প্রেমের দেবতা অকার্পণ্যে আমাকে দান করেছিলেন
অসামান্য এক উত্তরাধিকার। আমি ফতুর জুয়াড়ির মতো
অপচয় করেছি সেই সম্পদ। আখেরে
পরিণত হয়েছিলাম করুণ ছায়ায়। কালের হিংস্র কুকুর
আমাকে তাড়াতে তাড়াতে
জখম করেছে চরম নির্দয়তায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
আমার মুখ দেখে নিজেই চম্কে উঠেছি-‘কে এ ক্ষয়া প্রেত?’
আমার শরীর থেকে সব সময়
বেরুচ্ছিল গোরস্তানের পুরনো কবরের গন্ধ। ভূতুড়ে অন্ধকারকে
প্রবেশ করতে দিয়েছি নিজের ভেতর।
ঠিক সেই সময় দৈবাৎ তার সঙ্গে দেখা। এর আগে
সে আমার কাছে কোনো নামও ছিল না,
তার অস্তিত্ব বিষয়ে ক্ষীণতম সচেতনতা থাকা তো দূরের কথা।
অথচ তাকে দেখেই মনে হলো, তার চকিতে চাউনি,
মৃদু হাসি, তার রূপ আমার জন্মের ওপার থেকে চেনা।
তার বসে-থাকা, উঠে দাঁড়ানো, পথ চলা,
চুলের বিন্যাস তাকে দেখার অনেক আগে থেকেই
আমার মুখস্থ।
আর সবচেয়ে আশ্চর্য, সে এই ঘাটোর্ধ কান্তিবর্জিত,
অসুস্থ আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল
তারও ভালোবাসার উত্তাল জলে। তার হৃদয় থেকে
একটি সোনালী প্রজাপতি বেরিয়ে এসে
আমার সত্তায় ছড়িয়ে দিল অপরূপ আবীর,
আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সে বলল, ‘ভালোবাসি’।
তক্ষুণি আমার শরীর থেকে গোরস্তানের গন্ধ লুপ্ত,
এবং সজীব গোলাপ বাগানের সৌরভে
ভরে গেল আমার অস্তিত্বের মূল মৃত্তিকা। রুদ্ধ দরোজা ভেদ ক’রে
আমার চোখ দেখতে পেলো এক পুষ্পিত, শূন্য পথ।
প্রেমের দেবতার কাছে কৃতজ্ঞতায়
মাথা নুয়ে এলো আমার। তিনি তাঁর অনিন্দ্য সুন্দর
উত্তরাধিকারের সবটুকু প্রত্যাহার করে নেননি এখনো। আমি
এই সম্পদ যক্ষের মতো আগলে রাখবো আমরণ।
২৪/২/৯৫