এখানে দিল্লীতে দূর পরবাসে ব’সে ব’সে ভাবি,
প্রবাসী কবির নিজ ঘরে কয়েকটি মেঘ খুব
আসা-যাওয়া করে আর নক্ষত্রেরা অগোচরে উঁকিঝুঁকি দ্যায়,
বসায় রূপালি মেলা। কেউ এলে হঠাৎ উধাও
সব; জোনাকির দল ঘরে
ঢুকবে কি ঢুকবে না ইতস্তত করে। যখন সে
লোকটাই নেই ঘরে তাহলে খামোকা
আমাদের জ্বলা আর নেভা,
ভেবে ওরা ফিরে যায় ঝোপঝাড়ে। কখনো নয়না
খেলাচ্ছলে ঘরে ঢুকে দ্যাখে
ওহো কী সুন্দর পাখি-পরিবার,-‘এসে দেখে যাও’
ব’লে সবাইকে ডেকে এনে
সে-দৃশ্য হারিয়ে ফেলে বড় কষ্ট পায়। শিশুটির
মন কিছুতেই খেই পায় না ছলনা কুহকের।
যখন এখানে এই বিদেশ বিভুঁইয়ে শুয়ে আছি বিছানায়,
মোগল সম্রাট হুমায়ুন তাঁর সমাধিতে গভীর নিদ্রায়
অচেতন, দিল্লীর অমেয় অস্তরাগে গালিবের গজলের
স্তব করে অমরতা, ইতিহাস দীর্ঘশ্বাস ফ্যালে,
প্রাচীন নগরী অকস্মাৎ যুগল ঘুঙুর হয়ে বেজে ওঠে,
তখন কি আমার বাড়ির পার্শ্ববর্তী পথ জেগে
আছে ধু ধু চোখে আঁকাবাঁকা হয়ে বেশ কিছু দূর?
যখন এখানে দেয়ালের শূন্যতায় নিবিষ্ট তাকিয়ে আছি,
তখন কি আমার নিজস্ব অন্তর্গত বাগানের ফুলগুলি
নিদ্রাতুর খুব নাকি ধুলায় লুটাচ্ছে বেখেয়াল
যুবতীর কানের দুলের মতো? নিজেকে এমন একা আর কোনোদিন
কখনো হয়নি মনে। পেয়ারা গাছের পাতা, ক্যামেলিয়া আমাকে কি ডাকে?
যাকে আমি দিক্ভ্রষ্ট নাবিকের মতো
ধ্রুবতারা ব’লে প্রাণে করেছি ধারণ, সে কি আসে আমিহীন
ঘরে, চোখ বুলোয় বইয়ের র্যা কে, বিক্ষিপ্ত কাগজে, ফটোগ্রাফে?
নিভৃত শরীরে যার টাঙ্গাইল বিরান বালিশে তার সরু
প্রেমর্দ্রে, শিল্পিত আঙুলের
নম্র, স্পর্শ ঈষৎ বুলিয়ে দ্যায়, কবির স্মৃতির আকর্ষণে?
১/২/৯৫