হাদীস নং ৩৭০০
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসিম ইবনে উমর ইবনে খাত্তাবের নানা আসিম ইবনে সাবিত আনসারীর নেতৃত্বে দশজন সাহাবীর একটি দল গোয়েন্দাগিরির জন্য পাঠালেন। তাঁরা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থান হান্দায় পৌঁছলে হুযাইল গোত্রের একটি শাখা বানু লিহয়ানকে তাদের আগমন সম্বন্ধে অবগত করা হয়। (এ সংবাদ শুনে) তারা প্রায় একশ জন তীরন্দাজ তৈরী হয়ে মুসলমানের বিরুদ্ধে লড়াই করার উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়ে তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে পথ চলতে আরম্ভ করে। যেতে যেতে তারা এমন স্থানে পৌঁছে যায় যেখানে অবস্থান করে তাঁরা (সাহাবীগণ) খেজুর খেয়েছিলেন। এত দৃষ্টে তারা (বানু লিহয়ানের লোকেরা) ইয়াসরিবের খেজুর (এর আটি) বলে তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে তাদেরকে খুঁজতে লাগল। আসিম ও তাঁর সঙ্গীগণ তাদের (আগমন) সম্বন্ধে অনুভব করতে পেরে একটি (পাহাড়ী) স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেন। (লিহয়ান) কাওমের লোকেরা তাদেরকে বেষ্টন করে ফেলে। তারপর তারা মুসলমানদেরকে নিচে অবতরণ করে আত্মসমর্পণের আহবান জানিয়ে বলল, তোমাদেরকে ওয়াদা দিচ্ছি, আমরা তোমাদের কাউকে হত্যা করব না। তখন আসিম ইবনে সাবিত রা. বললেন, হে আমার সাথী ভাইয়েরা, কাফিরের নিরাপত্তায় আশ্বস্ত হয়ে আমি কখনো নিচে অবতরণ করব না। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ ! আমাদের খবর আপনার নবীকে জানিয়ে দিন। এরপর তারা মুসলমানদের প্রতি তীর নিক্ষেপ আরম্ভ করল এংব আসমিকে (আরো ছয়জন সহ) শহীদ করে ফেলল। অবশিষ্ট তিনজন, খুবাইব, যায়েদ ইবনে দাসিনা এবং অপর একজন (আবদুল্লাহ ইবনে তারিক) তাদের ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে তাদের নিকট নেমে আসলেন। তারা (শত্রু গণ) তাদেরকে কাবু করে নিয়ে নিজেদের ধনুকের তার খুলে তা দিয়ে তাদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তৃতীয়জন বললেন, এটাই প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের সাথে যাবনা, আমার জন্য তো এদের (শহীদ সাথীদের) আদর্শই অনুসরণীয়। অর্থাৎ আমিও শহীদ হয়ে যাব। তারা তাকে বহু টানা হেচড়া করল। কিন্তু তিনি তাদের সাথে যেতে অস্বীকার করলেন। (অবশেষে তারা তাকে শহীদ করে দিল) এরপর খুবাই এবং যায়েদ ইবনে দাসিনাকে (বন্দী করে) নিয়ে গিয়ে তাদেরকে (মক্কার বাজারে) বিক্রি করে দিল। এটা ছিল বদর যুদ্ধের পরবর্তী ঘটনা। বদরু যুদ্ধে খুবাইব যেহেতু হারিস ইবনে আমিরকে হত্যা করেছিলেন। তাই (প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে) হারিস ইবনে আমির ইবনে নাওফিলের পুত্রগণ তাকে খরীদ করে নিল। খুবাইব তাদের নকিট বন্দী অবস্থায় কাটাতে লাগলেন। এরপর তারা সবাই তাকে হত্যা করার দৃঢ় সংকল্প করল। তিনি হারিসের কোন এক কন্যার নিকট থেকে ক্ষৌর কর্মের জন্য একটি ক্ষুর চেয়ে নিলেন। তার (হারিসের কন্যা) দেখতে পেল তিনি (খুবাইব) তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে রানের উপর বসিয়ে ক্ষুর খানা হাতে ধরে আছেন। সে (হারিসের কন্যা) বর্ণনা করেছে, (এ দেখে) আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম, খুবাইব তা বুঝতে পারলাম, তিনি বললেন, আমি তাকে (শিশুটিকে) হত্যা করে ফেলব বলে তুমি কি ভয় পেয়েছ। আমি কখনো এ কাজ কবর না। সে আরো বলেছে, আল্লাহ কসম, আমি খুবাইবের মত উত্তম বন্দী আর কখনো দেখেনি। আল্লাহর কসম একদিন আমি তাকে আঙ্গুলে গুচ্ছ হাতে নিয়ে আঙ্গুর খেতে দেখেছি। অথচ সে লোহার শিকলে বাঁধা ছিল এবং সে সময় মক্কায় কোন ফলও ছিল না। সে (হারিসের কন্যা) বলত, ঐ আঙ্গুরগুলো আল্লাহ তায়ালা খুবাইবকে রিযকস্বরূপ দান করেছিলেন। অবশেষে একদিন তারা খুবাইবকে হত্যা করার জন্য যখন হারামের সীমানার বাইরে নিয়ে গেল। তখন খুবাইব রা. তাদেরকে বললেন, আমাকে দু’রাকআত সালাত আদায় করার সুযোগ দাও, তারা সুযোগ দিলে তিনি দু’রাকআত সালাত আদায়ে করে বললেন, আল্লাহর কসম, আমি (মৃত্যু ভয়ে) ভীত হয়ে পড়েছি, তোমরা এ কথা না ভাবলে আমি সালাত আরো দীর্ঘায়িত করতাম। এরপর তিনি এ বলে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ ! তাদেরকে এক এক করে গুণে রাখ, তাদেরকে বিক্ষিপ্তভাবে হত্যা কর এবং তাদের একজনকও অবশিষ্ট রেখনা। তারপর তিনি আবৃত্তি করলেন : আমি যখন মুসলমান হিসাবে মৃত্যুবরণ করার সৌভাগ্য লাভ করছি, তাই আমার কোনই ভয় নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে কোন অবস্থাতেই আমার মৃত্যু হউক। আর তা যেহেতু একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লাভের জন্যই । তাই তিনি ইচ্ছা করলে আমার প্রতিটি কর্তিত অঙ্গে বরকত প্রদান করতে পারেন। এরপর (হারিসের পুত্র) আবু সারুআ উকবা (উকবা ইবনে হারিস) তাঁর দিকে দাঁড়াল এবং তাকে শহীদ করে দিল। (এভাবেই খুবাইর রা. সে সব মুসলমানের জন্য দু’রাকআত সালাত নিয়ম (সুন্নত) চালু করে গেলেন যারা ধৈর্যের সাথে শাহাদত বরণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐদিনই সাহাবীদেরকে অবহিত করেছিলেন যে দিন তাঁরা শত্রু কবলিত হয়ে শাহাদত বরণ করেছিলেন। কুরাইশদের নিকট তাঁর (আসিম রা. এর) নিহত হওয়ার খবর পৌঁছলে তারা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আসিমের শরীরের কোন অঙ্গ কেটে আনার উদ্দেশ্য কতিপয় কুরাইশ কাফেরকে প্রেরণ করল। যেহেতু (বদর যুদ্ধের দিন) আসিম ইবনে সাবিত তাদের (কুরাইশদের) একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। এদিকে আল্লাহ আসিমের লাশকে হিফাযাত করার জন্য মেঘখন্ডের ন্যায় এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন। মৌমাছিগুলো আসিম রা. এর লাশকে শত্রু সেনাদের হাত থেকে রক্ষা করল। ফলে তারা তাঁর দেহের কোন অঙ্গ কেটে নিতে সক্ষম হল না। কাব ইবনে মালিক রা. বলেন, মুরারা ইবনে রাবী আল উমরী এবং হিলাল ইবনে উমাইয়া আল ওয়াকিফী সম্বন্ধে লোকেরা বলেছেন যে, তাঁরা উভয়ই আল্লাহর নেক বান্দা ছিলেন এবং দুজনই বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।