কেটে পড়ো, কেটে পড়ো মঞ্চ থেকে’, সেই জমজমাট প্রহরে,
ঝলমলে হলঘরে তীক্ষ্ণ সমস্বরে
শ্রোতারা জানান দাবী। ভাবি, তবে কী করি এখন উলুবনে?
এখুনি পড়ব কেটে সিটি আর বেড়ালের ডাক শুনে? না কি শান্ত মনে
যাব বলে অকম্পিত কণ্ঠস্বরে যা আছে বলার একে একে।
শব্দেরা কাগজ থেকে রঙিন পাখির মতো যায় উড়ে শ্রোতারা থাকেন বেঁকে।
দিয়েছি বিকল্প ঘর, যেখানে বিপুল স্তব্ধতার
স্তন্য পান করে শব্দে বেড়ে ওঠে লীলায়িত স্বাস্থ্যে,
যেখানে দেখাতে পারি কাঁটা-ঝোপ, লতা-পাতা ফুলের বাহার
এবং দেখাতে পারি ল্যাম্পপোস্টে খুব আস্তে আস্তে
খাচ্ছে দোল দেবদূত, অ্যাসেম্বলী হলের মসৃণ ছাদ থেকে
মনোরম বুররাখ যাচ্ছে উড়ে দুলিয়ে যুগল
পাখার এরেড্রোম ছুঁয়ে, খুরে নক্ষত্রের রেণু মেখে
সে ঘরের চতুষ্কোণ দৃশ্যতই সুদূর মুঘল
কক্ষ হয়ে যায়, হয়ে যায় এমনকি পাতালের
জল-ধোয়া অমল প্রাসাদ কিংবা ক্যান্ডিনিস্কি দৃশ্য-
বিমূর্ত গীতল বর্ণে লুকোনো ঘরের ছাদ আর চাতালের
শূন্যতা অথবা প্রাণী, গাছপালা। বস্তুত সীমাহীন সে-ঘরের বিশ্ব।
‘কেটে পড়ো, কেটে পড়ো মঞ্চ থেকে। যা বলছ তার ল্যাজা-মুড়ো
বুঝি না কিছুই’-একজন বললেন হেঁকে নাড়িয়ে শিঙের দুটো চূড়ো,
সঙ্গিনের মতো হাত সিলিং-এর দিকে ভীষণ উঁচিয়ে।
‘ওসব শোনা ধৈর্য আমাদের নেই। কেন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে
মিছে হয়রান করো আমাদের? ফুর্তির ফানুস চাই, চপচপে
কথা আর গান চাই। তোমার ওসব ছাইপাশ জ’পে জ’পে
ক্ষেতে বাড়বে না শস্য’, বলে তাঁরা চকিতে দিলেন ছুড়ে কিছু
নষ্ট ডিম, তুলতুলে টমাটো এবং আমি মাথা করে নিচু
মঞ্চে কোণঠাসা হয়ে ভাবি সে আগন্তুকের কথা, দৃষ্টি যার
প্রত্যুষের মতো আর শ্রুতি প্রতীক পরম সূক্ষ্মতার।
অথচ আজও সে অবয়বহীন, মধু-যামিনীতে
অথবা অমাবস্যায় আসে না শব্দের স্বাদ নিতে।
তবু তাকে লক্ষ্য করে শ্বেত কাগজের শব্দমালা দুলে ওঠে
এবং সবেগে ধায়, যেমন বরফজমা তরঙ্গিনী ছোটে
অকস্মাৎ সূর্যের উদার বুকে লীন হতে। আসে যদি, আগন্তুকটিকে
বসিয়ে বিকল্প ঘরে আমি যাব হরিদ্রাভ বয়সের দিকে।