেয়ে থাকে দূর মসজিদের মিনারে, কেউ খুব
মগ্ন হয়ে দেখে নেয় কবর তৈরির শিল্প। আমার নিজের
কান্না পাচ্ছিল না বলে লজ্জা বোধ হ’ল। মধ্যে মধ্যে
শুধু মাতামহের ঘরের মালিশের ঝাঁ ঝাঁ গন্ধ এলো ভেসে (পক্ষাঘাত পঙ্গু করেছিল তাঁকে) উজিয়ে অনেক ঘর, বিশীর্ণ হলুদ গাছপালা,
ঊর্ণাজাল। তাল তাল মাটি ঝরে পড়ে মাতামহের ওপর,
সবাই মাটির ঢেলা সাগ্রহে দিলেন ছুড়ে তাঁর
প্রতি, যেন কী এক খেলায় উঠলেন মেতে আর
আমি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তখন
আইসক্রিমের কথা শুধু ভাবছিলাম আড়ালে।