ফিরে যাচ্ছি, ফিরে যাচ্ছি, আমি যেন সুপ্রাচীন গ্রিক,
নীল ত্রিপলের মতো আকাশের নিচে অ্যাম্ফিথিয়েটার
থেকে ফিরে যাচ্ছি আলো থেকে অন্ধকারে।
কে যেন ডাকছে শুনি; এ আমার মতিভ্রম, কেউ ডাকছে না,
কেউ ডাকবে না।
এখনও তো চোখে
ভাসে অর্ধপশু অর্ধমানবের ক্ষিপ্র পেশি আর কানে আসে
প্রবীণ পুরোহিতের নিবিড় প্রার্থনা।
নগরের পুরুষের কোলাহল আর পুরনারীর বিলাপে
ছায়াচ্ছন্ন পথ-ঘাট, প্রতি চত্বর। নতজানু
যে যেন প্রগাঢ় স্বরে বলে, “হে রাজন,
আমাদের নগরের পরিত্রাণ চাই।“
ওরা তো সদলবলে আসে, জড়ো হয় হাটে মাঠে,
বস্তি-বন্দরের
আলো-আঁধারিতে,
কখনো জলার ধারে কিংবা গাছতলায় কখনো।
ওরা আসে বেয়াড়া দামাল,
দ্যাখো শ্রেণীস্বার্থের সাধের গণ্ডি ছুঁয়ে
চকিতে কোথায় যেন সোনার হরিণ ছুটে যায়,
চতুর্দিকে মৃত্যুর সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হতে
দেখেও কেবলি ওরা-যে যাই বলুক-
সোনার হরিণ চায়। আপাতত নৈরাজ্যের সাথে
মিতালী পাতাতে গররাজি।
ওরা তো সদলবলে আসে, ওরা আসে,
পায় ইতিহাসের কর্দম; কী বিশ্বাসে
পথ চলে অবিরাম, দিগন্তে নিবদ্ধ দৃষ্টি, অথচ জানে না
পদে পদে প্রমাদেরই ফাঁদ।
কখনো-বা লাঠি ঘোরে, কখনো নিশান ওড়ে হাওয়ায় হাওয়ায়,
বাজারে ফুলুরি নিয়ে দরাদির, জিলিপির রসে
বড় সিক্ত, আহ্লাদিত ছেলে বুড়ো যুবকের কষ।
পিতৃহত্যা মাতৃহত্যা, ভ্রাতৃহত্যা ইত্যাদি চলছে
পুরোদমে ইতস্তত প্রতিহারী হেঁকে যায় সুউচ্চ প্রাচীরে
পরিখায় পরিখায় জনশূন্যতায়।
দুটো চোখ উপড়ে নিলেও, হে রাজন,
প্রাক্তন পাপের বোঝা কমবে না একতিলও। কাঁদো
দারুণ রক্তাক্ত চোখে কাঁদো
প্রাকারে দাঁড়িয়ে একা। হবে না প্রতিধ্বনিত তোমার দরবার
সুললিত স্তবে।
পঞ্চমাঙ্ক শেষ, ফিরে যাচ্ছি…
চৌদিকে শবের ছড়াছড়ি, ফিরে যাচ্ছি…
ভাঁড়ের কেবলি ভয়, কখন মাড়িয়ে দেয় নায়কের শব,
ফিরে যাচ্ছি-
বিকৃত শবের গন্ধ নিয়ে ফিরে যাচ্ছি বিবরে আবার
অ্যাম্ফিথিয়েটার থেকে পালা দেখে ফিরে যাচ্ছি আর
জানেন তো বস্তুত পালাটা বিয়োগান্ত ফিরে যাচ্ছি।
মা সন্ধ্যায় বাতি জ্বালেননি বলে,
পিতা দরজার কাছে এসে
উদার অভিজ্ঞ হাত বাড়াননি বলে,
ভাই তার নিপুণ সেতার বাজায়নি বলে
বোন ঘর সাজায়নি বলে
ফিরে যাচ্ছি, ফিরে যাচ্ছি, কেউ ডাকছে না।
কেউ ডাকবে না?