এখন গলির গাল বেয়ে অশ্রু ঝরে, বুকে তার
রোমক রথের ধাবমান ঘোড়াদের
দাপট; গাছের পাতা, ঘাসের সবুজ ডগা কী আশ্বাসে ভেজা
চোখ তুলে চেয়ে থাকে। আমি একা ঘরে
বাতি জ্বেলে বর্ষার কবিতা
লেখার আশায় বসে আছি, কিন্তু একটি পঙ্ক্তিও
মেঘের ওপারে থেকে খাতার পাতায় নামছে না। এমনকি
একটি কি দু’টি গুঁড়ো কিংবা কণা নেই, ছায়া নেই।
মহাকবি কালিদাস, সুদূর বৈষ্ণব পদাকর্তাগণ আর
রবীন্দ্রনাথকে ডাকি ঘন ঘন, মিনতি জানাই
এবং করুণা ভিক্ষা করি
কয়েকটি মেদুর ছত্রের জন্যে। প্রবল বাতাস
আমাকে উড়িয়ে নেয় আকাশে আকাশে। মেঘমালা
আমাকে পুরনো সখা ভেবে আমার চাদ্দিকে নাচে,
কোমল জড়িয়ে ধরে, কেউ কেউ অবলীলাক্রমে
মাথায় প্রবেশ করে, আমি বৃষ্টিসম্ভব কাজল মেঘ হই।
এবার নিশ্চিত লেখা হয়ে যাবে বর্ষার কবিতা ভেবে দ্রুত
কাগজে আঁচড় কাটি, অথচ হোঁচট খাই, একটু পরেই
খঞ্জের ধরনে, থেমে যায়
কলমের গতি আর আমাকে প্রখর ছেয়ে ফেলে
রাশি রাশি কয়লার গুঁড়ো। কোন্ এল নিনিওর
উষ্ণ স্রোত করেছে হরণ
সমুদয় সবুজ আমার? বুঝি তাই মনের প্রাঙ্গণে আজ
বাজে না নূপুর বর্ষণের। বর্ষার কবিতা তাই
অলিখিত থেকে যায়, ধুলো ওড়ে
হৃদয়ের ধু ধু চরে, উড়ে উড়ে কাঁদে তৃষ্ণাতুর পাখি।
খাতা বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকি কিছুক্ষণ। অকস্মাৎ
মনে হল, গৌরী এসে দাঁড়িয়েছে টেবিলের পাশে, বৃষ্টিস্নাতা।
আমার হতাশ কাঁধে হাত রেখে বলে সে শ্রাবণ-
রাতের মোহিনী স্বরে, ‘একদা সেই যে আমি নিভৃতে
বর্ষায় ভিজেছিলাম আমার প্রথম শাড়ি পরে,
সেই ভেজা রূপ ভেবে নিয়ে কবি লেখো না বর্ষার
গহন কবিতা এক। নিমেষে আমার চেতনায়
সৃজনপ্রবাহ খেলে যায়; বর্ষা হয়ে ওঠে ক্রমশ কবিতা