মগজে গোধূলি আর রঙিন কুয়াশা নিয়ে
মলিন চপ্পল পায়ে ফিরে আসি। অন্ধকার ঘরে
(ইদানীং লোড-শেডিং-এর
পেখম ছড়িয়ে পড়ে যখন তখন)
কল্পনায় তোমার সম্ভ্রান্ত মরীচিকা হ’য়ে
আমাকে ভীষণ
লোভাতুর ক’রে তোলে। কিছুক্ষণ পায়চারি ক’রে
সময় কাটিয়ে দিই, আকাশ পাতাল
ভাবি, মনে পড়ে যায় ডিগ্রির সোহাগে
লালিত যৌবন
জনকের সরাই খানায়
কেটেছে একদা কর্মখালি
বিজ্ঞাপন প’ড়ে, মনে পড়ে বলীরেখাময় বয়েসী পিতার
অত্যন্ত বিকৃত মুখ ধিক্কারের ঝড়ে, একা একা
গৃহকোণে জননীর অশ্রুপাত, উদাসীন আমি
তোমারই রূপের ধ্যানে কাটিয়েছি রভসে প্রহর।
এখন গোঙাই শুধু, দুর্বহ বোঝার ভারে পিঠ
বেঁকে আসে; ছা-পোষা জীবনে
বয়ে যায় কবরখানার
বাতাসের মতো দীর্ঘশ্বাস। তুমি যাকে একদা লিখেছো চিঠি
রঙিন কাগজে তাকে আজ এই বিবর্ণ প্রহরে
দেখলে হারিয়ে-যাওয়া প্রেত ভেবে সুনিশ্চিত
দূরে সরে যাবে ভয়ে। তাকে
সারাক্ষণ ঠোকরায় কালবেলা, সঙ্গ দেয় নিঃসঙ্গ বেড়াল;
অসুস্থতা কেবলি জাগিয়ে রাখে তাকে। মাঝে-মাঝে
তোমার সুদূর মুখ নুয়ে আসে মুখের ওপর।
জীর্ণ ঘরে শুয়ে ভাবি
বাবুই পাখির বাসা, অতিদূর শৈশবের সাঁকো,
তোমার নরম হাত কবেকার, আর সেই মানুষটি যার
পকেটে থাকতো টিয়ে পাখি, গাঢ় সবুজ রঙের
পানিফল, স্তব্ধতাকে ভাই ব’লে ডাকতো সে, পাখির ঝাঁকের
ভেতরেই ছিল তার আপন নিবাস।
অপেক্ষা করেছি, কিন্তু আসে নি এমন লগ্ন যার
স্পর্শে বিজ্ঞ হয়ে ওঠে ঘরের দেয়াল, লহমায় গান গায়
আমার ভেতরকার হাড়,
বেলকুঁড়ি হয়ে যায় দূরের চাতক, কুয়াশায়
মাঠ দিয়ে একাকী চাষির মতো হাঁটে,
কুড়ায় ফ্যাকাশে ফল বনের কিনারে নিরিবিলি
ধৈর্যশীল চাঁদ। মাঝে-মধ্যে
আমার পায়ের পাতা হেসে আমাকেই প্রশ্ন করে-
ক’দিন থাকবে আর? আমি শুধু বোকার ধরনে
পায়ের পাতার দিকে চেয়ে থাকি, কিছুতে পাই না
খুঁজে কোনো কথা,
অপেক্ষায় থাকি কোন্ অজ্ঞাত প্রহরে
দাঁতে বিঁধে নিয়ে যাবে আমাকে চকিতে
দ্বিতীয়ার চাঁদ।