বুখারি হাদিস নং ২৮৭৫

হাদীস নং ২৮৭৫

ইসহাক ইবনে মুহাম্মদ ফারবী রহ………মালিক ইবনে আউস ইবনে হাদাসান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আমার পরিবার-পরিজনের সাথে বসা ছিলাম, যখন রোদ প্রখর হল তখন উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর দূত আমার নিকট এসে বলল, আমীরুল মুমিনীন আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। আমি তার সঙ্গে রওয়ানা হয়ে উমর রা. -এর নিকট পৌঁছলাম। দেখতে পেলাম, তিনি একটি চাটাইয়ের উপর বসা ছিলেন। যাতে কোন বিছানা ছিলনা। আর তিনি চামড়ার একটি বালিশে হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। আমি তাকে সালাম করে বসে পড়লাম। তিনি বললেন, হে মালিক! তোমার গোত্রের কতিপয় লোক আমার নিকট এসেছেন। আমি তাদের জন্য স্বল্প পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী প্রদানের আদেশ দিয়েছি। তুমি তা বুঝে নিয়ে তাদের মধ্যে বণ্টন করে দাও। আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! এ কাজটির জন্য আমাকে ছাড়া যদি অন্য কাউকে নির্দেশ দিতেন। তিনি বললেন, ওহে তুমি তা গ্রহণ কর। আমি তাঁর কাছেই বসা ছিলাম। এমন সময় তাঁর দারোয়ান ইয়ারফা এসে বলল, উসমান ইবনে আফফান, আবদুর রহমান ইবনে আউফ, যুবাইর (ইবনে আওয়াম) ও সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. আপনার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছেন। উমর রা. বললেন, হ্যাঁ, তাদের আসতে দাও। তাঁরা এসে সালাম করে বসে পড়লেন। ইয়ারফা ক্ষণিক সময় পরে এসে বলল, আলী ও আব্বাস রা. আপনার সাক্ষাতের জন্য অনুমতির অপেক্ষায় আছেন। উমর রা. বললেন, হ্যাঁ, তাদেরকে আসতে দাও। এরপর তাঁরা উভয়ে প্রবেশ করে সালাম করলেন এবং বসে পড়লেন। আব্বাস রা. বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমার ও এ ব্যক্তির মধ্যে মিমাংসা করে দিন। বানূ নাযীরের সম্পদ থেকে আল্লাহ তা’আলা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যা দান করেছিলেন, তা নিয়ে তাঁরা উভয়ে বিরোধ করছিলেন। উসমান রা. এবং তাঁর সাথীগণ বললেন, হ্যাঁ, আমীরুল মুমিনীন! এদের মধ্যে মিমাংসা করে দিন এবং তাদের একজনকে অপরজন থেকে নিরুদ্বেগ করে দিন। উমর রা. বললেন, একটু থামুন। আমি আপনাদেরকে সে মহান সত্তার শপথ দিয়ে বলছি, যার আদেশে আসমান ও যমীন স্থির রয়েছে। আপনার কি জানেন যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের (নবীগণ) মীরাস বণ্টিত হয় না। আমরা যা রেখে যাই তা সাদকারূপে গণ্য হয়? এর দ্বারা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকেই উদ্দেশ্য করেছেন। উসমান রা. ও তাঁর সাথীগণ বললেন, হ্যাঁ, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এইরূপ বলেছেন। এরপর উমর রা. আলী এবং আব্বাস রা.-এর প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আমি আপনাদের আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি। আপনারা কি জানেন যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ বলেছেন? তাঁরা উভয়ে বললেন, হ্যাঁ, তিনি এরূপ বলেছেন।উমর রা. বললেন, এখন এ বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের বুঝিয়ে বলছি। ব্যাপার হল এই যে, আল্লাহ তা’আলা ফায়ের সম্পদ থেকে স্বীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বিশেষভাবে দান করেছেন যা তিনি ছাড়া কাউকেই দান করেননি। এরপর উমর রা. নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করলেন: “আর আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের অর্থাৎ ইহুদীদের নিকট থেকে যে ফায় দিয়েছেন , তজ্জন্য তোমরা ঘোড়া কিংবা উটে আরোহণ করে যুদ্ধ করনি। আল্লাহ তা’আলাই তো যাদের উপর ইচ্ছা তাঁর রাসূলগণকে কর্তৃত্ব দান করেন। আল্লাহ তা’আলা সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান” (৫৯ : ৬)। সুতারাং এ সকল সম্পত্তি নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখেননি এবং আপনাদের বাদ দিয়ে অন্য কাউকে দেননি। বরং আপনাদেরকেও দিয়েছেন এবং আপনাদের কাজই ব্যয় করেছেন। এ সম্পত্তি থেকে যা উদ্ধৃত্ত রয়েছে, তা থেকে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ পরিবার-পরিজনের বাৎসরিক খরচ নির্বাহ করতেন। এরপর যা অবশিষ্ট থাকত, তা আল্লাহর সম্পদে (বায়তুলমালে) জমা করে দিতেন। