অন্ধকার তড়িঘড়ি পাততাড়ি গুটিয়ে চলেছে,
যেমন উত্তাল গণআন্দোলনের তোড়ে স্বৈরাচারী
শাসক। আকাশে সেজদায়-যাওয়া
মানুষের মতো চাঁদ
ঝুলে রয়েছে তখনও। আমি পায়চারি করছি
খোলা বারান্দায়, আমার মনের ভেতর
স্মৃতির ফিসফিসানি আর না-লেখা কবিতার গুঞ্জরণ।
সূর্য উঠছে, যেন রঙিন বল,এক ঝাঁক
বুনো কবুতর এসে বসে টিন শেডে
গমের লোভে, হঠাৎ আমার মনে পড়ে যায়
লাল কাঁকরময় একটি পথ, কুয়াশার ঘোমটাটানা গ্রাম আর
অখ্যাত স্টেশনে লাইনসম্যানের বাতি দোলানো।
তখুনি অসমাপ্ত কবিতার মতো একটি
উদ্ভাসিত তুমি। তোমার শরীরে
সুরমা রঙের বাহার, ভোরের স্পর্শ লাগা সোনালি বাহু
ঝিকিয়ে ওঠে, যখন তুমি সিমেন্ট ফুঁড়ে
বেরিয়ে আসা লম্বা শিক ধরে দাঁড়াও। তোমার মুখ
ভোরবেলাকার চাঁদের মতোই
অস্পষ্ট আমার কাছে, তোমার নাম আমি জানি না।
তবু মনে হয়, সৌন্দর্য তোমার যৌবনে
দোল খায় সারাক্ষণ মৃত্যু উপেক্ষা ক’রে। এখন তোমাকে ঘিরে
কতিপয় প্রজাপতির রঙিন চাঞ্চল্য,
একটি স্বপ্নের নিস্তব্ধ ঝালর আর
একটি স্পর্শকাতর হৃদয়ের স্পন্দন এবং অজস্র অদৃশ্য চুম্বন।
ভাবনার কোন গলি-ঘুপচিতে
তুমি ঘুরছো এখন? হয়তো খুন-হয়ে –যাওয়া কিছু ফুল
কিংবা ঘূর্ণমান পাখার ব্লেডে নিহত
একটি চড়ুই তোমার মনে বুনে দিয়েছে বিষাদ।
আমার কথায় মঞ্জরিত তোমার ভাবনা,
এমন অসম্ভব দাবি আমি করবো না, তবু তোমার খোঁপায়
আমি পরিয়ে দিয়েছি আমার নিঃসঙ্গতা,
আমার আত্মার হাহাকার
জড়িয়ে দিয়েছি তোমার স্তনে, গ্রীবায়, নাভিমূলে, এবং
বন্দনার পাকি বারবার উড়িয়ে দিই তোমার উদ্দেশে।
এই যে ভোরবেলা তোমার যৌবনের আহ্বান
এসে পৌঁছলো আমার কাছে, তুমি জানলে না।
তুমি যখন নেই আমার দৃষ্টিপথে, তখন
শূন্যতায় পাখা ঝাপটাতে থাকে চম্কে-ওঠা
বন্দনার পাখি এবং
আমি উদ্ভিদহীন এক বাগান দেখি সেখানে।