এই মধ্যরাতে, এত জোরে জোরে কড়াই নাড়ছে কে?
আওয়াজ শুনেই
আমার বুকের ভেতর
একটা প্যাঁচা ডেকে উঠলো যেন।
অবিশ্যি আমি জেগেই ছিলাম, কিছুদিন ধ’রে
উচ্চাকঙক্ষী ব্লাডপ্রেসারটা ভোগাচ্ছে খুব।
টিপ টিপ-করা বুক নিয়ে
দরজা খুলে চমকে উঠলাম। একজন
ঢ্যাঙা লোক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়;
ওর ধকধকে কাল পাথরের মতো
চোখের দিকে তাকিয়ে ওকে
কোলরিজের প্রাচীন নাবিক বলে মনে হলো আমার।
লোকটা যে নাবিক টাবিক নয়
তা’ বোঝা গেল একটু পরেই।
সে তার কাঁধে ঝোলানো মিশমিশে ব্যাগটা থেকে
একটা টেলিগ্রাম বের ক’রে
এগিয়ে দিলো আমার দিকে। শাদা
থান কাপড়ের মতো ধু-ধু
টেলিগ্রাম হাতে নিয়ে আমি বিমূঢ়।
নামহীন, ঠিকানাহীন, অক্ষরবিহীন
কাগজটি ওর কাছে ফেতর দিয়ে
বললাম, ‘কিছুই তো লেখা নেই।
অদ্ভুত হেসে সে বললো, ‘সরি, ভুল হয়ে গেছে,
পরের বার আর এমন ভুল হবে না।
তারপর তরতরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে
লম্বা লম্বা পা ফেলে মিলিয়ে গেল অন্ধকারে।
কিন্তু বেশি দূরে গেছে বলে মনে হলো না।
ওর কথাগুলো ধারণ করলো দেয়াল আর
আমার টেবিলে-রাখা গোলাপের শিরশিরে পাপড়ি।
কড়া নাড়ার আওয়াজ শুনে
আমার বুকের ভেতর যে প্যাঁচা ডেকে উঠেছিল,
গলা ও ঘাড়ের রোমসমুদয় ফুলিয়ে সে
তাকিয়ে রইল থমথমে রাস্তার দিকে।