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজীবন এরূপই করেছেন। আপনাদেরকে আল্লাহর কসম দিচ্ছি, আপনারা কি এ বিষয় অবগত আছেন? এরপর উমর রা. বললেন, এরপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ওফাত দিলেন তখন আবু বকর রা. বললেন, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে দায়িত্ব প্রাপ্ত একথা বলে তিনি এ সকল সম্পত্তি নিজ দায়িত্বে নিয়ে নেন এবং রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসবের আয়-উৎপাদন যে সব কাজে ব্যয় করতেন, সে সকল কাজে ব্যয় করেন। আল্লাহ তা’আলা জানেন যে, তিনি এক্ষেত্রে সত্যবাদী, পুণ্যবান, সুপথপ্রাপ্ত ও সত্যাশ্রয়ী ছিলেন। এরপর আল্লাহ তা’আলা আবু বকর রা.কে ওফাত দেন। এখন আম বকর রা.-এর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমি আমার খেলাফতকালের প্রথম দু’বছর এ সম্পত্তি আমার দায়িত্বে রেখেছি এবং এর দ্বারা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রা. যা যা করতেন, তা করেছি। আল্লাহ তা’আলা জানেন যে, তিনি এক্ষেত্রে সত্যবাদী, পুণ্যবান, সুপথ প্রাপ্ত ও সত্যাশ্রয়ী রয়েছি। এরপর এখন আপনারা উভয়ে আমার নিকট এসেছেন। আর আমার সঙ্গে এ সম্পর্কে আলোচনা করছেন এবং আপনাদের উভয়ের কথা একই । আর আপনাদের ব্যাপারে একই। হে আব্বাস রা.! আপনি আমার নিকট আপনার ভ্রাতুষ্পুত্রের সম্পত্তির অংশের দাবী নিয়ে এসেছেন আর আলী রা.-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, ইনি আমার নিকট তাঁর স্ত্রী কর্তৃক পিতার সম্পত্তিতে প্রাপ্য অংশ নিতে এসেছেন। আমি আপনাদের উভয়কেই বলছি যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমরা নবীগণের সম্পদ বণ্টিত হয় না আমরা যা ছেড়ে যাই তা সাদকা রূপে গণ্য হয়। এরপর আমি সঙ্গত মনে করেছি যে, এ সম্পত্তিকে আপনাদের নিকট দায়িত্বে অর্পণ করব। এখন আমি আপনাদের বলছি যে, আপনারা যদি চান, তবে আমি এ সম্পত্তি আপনাদের নিকট সমর্পণ করে দিব। এ শর্তে যে, আপনাদের উপর আল্লাহ তা’আলার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার থাকবে, আপনারা এ সম্পত্তির আয় আমদানী সে সকল কাজে ব্যয় করবেন, যে সকল কাজে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রা. ও আমি আমার খেলাফতকালে এযাবৎ ব্যয় করে এসেছি। তদুত্তরে আপনারা বলেছেন, এ সম্পত্তিকে আমাদের নিকট সমর্পণ করুন। আমি উক্ত শর্তের উপর আপনাদের প্রতি সমর্পণ করেছি। আপনাদেরকে (উসমান রা. ও তাঁর সাথীগণকে) উদ্দেশ্য করে আমি আল্লাহর কসম দিচ্ছি যে, বলুন তো আমি কি তাদেরকে এ শর্তে এ সম্পত্তি সমর্পণ করেছি? তাঁরা বললেন, হ্যা। এরপর উমর রা. আলী ও আব্বাস রা.-এর প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আমি আপনাদের উভয়কে আল্লাহর নামে কসম দিচ্ছি, বলুন তো আমি কি তা শর্তে আপনাদের প্রতি এ সম্পত্তি সমর্পণ করেছি? তাঁরা উভয়ে বললেন, হ্যাঁ। এরপর উমর রা. বললেন, আপনারা কি আমার নিকট এ ছাড়া অন্য কোন মিমাংসা চান? আল্লাহর কসম! যার আদেশে আকাশ ও পৃথিবী আপন স্থানে প্রতিষ্ঠিত আছে, আমি এক্ষেত্রে এর বিপরীত কোন মিমাংসা করব না। যদি আপনারা এ শর্ত পালনে অপারগ হন, তবে এ সম্পত্তি আমার দায়িত্বে অর্পণ করুন। আপনাদের উভয়ের পক্ষ থেকে এ সম্পত্তির তত্ত্বাবধানে আমিই যথেষ্ট।