আসমান প্রাচীন কালের কোনও রূপসীর মতো
আড়াল করেছে মুখ অসিত বেকাবে। আবরণ ছিঁড়ে ঝরে
রাধার নূপুর হয়ে বৃষ্টি অবিরত
মেটাতে অধীর তৃষ্ণা শহরের। বড় একা বসে আছি ঘরে
আমাকে বৃষ্টির জাল ঘিরে ধরে চারদিকে
কী মসূণ আর নানা রঙিন মাছের চঞ্চলতা বিছানায়,
বিস্মিত তাকিয়ে দেখি। কিছু লিকলিকে
প্রাণী এসে জোটে, বুঝি অতিশয় মজা পেয়ে যায়
হঠাৎ আমাকে দেখে, এবং কদম ফুল ছায়া-ছায়া ঘরে এসে
হাসে খিলখিল, জুড়ে দেয় নাচ শূন্যে ভেসে ভেসে।
বৃষ্টিও আলাপচারী, সন্ধ্যাভাষা জানা আছে
ভাল তারও, নয় তা অবশ্য রূপায়িত মনুষ্য-ভাষার ছাঁচে
নিজ সুরে এখন সে বলছে আমার কানে কানে,
‘বৃষ্টি যে অপরিসীম ভালবেসে। এমন গহন
বর্ষায় রহস্যময় এবং ব্যাকুল হতো মন
যার, সে মানবী আজ দূর পরবাসে। রবীন্দ্রনাথের গানে
অথবা বৈষ্ণব পদাবলী কিংবা এই আমার ধারায় তাকে
পাবে না তোমার কাছে এবং উত্তর-আধুনিক কবিতারও সাধ্যাতীত
তাকে ডেকে আনা গৃহকোণে। কৃষ্ণ নও যে বাঁশির ডাকে
আসবে সে বৃষ্টিমত্ত গাঢ় কালো মধ্যরাতে সমাজের ভিত
কাঁপিয়ে,’ বলেই জলধারা অকস্মাৎ স্তব্ধতায়
ডুবে যায়, ঘরময় নামল তুষার-যুগ, রক্ত হিমপ্রায়।
বৃষ্টির অধিক বৃষ্টি ঝরে জলহীন,
ঝরে নিরন্তর, খুঁজি তার ভাষা, অথচ নিমেষে
হায়, কোথায় যে সেই আদিভাষা হয়েছে নিলীন,
জানি না কী করে! কিছুক্ষণ পর ফের বৃষ্টিধারা এসে
আমার হৃদয়ে বলে ব্যাকরণ-বহির্ভুত ছন্নছাড়া কথা-
কিছু বুঝি, কিছু বা বুঝি না; বুক হু-হুময়, আমার দু’চোখ
থেকে বৃষ্টি ক্রোক করে নিয়ে গেছে জলধারা। ক্রূর বিষলতা
গায়ে মুড়ে শুধু ধু ধু বৃষ্টি দেখি, অধিক আড়ালে রাখি শোক।
৬.৭.৯৯